“আঁধারের কাহন" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ আমেনা বেগম যা ভেবেছিলেন তাই। রুহুল মিয়া নদীর পাড়ে। বালির বস্তার উপর নিতান্তই বেখায়ালীভাবে বসে আছে। সূর্য। ডুবেই গেছে ... তবে এখনাে লালিমা কাটেনি আকাশে। চাঁদ। উঠে গেছে , তবে আকাশে লালচে আলাের রেখাটা এখনও। থাকায় দশ দিন বয়সী চাঁদকে কেমন যেন নিস্তান লাগছে.... আমেনা বেগম দ্রুত পা চালান। বালিতে তার পা আটকে যাচ্ছে। বারবার। আঁচলে দুকেজি চাল গিট দিয়ে বাঁধা, সেই চালটুকু। বুকের কাছে ধরে হাঁটছেন আমেনা বেগম। রুহুল মিয়ার । কাছাকাছি গিয়ে হঠাৎ যেন কিছু একটায় ধাক্কা খেলেন আমেনা। বেগম। ধাক্কা সামলাতে না পেড়ে ধপাস করে পড়ে গেলেন । তিনি। নিজেকে সামলাবার চাইতে চালটুকু সামলাবার চিন্তা ছিলাে বেশি, তাই চাল বাঁচলেও তিনি বেশ ব্যথা পেলেন। উঠে। দাঁড়াবার শক্তি তার নেই ... মনে মনে নিজেকে গালাগালি। করতে লাগলেন, ঘরের দিকে যাওয়াই উচিত ছিলাে তার। এই। আলাে আঁধারের মধ্যে বালির মধ্যে দিয়ে আসা ঠিক হয়নি তার ।। হঠাৎ তিন চারটা শিয়াল ডেকে উঠলাে। এ অঞ্চলে আগে । শিয়াল ছিলাে না, ইদানীং কতগুলাে আস্তানা গেড়েছে এখানে ।। সন্ধ্যার পর তাদের ডাকে বুকের ভেতরটা কেপে উঠে, এমনি। ভয়ঙ্কর লাগে সেই ডাক! আমেনা বেগম আবার উঠে দাঁড়াবার। চেষ্টা করলেন, পারলেন না। ওখান থেকে গলায় যতটা শক্তি আনা যায় এনে জোরে। ডাকলেন ‘ও রানুর বাপ ... উইঠা আসাে ...' সে ডাক রুহুল। মিয়ার কানে পৌছালাে কি না কে জানে! তবে তাকে উঠতে। সাহায্য করার জন্য একটা হাত ঠিকই এলাে ... নরম কোমল। একটা মেয়ের হাত! আমেনা বেগম সেই হাত ধরে অনেক কষ্টে উঠলেন। কোমড়ে। বেশ ভালােই চোট লেগেছে। ব্যথাটা বােঝা যাচ্ছে ... মেয়েটি আমেনা বেগমকে উঠিয়ে তার দিকে তাঁকিয়ে মিষ্টি গলায়। বললাে ‘আপনি ব্যথা পাননি তাে!' আমেনা বেগম মেয়েটির দিকে নজরকরে দেখলেন এক পলক ।। অন্ধকার নেমে গেছে, তবে চাঁদের রহস্যময় আলাে চারদিকে ।। সেই আলাে অন্ধকার বাড়াচ্ছে নাকি কমাচ্ছে বােঝা যাচ্ছে না ।। মেয়েটির গলায় সােনার হার চিকচিক করছে। সাদা ডুরে শাড়ি। পরা মেয়েটি, দেখতে কেমন ঠিক বােঝা যাচ্ছে না, তবে আমেনা । বেগমের মনে হলাে মেয়েটি বড়ই রূপসী ... আমেনা বেগম। নিজের ব্যথা লুকিয়ে বললেন না গাে মা, চোট পাই নাই। তা। তুমি কোন বাড়ির মাইয়্যা গাে মা? এই সাঁইঝাকালে নদীরঘাটে। একলা কি করাে গাে মা? বাইত যাও, এরাম সুময়ে জুয়ান। মাইয়্যা ছাওয়ালের নদীর ঘাটলায় আসন নিষেধ গাে মা ...'। কথাগুলাে শুনে মেয়েটি হাসে ... মেয়েটির হাতের কাঁচের। চুড়ির রিনরিনে শব্দ আর সেই হাসির শব্দ মিলেমিশে একাকার। হয়ে যায় ... আমেনা বেগম আর কথা না বলে মেয়েটির হাতে। ভর দিয়ে নদীর দিকে আগাতে থাকেন।