‘রক্তফুল’! রক্তের আবার ফুল হয় না-কি? হ্যাঁ, হয়। অবশ্যই হয়। কেন হয়? জানতে হলে অবশ্যই বইটির ঘ্রাণ নিতে হবে। তবে এর গন্ধ আপনাকে কতটা বিমোহিত করবে—তা নির্ভর করবে আপনার ঘ্রাণশক্তির উপর। মূলত অর্ধশত কবিতা নিয়ে সাজানো হয়েছে ‘রক্তফুল’। কবিতার চরণে চরণে রূঢ় বাস্তবতার প্রকাশ ঘটেছে। স্বদেশপ্রেম, প্রতিবাদ ও বিদ্রোহদ্যোতক পঙক্তিমালাতে সাজানো হয়েছে কাব্যগ্রন্থটি। এসব পঙক্তিমালার মাধ্যমে শোষিত, বঞ্চিত ও নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন কবি। কবিতাগুলোতে রাজনীতি-দেশপ্রেম ও ইতিহাসের অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটানো হয়েছে। ‘রক্তফুল’ গ্রন্থে পুরাণ থেকে বর্তমান, গ্রাম থেকে শহর, পরাধীনতা থেকে স্বাধীনতা, মাটি থেকে কংক্রিট—সব কিছুই দৃঢ়তার সঙ্গে উঠে এসেছে। শহরের ইট-কাঠ-লোহার ঝনঝনানি পার হয়ে গ্রামীণ পরিবেশ-ঐতিহ্যও পরম মমতায় তুলে ধরেছেন। সব মিলিয়ে এ বইয়ে স্বদেশপ্রেম, বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর কীর্তি, প্রকৃতিপ্রেমসহ গবেষণামূলক নানা বিষয় উঠে এসেছে। কবিতার দৃশ্যপটে ধর্মনিরপেক্ষতা, জীবনমুখী সংগ্রাম, প্রথাবিরোধী মনোভাব, শ্রেণিচেতনা ও সমাজ বাস্তবতা জীবন্ত উপাদান হয়ে পরিস্ফূটিত হয়েছে। এ কাব্যগ্রন্থের কয়েকটি কবিতায় কবি বাস্তব-পরাবাস্তব-জাদুবাস্তব ধারা পেরিয়ে মনবাস্তববাদের প্রয়োগ ঘটিয়েছেন, যা বাংলা তথা বিশ্বসাহিত্যে নতুন সংযোজন। বইটি পড়তে গিয়ে কোথাও কোথাও পাঠক হোঁচট খাবেন, থ খেয়ে দাঁড়াবেন, বিদ্রোহী হয়ে উঠবেন কিংবা ঘোরের মধ্যে আটকে যাবেন। একইসঙ্গে নতুন ধরনের দর্শনতত্ত্বের সন্ধান পাবেন, যা পাঠকের মনে নতুন বোধের জন্ম দিবে।
দীপংকর দীপক গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ার তুলসী বাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছেলেবেলায় তার লেখালেখিতে হাতেখড়ি। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করার পর বাংলা সাহিত্যে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। ছাত্রাবস্থা থেকেই সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। বর্তমানে দৈনিক কালের কণ্ঠের বার্তা বিভাগে কর্মরত রয়েছেন। এর আগে একুশে টেলিভিশন, দৈনিক যায়যায়দিন ও দৈনিক আলোকিত সময়ে সিনিয়র সহ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তারও আগে সাপ্তাহিক সূর্যোদয়ে প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তা ছাড়া দীর্ঘদিন জাতীয় দৈনিক সমকাল ও সাপ্তাহিক প্রতিচিত্রে সাংবাদিকতা করেছেন। ২০০৬ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যৌবনের করুণ ব্যথা’ প্রকাশিত হয়। এর কয়েক বছর পর ২০১০ সালের বইমেলায় প্রকাশিত হয় ‘নিষিদ্ধ যৌবন’। অঙ্কুর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত এ বইটি কবিতাপ্রেমীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পরে শুভকাঙ্খি ও পাঠকদের অনুরোধে ২০১৬ সালে প্রকাশিত হয় এর সিক্যুয়াল গ্রন্থ ‘নিষিদ্ধ যৌবন- দ্বিতীয় খণ্ড’। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এটিই প্রথম কবিতার সিক্যুয়াল বই। তা ছাড়া ২০১৭ সালের বইমেলায় প্রকাশিত ‘কালচক্র’ শীর্ষক কাব্যগ্রন্থটি নিয়েও বেশ সাড়া পেয়েছেন। দীপংকর দীপকের প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘বুনো কন্যা’। ২০১৩ সালের একুশে বইমেলায় এটি প্রকাশ করে আকাশ প্রকাশনী। ২০১৪ সালে কলি প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয় তার দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ ‘ঈশ্বরের সঙ্গে লড়াই’। বইটি আলোচনার পাশাপাশি পাঠকমহলে সমলোচিতও হয়। পরের বছর প্রকাশ পায় তার আরেকটি আলোচিত গল্পগ্রন্থ ‘নাস্তিকের অপমৃত্যু’। ২০১৭ সালের বইমেলায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম গল্প সংকলন ‘প্রহেলিকা’। ২০১৮ সালের বইমেলায় প্রকাশিত হল দ্বিতীয় গল্প সংকলন ‘ছায়ামানব’ ও শিশুতোষ গল্পগ্রন্থ ‘ধূর্ত শিয়াল’। ২০১৯ সালের বইমেলায় তার দুটি বই প্রকাশিত হবে। এগুলো হচ্ছে ‘বাবা আমার রাজাকার’ ও ‘বাংলা ও বঙ্গবন্ধু’।