ভূমিকা বিদেশে বহুদিন পূর্বেই জাতীয় চরিত অভিধান রচিত হয়েছে। সেই ধারা অনুসরণ করে ভারতবর্ষে এই প্রথম জাতীয় চরিত অভিধান রচিত হল বলা যায় । আমাদের দেশে অবশ্য ইংরেজি বা অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় কয়েকটি জীবন-কথা-সঙ্কলন প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু সে সবের লক্ষ্য খুবই সীমিত। সাধারণত কোন একটি সম্প্রদায় বা অঞ্চল বিশেষের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের জীবনী নিয়ে রচিত হয়েছে Eminent Mussalmans', 'Eminent Parsees', 'Eminent South Indians' প্রভৃতি গ্রন্থ । কিম্বা 'Men and Supermen of Hindustan', 'ভারতবর্ষ' কি বিজুতিয়ান' বা 'অবাচীন চরিত্র কোষ' জাতীয় গ্রন্থে মাত্র কয়েকজন বিশিষ্ট ভারতবাসীর কথা বলা হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি রাজ্য সরকারের স্বাধীনতা সংগ্রামীর ‘হ’জ হ’ জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। এগুলি মূলত সংশ্লিষ্ট রাজ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা । প্রত্যেক রাজ্যের হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মী — যাঁরা দেশের সামগ্রিক উন্নতিবিধানে তেমন কোন উল্লেখ- যোগ্য অংশগ্রহণ করেন নি তাঁদের কথা লেখা হয়েছে। সম্প্রতি ভারত সরকার একটি গ্রন্থ 'Dictionary of Martyrs' প্রকাশ করেছেন, তাতে কেবল বিপ্লবীদের কথা বলা আছে, অনেকটা 'Who's Who in the Freedom Movement' গ্রন্থের ধাঁচে লেখা । এইসব গ্রন্থে কেবল কোন অঞ্চল বা সম্প্রদায়ের কথাই লেখা হয়েছে। মাত্র অল্প কয়েকজন সর্বভারতীয় নেতার নাম এতে স্থান পেয়েছে । বলা বাহুল্য, এর কোনটিকেই যথার্থ ভাবেই ভারতের জাতীয় চরিত অভিধান বলা চলে না । এই সব কারণে প্রকৃত অর্থে একটি জাতীয় চরিত অভিধান রচনার প্রয়োজন স্বভাবতই অনভতে হয় । বর্তমান গ্রন্থটি এই প্রয়োজন সিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে রচিত ; আমাদের লক্ষ্য আঠার ও ঊনিশ শতকের নানা বিষয়ে কৃতী ভারতীয়দের জীবনকথা সংকলন করা । 1972 সালে—অর্থাৎ ভারতের স্বাধীনতা লাভের পঁচিশ বর্ষ পূর্তি বৎসরে এই অভিধান যেসব ভারতীয় এবং ভারত-প্রেমী বিদেশী যাঁরা এদেশকে স্বদেশ মনে করতেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে ত্যাগ, সেবা, উদ্যম ও শ্রমে বর্তমান ভারত গঠন করেছেন তাঁদের অমর স্মৃতির উদ্দেশ্যে অভিধানটি শ্রদ্ধা অর্থ স্বরূপ নিবেদিত হল। স্বাধীনতার পরবর্তীকালের প্রজন্মকে পর্বেসরীদের কাছে তাদের ঋণ ও কৃতজ্ঞতার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া আমাদের কর্তব্য । চার খণ্ডে এই চরিত অভিধান সম্পূর্ণ হবে চার খণ্ডের কালসীমা 1800 সাল থেকে 1947 সাল পর্যন্ত। ইতিহাস একটি বহমান ধারা, তা খন্ডরূপে দেখা চলে না। তবুও এভাবে কালসীমা ধার্যে‘র অন্যতম কারণ আঠার ও ঊনিশ—এই দুই শতকের চরিত্র সম্পূর্ণ আলাদা। ঊনিশ শতকের প্রথম দিকে নতন নতেন ভাবনা-চিন্তা এবং নানা শক্তির ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফলে জাতীয় জীবনে যে জাগরণ দেখা দেয় তারই সফল পরিণতি হল 1947 সালে বিদেশী শাসনের অবসানে ভারতের স্বাধীনতা লাভ। ঊনিশ শ সাতচল্লিশ সালও আবার ভারতের ইতিহাসে একটি স্পষ্ট সীমারেখা নির্দেশ করে। এই সালে কেবল যে দেশ ভাগ হয়েছিল তা নয়, আরও অনেকে নতেন চিন্তা এবং কার্যকলাপ যা স্বাধীনতার পরবর্তীকালে সমাজে, রাষ্ট্রব্যবস্থায় ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে তারও সূত্রপাত হয়েছিল ।