মহাবিপর্যয়! আন্তঃমহাজাগতিক গবেষণাকেন্দ্র জানতে পেরেছে কয়েকদিনের মধ্যেই হাইবিন নামক বিশাল এক ধূমকেতু সূর্য আর পৃথিবীর মধ্যে দিয়ে ছুটে যাবে অজানা মহাশূন্যে। এই ধূমকেতুর কারণে তিন মাস সূর্যের আলো পৌঁছাবে না পৃথিবীতে। পৃথিবী ডুবে যাবে নিকষ কালো অন্ধকারে। আলোর অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে উদ্ভিদের সালোক-সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া, উৎপাদন হবে না অক্সিজেন। ফলে সংকট সৃষ্টি হবে খাদ্যের, অক্সিজেনের অভাবে মারা যেতে থাকবে ছোট বড় নানা প্রজাতির প্রাণী। আর সূর্যের আলো না থাকায় পৃথিবীতে থাকবে না দিন রাতের পার্থক্য, কমতে থাকবে তাপমাত্রা। একদিকে উদ্ভিদের মৃত্যু, অন্যদিকে প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে মানুষের অস্তিত্ব হবে হুমকির সম্মুখীন। এই বিপর্যয়ের নাম হবে হাইবিন মহাবিপর্যয়!br হাইবিন মহাবিপর্যয়ে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ইফান আর ইনিশা। কিন্তু মহাবিপর্যয় শুরু হলে তারা বুঝতে পারল ভাগ্য তাদের পক্ষে নেই। একটার পর একটা বিপদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। অন্ধকার আর তীব্র ঠান্ডা থেকে রক্ষা পেতে শেষ পর্যন্ত তারা আশ্রয় নেয় পহাড়ের গুহায়। অজানা এক বিস্ফোরণে ঐ গুহায়ই আটকা পড়ে যায় একসময়। বাঁচার জন্য একটার পর একটা পাথর সরাতে থাকে। একসময় ভেঙে যায় শেষ সম্বল ছুরিটা, নিভে যায় টর্চলাইটের আলো। তীব্র অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় দুজন। তারপরও আশা ছাড়ে না। বাঁচতে যে তাদের হবেই। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। অক্সিজেন নিঃশেষ হয়ে আসছে গুহার মধ্যে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তাদের। অক্সিজেন স্যুটেও কাজ হচ্ছে না। দুজনেই বুঝতে পারছে মৃত্যু আসন্ন, কেউ আর তাদের বাঁচাতে পারবে না। তাই শেষ বারের মতো দুজন তাকাল দুজনের দিকে। বুঝল নতুন পৃথিবীতে নতুন জীবনের যে স্বপ্ন তারা দেখেছিল সেই স্বপ্ন্ আর তাদের পূরণ হবে না, কারণ মৃত্য যে কড়া নাড়ছে দরজায়!br শেষ পর্যন্ত কী ঘটেছিল ইফান আর ইনিশার জীবনে? তারা কী বাঁচতে পেরেছিল? নাকি পৃথিবীর অন্যসব মানুষের মতো তাদেরও আলিঙ্গন করতে হয়েছিল বিভীষিকাময় মৃত্যু?
লেখক মোশতাক আহমেদ এর জন্ম ১৯৭৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর, ফরিদপুর জেলায়। পেশায় একজন চাকুরিজীবী হওয়া সত্ত্বেও লেখালেখির প্রতি তাঁর আগ্রহ প্রচুর। এ পর্যন্ত সায়েন্স ফিকশন নিয়েই সবচেয়ে বেশি লিখেছেন। বাংলা সায়েন্স ফিকশন জগতে তার পোক্ত একটি অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও মোশতাক আহমেদ এর বই সমূহ ভৌতিক, প্যারাসাইকোলজি, মুক্তিযুদ্ধ, কিশোর ক্ল্যাসিক, ভ্রমণ ইত্যাদি জঁনরাতে বিভক্ত। যেকোনো একটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতেই পছন্দ করেন। মোশতাক আহমেদ এর বই সমগ্র সংখ্যায় পঞ্চাশ পেরিয়েছে। তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই ছিল ‘জকি’। এটি একটি জীবনধর্মী উপন্যাস। ২০০৫ সালে এটি প্রকাশিত হয়। মোশতাক আহমেদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথমে ফার্মেসি বিভাগে, পরে আইবিএতে। পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপরাধবিজ্ঞান থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। পড়াশোনার খাতিরেই হোক বা কর্মজীবনের তাগিদেই হোক, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অনেক ভ্রমণ করেছেন। সেসব ভ্রমণকাহিনীর আশ্রয়ে তাই ক্রমেই সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর লেখা ভ্রমণকাহিনীগুলোও। তাঁর সৃজনশীল কর্মকাণ্ড শুধু লেখালেখিতেই গণ্ডিবদ্ধ নয়। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাজারবাগের পুলিশ ও পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর মধ্যে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। সে ঘটনার ওপর ভিত্তি করে মোশতাক আহমেদ ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এটি ২০১৩ সালের মার্চ মাসে মুক্তি পায়। তাঁর পুরস্কারের ঝুলিতে এ পর্যন্ত রয়েছে ২০১৩ সালের কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের ছোটদের মেলা সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের কৃষ্ণকলি সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৫ সালের সিটি আনন্দ আলো পুরস্কার এবং সর্বশেষ সংযুক্তি হিসেবে সায়েন্স ফিকশন বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭।