ভাবতে ভাবতে এক সময় তিনি ঘুমের রাজ্যে চলে গেলেন। ভোরের আজান শুনে তার ঘুম ভাঙল। কিছুক্ষণ এপাশ-ওপাশ করে উঠে পড়লেন। নামাজ পড়ে জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকালেন। এখনো রাতের রেশ শেষ হয়নি। তার মনে পড়ল আজ পঁচিশে মার্চ। এই দিনগত রাত বাঙালিদের জন্য একটি ভয়ংকর রাত ছিল ১৯৭১ সালে। সেই দিনের কথা বাংলাদেশের মানুষ কোনোদিন ভুলতে পারবে না। এই দিন গভীর রাতে বাংলার ঘুমন্ত জনগণের ওপর বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যে নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলÑ তা শুধু বাঙালি জনগণ না সারাবিশ্ববাসীকে হতবাক করে দিয়েছিল। ইতিহাসের এমন নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের একজন অসহায় নীরব সাক্ষী হিসেবে তিনি আজও বেঁচে আছেন। তিনি স্মরণ করলেনÑ ওই রাতে মেশিনগানের ঠাঠাঠাঠা আওয়াজ আর ভারী বোমার দুড়–ম দুড়–ম শব্দে বিছানাসুদ্ধ কেঁপে উঠেছিল। বাসার সবাই আতঙ্কিত হয়ে জেগে উঠে এক কামরায় জড়ো হই। চি-চি-ই-ই করে একটা শব্দের সঙ্গে আগুনের ফুলকি উড়ে আসছিল। সারাঘর তখন আলোকিত হয়ে ওঠে। ভয়ে সবাই গুটিশুটি মেরে মেঝেতে শুয়ে পড়ি। বেশ কয়েকঘণ্টা এভাবে কেটে যায়। এক সময় সাহস করে ছাদে গিয়ে দেখিÑ আমাদের বাসার পশ্চিম আর উত্তর দিকে আগুন জ্বলছে। গোলাগুলির শব্দ তখন বেশ স্পষ্ট। আকাশে আগুনের ফুলকি ছুটছে। দূর থেকে বহুকণ্ঠের কান্না-চিৎকার ভেসে আসছে। আমার কাছে মনে হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে। এক সময় মনে হলো, সারা ঢাকা শহরেই গোলাগুলি আর বোমাবর্ষণ চলছে। আমি ছাদে বেশিক্ষণ টিকতে পারলাম না। চাচাজানও আমাকে নেমে আসার জন্য সিঁড়িঘরে দাঁড়িয়ে ডাকছিলেন।
আতাউর রহমান কানন, জন্মস্থান-শরীফবাগ, ধামরাই, ঢাকা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি অনার্সসহ ভূগােলে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি চাকরিজীবী। কবিতা, ছড়া, নাটক, গান, প্রবন্ধ, উপন্যাস প্রভৃতি গ্রন্থ ইতােমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। তার প্রকাশিত উপন্যাস ‘কপাল’ ‘অবেলা বসন্ত’, ‘শেষের প্রেম এবং ঢেউ ভাঙ্গা প্রেম’ পাঠকের প্রচুর সুনাম কুড়িয়েছে। এ পর্যন্ত তার ১২টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তার লেখায় ১২টি গান নিয়ে এই বৃষ্টি ভেজা দিন’ নামক সিডি বের হয়েছে। এতে দেশের খ্যাতিমান ১২জন শিল্পী কণ্ঠ দিয়েছেন। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি সহবত সাহিত্য পুরস্কার’ ‘পুঠিয়া সাহিত্য পদক’ ‘অরুণিমা সাহিত্য পুরস্কার’ ‘রাজশাহী সাহিত্য পরিষদ পদক, কবি বাবু ফরিদী সাহিত্য পদক এবং নির্ণয় শিল্পীগােষ্ঠী স্বর্ণপদক পেয়েছেন। এছাড়া অমর একুশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০০০ উপলক্ষে কবিতার জন্য তিনি বাংলাদেশ জাতীয় লেখক ফোরাম কর্তৃক পুরস্কৃত হয়েছে। তিনি International Biographical Centre, Cambridge, England কর্তৃক International Man of the year 2000/2001 খেতাব প্রাপ্ত এবং একই সংস্থা কর্তৃক The 20th Century Award-ও পান। তিনি পুঠিয়া সাহিত্য পরিষদ, রাজশাহী সাহিত্য পরিষদ, কবিতা ক্লাব, পাবনা এবং উত্তরবঙ্গ সংস্কৃতি পরিষদ-এর জীবন সদস্য ও বাংলা একাডেমীর সদস্য। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ বেতার ও টিভির একজন তালিকাভুক্ত গীতিকার । জনাব কানন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, ইউক্রেন, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেছেন। জনাব কানন রচিত ‘মেঘের কোলে রােদ উপন্যাসটি পাঠক সমাদৃত হবে বলে আশা করছি।