“মুক্তিযুদ্ধের ভিন্ন দলিলপত্র" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ মুক্তিযুদ্ধ এক রৈখিক নয়। বহুমাত্রিক। কিন্তু, আমরা মুক্তিযুদ্ধকে কয়েকটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি যেমন, বিজয়, গণহত্যা, যুদ্ধ। কিন্তু এ ছাড়াতাে আছে মুক্তিযুদ্ধের শত্রুপক্ষ, বিদেশি ফ্রন্ট, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থন-অসমর্থন, বিশ্বের সিভিল সমাজ, স্থানীয় বাহিনী প্রভৃতি। এ সব বিষয়ে গবেষণার জন্য দলিলপত্র যে নেই তা’নয়। এক্ষেত্রে সবাই স্বাধীনতার দলিলপত্রেরই উল্লেখ করবেন। কারণ, তা সরকার স্বীকৃত। এ প্রথাসিদ্ধ দলিলপত্র ছাড়াও নানা উপকরণ ব্যবহার করা যেতে পারে যার নাম আমি দিয়েছি ভিন্ন দলিলপত্র। আমি ঐ সব বিষয়ে কাজ করার জন্য বিভিন্ন রকমের সূত্র ব্যবহার করেছি। প্রথম দিকে বাংলাদেশ সরকার প্রকাশিত ১৫ খণ্ড দলিলপত্রই ছিল আমাদের মূল ভিত্তি, এরপর উপাদানের বৈচিত্র্য বেড়েছে। ২০১১ সালে, বিভিন্ন ধরনের নথিপত্র নিয়ে প্রকাশ করি মুক্তিযুদ্ধের ছিন্ন দলিলপত্র। আপাতদৃষ্টিতে সেগুলাে উল্লেখযােগ্য মনে হতে না পারে, কিন্তু, একেবারে ফেলে দেওয়ার মতােও নয়। বিভিন্ন সংগ্রহ থেকে সেগুলাে সংগ্রহ করেছিলাম। এরকম অনেক নথিপত্র হারিয়ে গেছে। উদ্দেশ্য ছিল, মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় দিক নিয়ে গবেষণায় উৎসাহ সৃষ্টি ও অপরিচিত দলিলপত্রের ব্যবহার। গ্রন্থটির কয়েকটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে, তাতে ধরে নিতে পারি, গবেষকরা নতুন বিষয়ে, নতুন উপাদান ব্যবহারে আগ্রহী হয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রায় এক দশক পরে প্রকাশিত হলাে মুক্তিযুদ্ধের ভিন্ন দলিলপত্র। এমন আহমরি কিছু নয়। কিন্তু, এসব দলিলপত্র’ পড়ে হয়ত নতুন কোনাে গবেষক উৎসাহিত হতে পারেন নতুন কোনাে বিষয় নিয়ে গবেষণায়। বা তার চলমান গবেষণার জন্য পেতে পারেন প্রয়ােজনীয় সূত্র। এসব বিবেচনায়ই গ্রন্থটি প্রকাশিত হলাে।
মুনতাসীর মামুনের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুর জেলার গুলবাহার গ্রামে, কিন্তু তিনি ঢাকার ইসলামপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। সেখানেই পোর্ট ট্রাস্ট প্রাইমারি ও হাই স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা নেন। পরে ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এবং একই বিভাগ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষাজীবনে সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলেন, কাজ করেছেন ‘দৈনিক বাংলা বিচিত্রা’য়। এছাড়াও স্বাধীনতার পর প্রথম ডাকসু নির্বাচনের সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭৪ সালে প্রভাষক পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপরই তার বিভিন্ন অনুবাদগ্রন্থ, চিত্র সমালোচনা এবং ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ইতিহাসের প্রতি তার ভালোবাসা এবং দায়িত্ববোধ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে 'মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ গবেষণা ইন্সটিটিউট' প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলার ইতিহাসকে তিনি প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চান- এই উদ্দেশ্যেই মুনতাসীর মামুনের বই লেখা। একজন শিক্ষক হওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক। ঢাকা শহর নিয়ে তার রয়েছে গবেষণাপত্র। গড়ে তুলেছেন ‘সেন্টার ফর ঢাকা স্টাডিজ’ নামের ইতিহাস চর্চার একটি প্রতিষ্ঠান, যেখান থেকে মুনতাসীর মামুন এর বই সমগ্র তথা ১২টি গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। মননশীল এই লেখক দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে লিখে যাচ্ছেন নানা বিষয়ে। মুনতাসীর মামুন এর বই সমূহ এর বিষয় বহুমাত্রিক। তার গ্রন্থের সংখ্যা ২২০, যাতে স্থান পেয়েছে গল্প, প্রবন্ধ, গবেষণা এবং অনুবাদ সাহিত্য। শিশু-কিশোরদের নিয়েও তার লেখা গ্রন্থ প্রশংসা কুড়িয়েছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও তার সক্রিয় উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। বর্তমানে এই ইতিহাসবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিষয়ের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।