আদি ও দৃঢ় মানবিক অনুভূতি হল প্রেম। দুটি মানুষের মধ্যে রতি- দুটি মানুষের পরস্পরে (বা একজনের) রত থাকার ভাব ও অনুভূতি। সাহিত্যে এই প্রেমের ভাব প্রকাশের নানা মাধ্যম, নানা চিহ্নক ব্যাবহৃত হয়েছে। দেশ নির্বিশেষে এই চিহ্নকগুলির এক ধরনের সাদৃশ্যও চোখে পড়ে। প্রেম প্রকাশের এই সকল চিহ্নকদের অন্যতম হল বৃষ্টি, মেঘ, বসন্ত ঋতু, ফুল, চাঁদ ইত্যাদি। এই সকল চিহ্নক নানাভাবে চিহ্নিত করে প্রেমকে । আর অপর ধাপে এই প্রেম নিজেই আবার হয়ে ওঠে একটি চিহ্নক- সেক্ষেত্রে তার চিহ্নিত হল অভিনব দর্শন। সুফি কবিতা একটি তত্ত্বকাঠামোর ভিতরে আশ্রয় নিয়ে প্রতিবাদী স্বর হিসেবে চমকপ্রদভাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল- যা লোকে শুনেছে, মুগ্ধ হচ্ছে, এক উন্মাদের স্পর্শ পাচ্ছে কবিতার মাধ্যমে, যার প্রীতি সাধারণের চেনা অনুভূতি নয়- লোকসকলের একান্ত অনুভূতি নয়- আসলে খুব দরকারী, নিজেকে চিনতে, নিজের দিকেই খুব অন্য কোনও দিক থেকে তাকিয়ে দেখতে গেলে প্রয়োজন হয় সুফি কবিতার। যেখানে নিজের প্রেমের প্রতি আস্থা হারায় না উপেক্ষায় জর্জরিত কাতর হয়েও। পৃথিবীর নানা প্রান্তে প্রেমের যে বিচিত্র স্বরবৈচিত্র তৈরি হয়ে উঠেছিল জীবন ও যাপনের তাৎপর্য হিসেবে তার একটি বিশেষ বয়ান খুঁজে পাওয়া যায় সুফি কবিতায়। সুফি কবিতা আর কিছু না পারুক আমাদের ক্ষতস্থানগুলির উপর কিছু প্রলেপ যদি এনে দিতে পারে, মৃদু সংগীত শোনাতে পারে, অস্ত্রধ্বনিকে কিছুকালের জন্য অন্তত ডুবিয়ে রাখতে পারে সেই আশায় এই বই নিবেদন।