জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক নির্ধারিত সংজ্ঞায় নিরাপত্তার ধারণাকে জীবনযাত্রার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্তৃত করা হয়েছে। মূলতএসব ক্ষেত্র হচ্ছে- অর্থনীতি, রাজনীতি, স্বাস্থ্য, খাদ্য, পরিবেশ, প্রতিবেশ এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা। রাজনীতি বিজ্ঞানের ভাষায়- ‘সর্বাধিক মানুষের জন্য সর্বাধিক সুখ’ (Greatest happiness to the highest number of people) নিশ্চিত করাই রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য। আর এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে রাষ্ট্রকে নাগরিকের সকল নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকে মনোযোগী হতে হয়। কল্যানমূলক রাষ্ট্রের ধারণায় মানুষের জন্য সরকার। সরকারের জন্য মানুষ নয়। মানুষের কল্যাণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গী থেকে জাতীয় নিরাপত্তা মানে হচ্ছে, সামরিক বাহিনী আর বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা। বিষয়টি আসলে তা নয়। জাতীয় নিরাপত্তার অন্তর্নিহিত উপাদানগুলোর মূলে রয়েছে নাগরিক নিরাপত্তা। নাগরিক নিরাপত্তার জন্যই রাষ্ট্র, সরকার ও রাষ্ট্রের অন্যান্য অঙ্গ। এ নিরাপত্তার অন্তর্ভুক্ত খাদ্য, বাসস্থান, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা থেকে ব্যক্তি নিরাপত্তা আর সে কারণেই রাষ্ট্র সার্বভৌম। মানুষের সব অধিকারের মধ্যে প্রধান অধিকার হলো জীবনের অধিকার, নিরাপত্তার অধিকার। তবে এক্ষেত্রে উল্লেখ না করলেই নয় যে, বর্তমান বিশ্বের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিরাপত্তার ধারণাটি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠেছে। নিরাপত্তা অর্জন সকলেরই কাম্য, তবে তা খুব সহজ কাজ নয়। কারণ বর্তমান সময়ে নানা ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা, দ্বন্দ্ব এবং সংঘাতের মাত্রা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে দেশ, জাতি ও ব্যক্তির নিরাপত্তা। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে পারস্পরিক সমঝোতার ইচ্ছা থাকলেও বেশ কিছু সীমাবদ্ধতার জন্য নিরাপত্তা অর্জন যথাযথভাবে সম্ভব হচ্ছে না। এমন ধরনের নানা সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা খুঁজে বের করতে এবং কল্যাণকর রাষ্ট্রব্যবস্থার ধরন অনুধাবনে ‘নিরাপত্তা অধ্যয়ন’ গ্রন্থটি অত্যন্ত উপযোগী হবে বলে আশা করছি। গ্রন্থটি রাজনীতি বিজ্ঞানের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের সাধারণ পাঠকদের জন্য সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় রচিত হয়েছে।