#ইহকাল ও পরকাল প্যাকেজ আপনাদের বহু প্রত্যাশিত কিতাব আল্লামা ইবনু কাসীর রহ. রচিত “আন নিহায়াহ ফিল ফিতান ওয়াল মালাহিম”এর অনুবাদ হযরত আনাস ইবনু মালেক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন— একদা দুজন লোক মরুভূমিতে চলছিল। তাদের একজন আবেদ, আর অপরজন গোনাহগার। পথিমধ্যে গোনাহগার ব্যক্তিটি তার কাছে থাকা একটি পানির পাত্র বের করল। আবেদ লোকটির কাছে কোন পানি ছিল না, ফলে সে পিপাসার্ত হয়ে পড়ল। তখন সে গোনাহগার লোকটির উদ্দেশে বলল, হে অমুক! আমাকে পানি দাও, আমি পিপাসায় মরে যাব। গোনাহগার লোকটি বলল, দেখ, আমার কাছে একটিমাত্র পানির পাত্র আছে, আর আমরা মরুভূমিতে আছি। এখন যদি তোমাকে আমি এই পানিটুকু দিয়ে দিই তাহলে আমি মারা পড়ব। এরপর উভয়ে আবার চলতে থাকল। কতক্ষণ পর আবেদ লোকটি খুবই পিপাসার্ত হয়ে পড়ল। তখন সে গোনাহগার লোকটির উদ্দেশে আবার বলল, হে অমুক! আমাকে পানি দাও, আমি পিপাসায় মরে যাব। গোনাহগার লোকটি বলল, দেখ, আমার কাছে একটিমাত্র পানির পাত্র আছে, আর আমরা মরুভূমিতে আছি। এখন যদি তোমাকে আমি এই পানিটুকু দিয়ে দিই তাহলে আমি মারা পড়ব। এরপর তারা উভয়ে আবার চলতে থাকল। কতক্ষণ পরে সেই আবেদ লোকটি পিপাসায় কাতর হয়ে পড়ে গেল। তখন সে গোনাহগার লোকটির উদ্দেশে পুনরায় বলল, হে অমুক! আমাকে পানি দাও, আমি পিপাসায় মারা যাচ্ছি। তখন গোনাহগার লোকটি মনে মনে বলল, খোদার কসম! যদি এই নেককার লোকটি এভাবে মারা যায় তাহলে আল্লাহর কাছে আমার আর কোন উপায় থাকবে না। এই ভেবে সে কিছু পানি তার উপর ছিটিয়ে দিল এবং তাকে কিছু পানি পান করাল। এরপর তারা আবার মরুভূমিতে পথ চলতে লাগল। চলতে চলতে এক সময় মরুভূমি শেষ হয়ে গেল। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, কেয়ামতের দিন যখন তাদের উভয়কে হিসাব নিকাশের জন্য দাঁড় করানো হবে, তখন আবেদের জন্য জান্নাতের ফায়সালা হয়ে যাবে এবং গোনাহগার লোকটির জন্য স্বীয় গোনাহের কারণে জাহান্নামের ফায়সালা হবে। রাসূল ﷺ বলেন, এমন সময় গোনাহগার লোকটি আবেদকে দেখে চিনে ফেলবে। কিন্তু আবেদ লোকটি গোনাহগারকে চিনতে পারবে না। তখন সে আবেদকে ডাক দিয়ে বলবে, হে অমুক! আমি সেই লোক যে তোমাকে মরুভূমিতে একদিন নিজের উপর অগ্রাধিকার দিয়েছিলাম। আজ আমার জাহান্নামের ফায়সালা হয়ে গেছে। অতএব তুমি তোমার রবের নিকট আমার জন্য সুপারিশ কর। তখন আবেদ লোকটি আল্লাহর দরবারে তার জন্য সুপারিশ করে বলবে, হে আল্লাহ, এই লোকটি নিজের উপর আমাকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল। হে আল্লাহ, তাকে আজ আমার জন্য দিয়ে দিন। তখন সেই গোনাহগার লোকটিকে আবেদের সোপর্দ করে দেয়া হবে। ফলে আবেদ লোকটি তার হাত ধরে তাকে নিয়ে সোজা জান্নাতে চলে যাবে। হাদিয়া : ১৮৮০/=
আল্লামা ইবনে কাছীর রহ. এর জন্ম ১৩০১ খ্রিস্টাব্দে বসরার (বর্তমান সিরিয়া) মামলুক সালতানাতে। তার পুরো নাম ইসমাঈল ইবন উমর ইবন কাসীর ইবন দূ ইবন কাসীর ইবন দিরা আল-কুরায়শী হলেও তিনি ইবনে কাছীর নামেই সমধিক পরিচিত। তিনি কুরায়েশ বংশের বনী হাসালা গোত্রের সন্তান। তার জন্মস্থান এবং জন্ম তারিখ নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। তার শিক্ষাজীবন এবং শৈশব নিয়েও খুব বেশি তথ্য জানা যায় না। তবে মামলুক সালতানাতেই তিনি বড় হয়েছেন, এ ব্যাপারে ইতিহাসবিদগণ নিশ্চিত। কৈশোরে তিনি ফিরিঙ্গীদের যুদ্ধ, ক্রুসেড, তাতারদের আক্রমণ, শাসকদের অন্তর্কোন্দল, বিদ্রোহ করে ক্ষুদ্র রাজ্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াস, দুর্ভিক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানির মতো যাবতীয় দুর্যোগ আর দুর্দশা দেখে দেখে বড় হয়েছেন। কর্মজীবনে ইবনে কাছীর রহ. উন্মুসসা’ ওয়াত তানাকুরিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। কুরআন, হাদিস, তাফসির, ইতিহাস, গণিত সহ জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তিনি বিচরণ করেন। শায়খ তকী উদ্দী (রহঃ), উস্তাদ হাজরী (রহঃ), ইবনুল কালানসী (রহঃ) প্রমুখ প্রবাদত্যুল্য শিক্ষকের সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। পরবর্তীতে নিজের জ্ঞানের আলোয় তিনি আলোকিত করেছিলেন মধ্যযুগীয় মুসলিম জ্ঞানপিপাসুদের। ১৩৭৩ খ্রিস্টাব্দে দামেস্কে তার মৃত্যু হয়। আল্লামা ইব্নে কাছীর রহ. এর বই সমূহ ইসলামি দর্শন, ফিকহ শাস্ত্র, তাফসির ও ইতিহাস নির্ভর। তার রচিত ‘তাফসিরে ইবনে কাছীর’-এর জন্য তিনি বিশ্বজোড়া সমাদৃত। পবিত্র কুরআনের কাছীরগুলোর মাঝে তার এই গ্রন্থটিই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য এবং প্রামাণ্য। ১১ খণ্ডে প্রকাশিত ‘তাফসিরে ইবনে কাছীর’, ‘কাসাসুল আম্বিয়া’, ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’, ‘কিতাবুল আহকাম’ সহ বেশ কিছু জ্ঞানগর্ভ বই রয়েছে আল্লামা ইবনে কাছীর রহ. এর বই সমগ্রতে।