‘সহস্র কোকিলের গ্রীবা’ আমার প্রথম কাব্য। প্রথম সন্তানের মিষ্টি ঘ্রাণ তার গায়ে। সেটা ১৯৯১ সাল। আমার প্রথম সন্তান জন্ম নিয়েছে এর অব্যবহিত আগেই। যদিও আমি কবিতা লিখছি স্কুলের উঁচু ক্লাস থেকে কিন্তু প্রথম কাব্যটি প্রকাশ করতে দেরি হয়ে যায়। প্রথম কবিতা মুদ্রিত হয় কবি বেলাল চৌধুরী সম্পাদিত ‘সচিত্র সন্ধানী’ পত্রিকায় ১৯৭৮ সালে। আমি তখন কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ি। আশির দশক ছিল আমার কবিতা লেখার উন্মাতাল কাল। তখন দিনরাত্রি কবিতা লিখে চলেছি; কবিতা ছাপা হচ্ছে কলকাতার ‘দেশ’, ‘জিজ্ঞাসা’ প্রভৃতি পত্রিকায়। আশির দশকেই প্রথম বইটি প্রকাশ করা ছিল সঙ্গত, কেননা আমি আশির দশকের কবি। কিন্তু প্রস্তুতিতে প্রয়োজনীয় শ্রম দিতে দিতে আশির দশক কালের গর্ভে হারিয়ে যায়। উদিত হয় নব্বই দশক। তখন অনুভব করলাম আর দেরি নয়। প্রথম কাজ কবিতা বাছাই করে পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করা। ততদিনে একটি নয়, অন্তত দুটি কাব্য প্রকাশের মতো কবিতা জমেছে। প্রথম বই, তাই বেশি পছন্দের কবিতাগুলো এখানে সন্নিবেশিত করার উদ্যোগ নিলাম। বাকি কবিতাগুলো পরে প্রকাশিত হয়েছিল আমার দ্বিতীয় নয়, এমনকি নয় তৃতীয়, চতুর্থ কাব্য ‘পাখি নই আশ্চর্য মানুষ’ গ্রন্থে। এদিকে ১৯৯১-এর ফেব্রুয়ারির বইমেলা দোড়গোড়ায় কড়া নাড়ছে। একটা তাড়াহুড়ো লেগে গেল। তবে এসব কিছুই ঘটতো না যদি না আমার কবিতাপ্রেমী, সংস্কৃতিমনস্ক চাচা জনাব জিয়াউল কুদ্দুস আমার প্রথম বইটি প্রকাশের উদ্যোগ না নিতেন। রামকৃষ্ণ মিশন রোডে তার একটি প্রেস ছিল ‘স্বদেশ মুদ্রায়ন’। ‘সহস্র কোকিলের গ্রীবা’ ছাপা হলো সেই প্রেসে। সেই প্রথম লেটার প্রেসের ঘটঘটাং শব্দ অত সুমিষ্ট সুরে কানে বাজলো।
কামরুল হাসান সব্যসাচী লেখক কবি কামরুল হাসান। জন্ম ২০ মার্চ ১৯৬৪, দরিয়াপাড়, কক্সবাজার শহর। পিতা প্রয়াত ডা. নুরুল হক ও মাতা রোকেয়া বেগম। শৈশব থেকে খেলাধুলা, চিত্রকলা, অভিনয়সহ শিল্প-সংস্কৃতির বিভিন্ন মাধ্যমের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তিনি একইসঙ্গে কবি, শেকড়সন্ধানী লেখক, গবেষক, নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনেতা ও সংগঠক। রচিত ও নির্দেশিত নাটকসমূহ : খুকুড়ি, দ্রæহী পল্লান, কালাচাঁনের দোয়ারী, স্বপ্নসুখ। এই কবি মৈন কুমারী ও তমাটে কিশোর এবং জন্মজ্ঞাতি নামক ২টি কালজয়ী নাটক রচনা করেন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থসমূহ : নাফকাব্য, রাখাইন কাব্যিয়া। সম্পাদিত গ্রন্থসমূহ : উর্মি, সৃষ্টি সৌন্দর্যের আরেক রূপ, আমরাও পারি, চিহ্ন, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় স্মারক ২০১০, বিজয় স্মারক ২০১১, বিজয় স্মারক ২০১২, বিজয় স্মারক ২০১৪ প্রভৃতি। এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলা পিডিয়ায় ‘রাখাইন’ প্রকাশ। অর্ধশতাধিক গবেষণা প্রবন্ধ লিখেছেন। পুরস্কার : কবি কোলকাতা সিটি করপোরেশন প্রদত্ত ‘সংস্কৃতি ও সম্প্রীতি ১৯৯৪’ পুরস্কার, ‘সাগরমুনি’ পুরস্কার ২০১০, বায়তুশ শরফ ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদক ২০১০, ২০১১ সালে ‘শব্দায়ন প্রদত্ত বর্ষসেরা কবি ও কবিতা পুরস্কার ১৪১৭’, কবি নুরুল হুদা সম্মাননা ২০১২, কক্সবাজার প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ প্রদত্ত ‘জ্ঞানতাপস’ সম্মাননা ২০১২, লোকসংস্কৃতি বিষয়ে শিল্পকলা একাডেমী সম্মাননা পুরস্কার ২০১৫ লাভ করেন। ওয়াইপো ও এশিয়াটিক সোসাইটি পরিচালিত গবেষণা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত।