"পাবলিক স্পিকিং অ্যান্ড ইনফ্লুয়েন্সিং ম্যান ইন বিজনেস" বইটির শেষের ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ কেন এখনও কার্নেগির পরামর্শ গুরুত্বপূর্ণ? ১৯৩৬ সালে ডেল কার্নেগী পাঠকদের উদ্দেশ্যে একটি জোরালাে বক্তব্য দিয়েছিলেন : “আপনি যেসব সমস্যা মােকাবেলা করেন, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা মানুষের সাথে ডিল করা।” এটিই মেন্টরিং-এর ভিত্তিক এবং তা আজও বিদ্যমান। মানুষের সাথে আচরণের জন্য কৌশল বিকাশ আরও জটিল। মেসেজিংয়ের গতি তাৎক্ষণিক। যােগাযােগ মাধ্যম বহুগুণ বেড়েছে। নেটওয়ার্কগুলি সীমানা, শিল্প এবং আদর্শের বাইরেও প্রসারিত হয়েছে। তারপরও এই বইয়ের নীতিগুলি অপ্রচলিত হওয়ার পরিবর্তে, এসব বড় পরিবর্তনগুলি কার্নেগির নীতিগুলিকে আগের চেয়ে আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। আপনি প্রতিটি ব্র্যান্ড বিপণন করছেন, আপনার পত্নীর কাছে ক্ষমা চাচ্ছেন বা বিনিয়ােগকারীদের কাছে পিচ করছেন—এগুলাের প্রতিটি শব্দ তার প্রদত্ত কৌশলগুলাের প্রতিনিধিত্ব করে এবং যদি আপনি সঠিক ভিত্তি দিয়ে শুরু না করেন তবে। ভুল বার্তা প্রেরণ হবে, আপত্তিজনক আচরণ হবে বা বিব্রতকরভাবে আপনার উদ্দেশ্যটি সহজে বিনষ্ট হয়ে যাবে। আমেরিকান লেখক জেমস থারবার জোর দিয়ে বলেছিলেন- “যােগাযােগের যথার্থতা বর্তমান চুলচেরা ব্যালেন্সের যুগে আগের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ, যখন কোনও মিথ্যা বা ভুল বােঝাবুঝির শব্দ এবং উদ্বিগ্ন আচরণ বিপর্যয় সৃষ্টি করতে। পারে।” থারবার এই বাক্যাংশটি লেখার পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় পরে আজও বিবেচনা করা হচ্ছে। এখন বাজি অনেক বেশি। মিডিয়ার সংমিশ্রণের মধ্যে পার্থক্য করা আরও কঠিন। প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি অপ্রচলিত কিউ, প্রতিটি নিঃশব্দ কার্যকলাপকে পরীক্ষা করা হচ্ছে, যেমনটি আগে কখনও হয় নি। একটি ভুল পদক্ষেপের আরও বৃহত্তর প্রভাব থাকতে পারে। তবুও, আপনার প্রথম শুভ সকাল থেকে আপনার শেষ শুভরাত্রি পর্যন্ত প্রতিটি মিথস্ক্রিয়া হল বন্ধুবান্ধবকে জয় করার এবং অন্যকে ইতিবাচক উপায়ে প্রভাবিত করার সুযােগ। যারা এ কাজে সফল হন তারা বেশ সফল জীবন যাপন করেন। তবে এই ধরণের সাফল্য একটি পরােপকারী মূল্যে এসে থাকে। কেউ কেউ সেই মূল্য দিতে রাজি হয় না।
Title
পাবলিক স্পিকিং অ্যান্ড ইনফ্লুয়েন্সিং ম্যান ইন বিজনেস
ডেল ব্রাকেনরিডজ কার্নেগী, এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে ২৪ নভেম্বর, ১৮৮৮ সালে জন্ম নেওয়া এই আমেরিকান লেখক তাঁর আত্ম-উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ও বইয়ের পাতায় আজও বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এক নাম। সেলফ-ইম্প্রুভমেন্ট, সেলসম্যানশিপ, করপোরেট ট্রেনিং, পাবলিক স্পিকিং, ও ইন্টার পার্সোনাল স্কিল এর মতো দারুণ সব প্রশিক্ষণের উদ্ভাবন ও এসব বিষয়ে লেখা ডেল কার্নেগী এর বই সমূহ আশার আলো দেখিয়েছে অসংখ্য হতাশাচ্ছন্ন মানুষকে। মিসৌরিতে দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়ার দরূণ বালক বয়স থেকেই কাজ করেছেন ক্ষেতখামারে। এর মাঝেও ওয়ারেন্সবার্গের সেন্ট্রাল মিশৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন। কলেজ শেষে জীবিকার তাগিদে বেকন, সাবান এবং লার্ড (শূকরের চর্বি মিশ্রিত করা) তৈরির কাজও করতে হয় আর্মর অ্যান্ড কোম্পানির জন্য। ফার্মের প্রধান হিসেবে অনেক সাফল্য লাভ ও ৫০০ ইউএস ডলার সঞ্চয়ের পর ১৯১১ সালে বহুদিনের লালিত স্বপ্ন অধ্যাপক হওয়ার জন্য বিক্রয় সেবার কাজটি ত্যাগ করেন তিনি। কিছু ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা ঝুলিতে নিয়ে যখন ওয়াইএমসিএ- এর ১২৫ নম্বরে বাস করতে শুরু করেন, তখনই পাবলিক স্পিকিং এর ধারণাটি মাথায় খেলা করে কার্নেগীর। সেই সময় মোট লভ্যাংশের ৮০% শতাংশের বিনিময়ে ওয়াইএমসিএ এর পরিচালকের কাছে শিক্ষা প্রদানের আগ্রহ প্রকাশ করেন। এভাবেই ১৯১২ সাল থেকে কার্নেগী কোর্সের যাত্রা শুরু হয়। পুরো আমেরিকাবাসীর কাছে ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির পথ হয়ে উঠে তার পদ্ধতি। ডেল কার্নেগী এর বই সমগ্র এর মধ্যে ‘হাউ টু উইন ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ইনফ্লুয়েন্স’ বইটিকে তার সেরা অবদান হিসেবে ধরা হয়। প্রথম প্রকাশের মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই যার ১৭তম মুদ্রণও প্রকাশ করতে হয়েছিলো। ডেল কার্নেগী এর লেখাগুলো বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। ‘বিক্রয় ও জনসংযোগ প্রতিনিধি হবেন কীভাবে’, ‘বন্ধুত্ব ও সম্পদ লাভের কৌশল’, ‘বড় যদি হতে চাও’, ‘ব্যক্তিত্ব বিকাশ ও সাফল্যের সহজ পথ’ এমন নানা নামের অনূদিত ডেল কার্নেগী বাংলা বই অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে বাংলাভাষী পাঠকদেরও। ডেল কার্নেগী শ্রেষ্ঠ রচনাসমগ্র এর মধ্যে আরও আছে ‘দ্য বায়োগ্রাফি অব আব্রাহাম লিংকন’, ‘ফাইভ মিনিট বায়োগ্রাফিস’ এবং ‘বিশ্বায়নের পটভূমি’। ১ নভেম্বর, ১৯৫৫ সালে আমেরিকান এই অধ্যাপক মৃত্যুবরণ করেন।