বঙ্গবন্ধুশেখ মুজিবুর রহমান ইতিহাসের কোনো অধ্যায় নন। তিনি একটি পণূর্ ঙ্গ ইতিহাস। ইতিহাসের প্রয়েজনেই বঙ্গবন্ধর সৃিষ্ট। তাই তিনি বাঙালি জাতির পিতা এবং হাজার বছরের শেষ্ঠ্র বাঙালি অভিধায় অভিষিক্ত। গোপালগঞ্জের টঙ্গুীিপাড়ায় তিনি জন্মগহ্রণ করে, ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি নিয়ে ইতিহাসের প্রতিটি সন্ধিক্ষণে তিনি রেখেছেন সময়োপযোগী অবদান। দেশপেম্র , গণমানুেষর প্িরত ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ, অধিকার আদায়ের সচেতনতা ও চারিত্রিক দৃঢ়তা, প্রজ্ঞা, এমনকি লক্ষ্যে পৌঁছতে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতেও যাঁর সামান্য দ্বিধাবোধ ছিল না, এমনি অনন্য চরিত্রের অধিকারী ছিলেন তিনি। যা একজন সাধারণ রাজনীতিবিদের মধ্যে বিদ্যমান থাকে না। নেতৃত্বজোর করে আদায় করা যায় না। আর আদায় করলেও অল্প সময়ের মধ্যেই আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হতে হয়, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের ইতিহাসই তার প্রমাণ। ১৯৪৭-এ দেশবিভাগের পরে পশ্চিম পাকিস্তানি নেতারা পূর্ব পাকিস্তানকে শাসনক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করে ক্ষমতার স্বাদ তারাই ভোগ করতে লাগল। যে পূর্বপাকিস্তান অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ববঙ্গ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণছিল, স্বাধীন হওয়ার পর মাত্র কয়েক বছরেই খাদ্যঘাটতি এলাকায় পরিণত হল। পূর্ব পাকিস্তানের উৎপাদিত সোনালি আঁশ পাট বিক্রয় করে যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হত, তা পবূর্ পাকি¯াÍনে ব্যয় না হয়ে ব্যয়িত হত পশ্চিম পাকি¯াÍনে। বৈদেশিক ঋণের সিংহভাগও ব্যয়িত হত পশ্চিম পাকিস্তানে। দেশরক্ষা বাহিনী থেকে শুরু করে সকল বেসামরিক চাকরি-বাকরি থেকেও পূর্ব পাকিস্তানিদের বঞ্চিত করে, স্বাধীনতার পুরো স্বাদ পশ্চিম পাকিস্তানিরাই ভোগ করতে লাগল।এমনকি মাতৃভাষা বাংলাকে নিয়েও শেষপর্যন্তছাত্রসমাজকে বুকের রক্ত ঢেলে দিতে হয়েছে। তারপর বাংলা ভাষা রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা পেয়েছে। সকল ক্ষেত্রেই শুধু বঞ্চনা আর বঞ্চনা। তার বিরুদ্ধে সেদিন বঙ্গবন্ধু রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রতিবাদ করতে যেয়ে তাঁকে কয়দিন পরে পরেই জেলখানায় ঢুকতে হয়েছে, তবুও তিনি অধিকার আদায়ের দাবি থেকে পিছপা হননি। অবশেষে বঙ্গবন্ধু সকল দিক চিন্তা করে লোকগানে বঙ্গবন্ধুষ বাঙালির মুিক্তর জন্য মুিক্তসনদ ছয়দফা পণ্র য়ন করলেন এবং জাতির সামনে এর যৌক্তিকতা তুলে ধরলেন। ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণার পর পশ্চিমারা দেখল, এ ছয় দফা যদি কার্যকরী হয় তাহলে পূর্ব পাকিস্তানকে আর শোষণ করা যাবে না, একনায়কতন্ত্রচলবে না, এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বাঙালিদের হাতে দেশের শাসনভার চলে যাবে। তাই ছয়দফা মেনে নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ক্ষমতাসীন আইয়ুব সরকার দমন-পীড়ন, জেল-জুলুমের পরিমাণ বাড়িয়ে দিল। কিন্তুএ দমননীতিতে ভীত না হয়ে ছাত্র-জনতা বঙ্গবন্ধুর প্রদর্শিত পথে এগিয়ে যেতে লাগল। এমনকি আগরতলা ষড়যন্ত্রনামে একটি রাষ্ট্েরদ্রাহিতার মামলা দিয়ে সে অপরাধে ঙ্গবন্ধুেক ফাঁসিতে ঝলু ানোর চেষ্টা শুরু করল। আগরতলা ষড়যন্ত্রমামলার বিরুদ্ধে এ দেশের জনতা রুখে দাঁড়াল। আইয়্বু খান প্রথমে ১৪৪ ধারা জারি করে জনসমাগম বন্ধ করে দিয়ে আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তুজনগণ ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে আসায় বাধ্য হয়ে সান্ধ্য আইন জারি করল। কিন্তুজনগণ ভীত হয়ে ঘরে ফিরে না এসে জেলের তালা ভাঙ্গব, শেখ মুজিবকে আনব, তোমার নেতা, আমার নেতা শেখ মুজিব, শেখ মুজিব, শ্লোগানে শ্লোগানে আকাশবাতাস প্রকম্পিত করে তুলল। পুলিশ আইয়ুব সরকারের নির্দেশে মিছিলের উপর গুলি চালিয়ে ছাত্র, শ্রমিক, জনতাকে হত্যা করতে লাগল। তবুআন্দোলন থামল না বরং গণঅভ্যুত্থানে রূপ লাভ করল। আইয়্বু খান যখন দেখল, কোনো অবস্থাতেই জনতার আন্দোলন থামানো যাচ্ছে না, তখন বাধ্য হয়ে আইয়ুব খান গদি ছেড়ে অন্য আর এক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নিকট ক্ষমতা হস্তাšরÍ করে সরে গেলেন। ইয়াহিয়া খান দেশের ক্ষমতা গ্রহণ করে, জাতির সামনে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সাধারণ নির্বাচন দেওয়া সহ আরো কিছুগুরুত্বপূর্ণপ্রতিশ্রুতি দিয়ে দেশকে শান্তকরলেন। তার প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদের নির্বাচন এবং ১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর তৃত্বেনৌকা প্রতীক নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করল। যখন দেখল সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে বাঙালির নেতা বঙ্গবন্ধরু হাতে ক্ষমতা চলে যাচ্ছে তখন আবার নতনু করে ষড়যন্ত্রশুরু হল। ৩ মার্চজাতীয় পরিষদের ডাকা অধিবেশন পিপিপি নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর পরামর্শে১ মার্চইয়াহিয়া খান স্থগিতের ঘোষণা দিলেন। তারপর আবার শুরু হল চরম নির্যাতন। ঘোষণার পর পরেই জনতা ফুঁসে উঠল। ঢাকার রাজপথ মিছিলে মিছিলে উত্তাল হয়ে উঠল। ইয়াহিয়া লোকগানে বঙ্গবন্ধুষ ৮ খানের বুলেটকে উপেক্ষা করে স্বাধিকারের দাবিতে জনতার এ আন্দোলন ইয়াহিয়া খানের মসনদের ভিত কাঁপিয়ে দিল। শাসনব্যবস্থা একদম ভেঙে পড়ল। দেশ চলে গেল বাঙালির নেতা বঙ্গবন্ধুশেখ মুজিবুর রহমানের হাতে। তাঁর নির্দেশে তখন দেশ চলতে লাগল। এ অব¯া’য় ইয়াহিয়া খান পবূর্ পাকি¯াÍনে এসে বঙ্গবন্ধরু সাথে আলোচনার নামে সময় ক্ষেপণ করে, তারপর এক সন্ধ্যায় প্লেনে পিণ্ডি চলে গেলেন। আদেশ দিয়ে গেলেন পূর্বপাকিস্তানে পোড়ামাটি নীতি গহ্র ণ করতে। শুরু হল ২৫ মার্চরাতে পাক হানাদার বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ-হত্যালীলা। বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ প্রথ প্রহরে