লেখক পরিচিতি লেখক, কবি, সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক ও অনুবাদক। বর্তমানে অনুবাদ কর্মই তাঁর একমাত্র পেশা এবং উপন্যাস রচনায়ও মনোনিবেশ করেছেন।
ফ্ল্যাপে লিখা কথা মধ্যরাতের পর সূর্যের নগরে একজন আগন্তুক প্রবেশ এবং ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে মার খায় এবং বুঝতে পারে মানুষকে যে মারধেঅর করে এদেশে সে-ই হল নেতা এবং মানুষ তাকে ভয় পায় এবং ঘৃণা করে এবং একই সঙ্গে তাকে নেতা বলে ডাকে।
আগন্তুক এই নগরে প্রায় নয় মাসে তিনটা চাকরি করে এবং সর্বশেষ চাকরিটা ছিল গল্প-শোনার চাকরি। আগন্তুক এই নগরের ফুটপাতেও কাটিয়েছে বহুদিন এবং সে দেখেছে সূর্যের নগরে জীবন দুই টুকরো হয়ে ভেঙে গেছে। এক টুকরো-বেদনার্ত, বিষণ্ন, দুর্বল এবং স্পর্শকাতর, রাত্রির নীরবতায় যার কান্না ধুলো ও দালান-কোঠার ভেতরে ছুটোছুটি করছে, যার শূন্যতায় পরিণত হওয়া ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই। আর অন্য এক টুকরো-উৎফুল্ল, আয়েশী, সুবিধাভোগী, লালসাপূর্ণ, লোভী ও পরশ্রীকাতর, সারাক্ষণই যার চোখ সন্দেহপ্রবণতায় খুঁতখুঁতে এবং সে কেবলি ছিদ্র অনুসন্ধান করে তাতে আঙুল প্রবেশ করাবার জন্য এবং তারা কখনও কাঁদে না। তারা শিকারের শিল্পকলা জানে-তারা শিকারি, তারা নেতা। জনগণের দুর্ভোগের ওপর দাঁড়িয়ে উল্লাস প্রকাশ করে নেতারা।
মােস্তফা মীর মূলত কবি। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে যারা প্রথম কবিতা লিখতে শুরু করেন এবং সত্তর দশকে বাংলা কবিতাকে যারা এদেশে জনপ্রিয় করে তােলেন মােস্তফা মীর তাদের অন্যতম। তাঁর জন্ম ১৯৫২ সালে, রাজবাড়ী জেলার বড়লক্ষীপুর গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তিনি মাষ্টার্স করেছেন ১৯৭৬ সালে। কর্মজীবনে একাধিকবার পেশা বদল করেছেন এবং একটি বেসরকারি সংস্থায় ১৮ বছর যুক্ত ছিলেন সম্পাদনা কর্মের সঙ্গে। আজন্ম উদাসীন ও প্রচার বিমুখ এই কবির কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা মাত্র পাঁচটি। পুরো আশির দশকে তিনি কোন লেখালিখিই করেননি। নব্বই দশকের শুরুতে এসে হঠাৎ করেই লেখেন উপন্যাস 'দানববংশ।' মৌলবাদীরা মামলা ঠুকলেও তা ধােপে টেকেনি। তবে গদ্যচর্চার এই ধারাবাহিকতায় লেখেন আরও তিনটি উপন্যাস, ‘ঈশ্বরের ঘ্রান’, ‘কুকুরকুঞ্জ’ এবং তােমাকে চাই'। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময় থেকেই তিনি উপন্যাস রচনার পাশাপাশি অনুবাদ কর্মে হাত দেন এবং গদ্য ও পদ্য মিলে তাঁর অনুবাদ গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ত্রিশ এর অধিক। বর্তমানে অনুবাদ কর্মই তার একমাত্র পেশা এবং তিনি উপন্যাস রচনায়ও মনােনিবেশ করেছেন । তবে প্রায় সময়ই তিনি অসুস্থ থাকেন। কারণ গত এগার বছর যাবৎ তিনি লিভারের অসুখে ভুগছেন। গত বছর প্রকাশিত হয়েছে তার গবেষণাধর্মী গ্রন্থ ‘মিশরীয় পুরাণ'। মােস্তফা মীরের সবচেয়ে আলােচিত গ্রন্থ হচ্ছে ‘আদম ইতিহাসের প্রথম চরিত্র।