ঝর্না রহমানের প্রথম গল্পগ্রন্থ কালঠুঁটি চিল প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালে। তার পর থেকে ৩৫ বছর ধরে গদ্য রচনায় ক্রমাগত নিজেই নিজেকে অতিক্রম করে চলেছেন। তিনি তাঁর গল্পের বিষয় নির্বাচনে আমাদের চারপাশের পৃথিবী থেকে এমন সব বিচিত্র বিষয় ও প্রসঙ্গ তুলে এনেছেন যা গল্পের ভুবনে অনেকাংশেই ছিল অনালোচিত এবং অনাবিষ্কৃত। একই সাথে রচনাশৈলী নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভেতর দিয়ে তিনি তাঁর নিজস্ব একটি প্রকাশভঙ্গি নির্মাণ করেছেন, যা কথাসাহিত্যিক হিসেবে তাঁকে একটি বিশেষ অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে। জলপরী ও নূহের নৌকা গ্রন্থের দশটি গল্পে আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করি তিনি কখনো তাঁর অন্তর্গত চেতনাপ্রবাহকে গল্পে রূপান্তরিত করেছেন আবার কখনো প্রবহমান জীবনের সাধারণ দৃশ্যাবলি পরিবেশন করেছেন মনোজগতের জটিল কারুকাজের সংমিশ্রণে সুনির্বাচিত ভাষায়। জলপরী ও নূহের নৌকা গল্পে সর্বগ্রাসী সংকটের কাব্যিক উপস্থাপন, ‘একটি বিহ্বল বাগান পেরিয়ে আমরা ঘরে ফিরে আসি’র মানবিক সম্পর্কের আটপৌরে কাহিনি কিংবা ‘ঝুল বারান্দায় দোলচেয়ার’-এর মতো অতিপ্রাকৃত কাহিনি শুধু মাত্র পাঠকের আনন্দ হয়ে বিস্মৃতিতে হারিয়ে যায় না, বরং পাঠককে গল্পের গভীরে গিয়ে বোধের অতল স্পর্শ করতে অনুপ্রাণিত করে। ঝর্না রহমানের অনেক গল্পের নির্মাণ বাস্তবতাকে ভিন্নমাত্রায় তীব্রভাবে উপস্থাপন করে। এ গ্রন্থের ‘দণ্ডমুণ্ডের কর্তা’, ‘কচুপাতায় করমচা’ বা ‘বনবীথি আবাসিক এলাকায় তিনটি ট্রাক’ এসব গল্প হয়ে উঠেছে নাগরিক জীবনের অস্বস্তি সন্দেহ অবিশ্বাস নির্মমতা ও বীভৎস বাস্তবতার বিশ্বস্ত রূপায়ণ। এই শৈলী পাঠককে ভাবিত করে।
চল্লিশ বছর ধরে লেখালেখির সাথে যুক্ত আছেন। ১৯৮০ সনে বাংলাদেশ পরিষদ আয়োজিত একুশে সাহিত্য প্রতিযোগিতায় ছোটগল্পে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে সাহিত্যক্ষেত্রে তাঁর আত্মপ্রকাশ। গল্প উপন্যাস, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, নাটক, কবিতা, ভ্রমণ-শিশুসাহিত্য, সবক্ষেত্রেই তাঁর বিচরণ। গল্পকার হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৬০টি। পেশাগত জীবনে তিনি বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ রাইফেলস পাবলিক কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। বেতার ও টেলিভিশনের নিয়মিত কণ্ঠশিল্পী। বাংলা ভাষার কথাসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০২১ সালে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার-১৪২৭ লাভ করেন। জন্ম ২৮ জুন, ১৯৫৯, গ্রামে বাড়ি : কেওয়ার, মুন্সিগঞ্জ।