স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন এবং আহ্বান জানালেন মুক্তিযুেদ্ধ ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশকে হানাদার-মুক্ত করতে। তারপর শুরু হল মুক্তিযুদ্ধ। এ দেশের ছাত্র, জনতা, অর্থাৎ কামার-কুমার, তাঁতি-জেলে থেকে শুরু করে সর্বস্তরের জনগণ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ল। এবং নয় মাস যুদ্ধ করে ৩০ লক্ষ শহিদ এবং দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর ৯৩ হাজার পাক হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের ভেতর দিয়ে বিজয়পতাকা উড্ডীন করল। সেদিন বঙ্গবন্ধুকে ছয় দফা সহ সকল আন্দোলন সংগ্রামে এদেশের ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক সেবী সহ সকল স্তরের পেশাজীবীরা সহযোগিতা দিয়েছিল। সেই দুঃসময়ে এদেশের দেশপ্রেমিক জনতার সাথী হয়েছিল, গ্রামীণ জনপদে বসবাসকারী বাউলরাও। তারাও গান রচনা করে স্বকণ্ঠে গেয়ে জনতাকে উদ্বদ্ধু করেছিল, মুিক্তযুেদ্ধ অংশ গহ্র ণের জন্য আহ্বান জানিয়েছিল এবং পাক হানাদারদের খতম করে দেশের বিজয় ছিনিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছিল। সে সময়ে ছয়দফা, জয় বাংলা এবং বঙ্গবন্ধুকে কেন্দ্রকরে যে সমস্তসংগ্রামী গান লোক-কবিরা রচনা করেছিলেন এবং তাঁদের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছিল, সে সমস্তকিছু গান সংগ্রহ করে ‘লোকগানে বঙ্গবন্ধু’ নামে এ সংকলনটি প্রকাশ করে আপনাদের হাতে তুলে দিলাম। বিচারের ভার আপনাদের হাতে রইল।
মো. নুরুল ইসলাম, ১৯৪৬ সালের ৩ মার্চ নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা: এলিম উদ্দিন এবং মাতা: আয়শা খাতুন। স্কুলের ম্যাগাজিনে লেখার মধ্য দিয়ে লেখালেখি শুরু। ষাটের দশকে নেত্রকোণা থেকে প্রকাশিত পাক্ষিক পত্রিকা “উত্তর- আকাশে”-র একজন নিয়মিত লেখক ছিলেন তিনি। লোক সাহিত্যেই তার কাজের প্রধান ক্ষেত্র । এক সময় জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি একজন সফল মুক্তিযোদ্ধা। একই সাথে বলিষ্ঠ সংগঠকও। এছাড়া স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় নেত্রকোণার ছাত্রলীগের মিছিলে তিতাস নামে এক ছাত্রলীগের এক কর্মী নির্মমভাবে নিহত হলে তাকে কেন্দ্র করে “আন্দোলনের একটি নাম তিতাস" শিরোনামে একটি গীতি-নকশা রচনা করেন এবং পরবর্তীতে ক্যাসেট আকারে প্রকাশিত হলে ব্যাপকভাবে পাঠক মহলে সমাদৃত ও আলোচিত হয়। বাংলাদেশ বেতারের নিয়মিত তালিকভুক্ত গীতিকার। উল্লেখ্য লিখিত “বীরঙ্গনা সখিনা নাটক” এবং “মুক্তিযুদ্ধে কেন্দুয়া” নামে দুটি বই ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। নেত্রকোণা বাউলদের আঁতুরঘর। এখানেই তার জন্ম। শিশুকাল থেকেই বেড়ে উঠেছেন বাউলদের সান্নিধ্যে। সে থেকেই তার চিন্তা চেতনায় সবসময় বিরাজমান বাউণসমাজ। এরই ধারাবাহিকতার ফসল “নেত্রকোণা বাউলা গান”। এক মেয়ে ও চার ছেলে সন্তানের জনক। তিনি একজন সদালাপী ও পরপোকারী মানুষ হিসেবে সামাজিক নানান কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন।