সময়ের গতিময়তায় সবটা মøান হয়ে যায় না। যা চিরায়ত ইতিহাসের সৃষ্টি করে, তা প্রতিধ্বনির মতো বিলীন হওয়ার নয়। এক সন্ধ্যার কথা বলছি...বহুকাল পেরিয়ে গেলেও যে সন্ধ্যা আজও স্মৃতির বীণায় মূর্ছনা তোলে। ক্ষণস্থায়ী গোধূলি বিদায় নিয়েছে দূর সীমান্ত থেকে বেশ অনেকটা সময় আগে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্লাবে বসে আছেন কয়েকজন অধ্যাপক, ধোঁয়া ওঠা চায়ের পেয়ালা সামনে নিয়ে। আলোচনার টেবিলে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক। সেই সন্ধ্যায় আলোচনা অসমাপ্ত রেখে বিমান ধরে চলে গেলেন ইয়াহিয়া খান। ক্রমেই রাতের ডানা কালো থেকে আরও কালো হতে লাগল। মনে হচ্ছে আকাশের বুক থেকে নক্ষত্রেরা হয়ে গিয়েছে লুণ্ঠিত...অস্থিরতা, অস্থিরতা, নগরীতে কেবলই অস্থিরতা। মধ্যরাতে শিক্ষকদের আবাসিকের দরজায় বুটের আঘাত; নত মস্তিষ্কে ভেঙে পড়ছে কপাট। সামনে দাঁড়ানো মৃত্যুদূত হয়ে আগত পাকিস্তানি জওয়ান। ‘অ্যায় তুম গুহঠাকুরতা হ্যায়?’ বাজখাঁই গলা। সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘হ্যাঁ, আমি সেইজন’। তারপর ঠা ঠা শব্দ... সন্ধ্যার টেবিল ধুলো জমে পড়ে আছে অবহেলায়Ñআড্ডারা মৃত, নেই স্বরের তপ্ততা। স্মৃতির মিনারে উড়ছে শোকের পতাকা। প্রাচীরের মতো ভেঙে যাচ্ছে মায়ের বুক। বাঙালি ছুটেছে রণাঙ্গনে। তারপর অগণন সন্ধ্যা শেষে একটি রাত এলো ঠকঠক শব্দ নিয়ে। সেই শব্দ গিলে খেলো অসংখ্য নাগরিক আলোকবর্তিকা, নিভিয়ে দিলো স্বপ্নের পিদিম। নেমে এলো রাজ্যের অন্ধকার, বাজতে লাগল হাহাকারের ভেঁপু। সেই অন্ধকার, সেই হাহাকারের বিকট ভেঁপুর ভয়াবহতা ভুলিয়ে দিতে দূর দিগন্তে নতুন সূর্য উঠল এক কোমল সকালে। সেই টেবিলে আবার জমে উঠল আড্ডা...কিন্তু নেই সেই সন্ধ্যার মুখগুলো...
আমি শামস সাইদ। আশির দশকের মাঝামাঝি কোনাে এক বসন্তে পিরােজপুর জেলার, ভাণ্ডারিয়ায় আমার জন্ম হয়েছে । One bright book of life, এমন একটি উপন্যাস লেখার স্বপ্ন আমার । ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয়েছে ক্রুশবিদ্ধ কলম। ২০১৮ সালে ‘ধানমন্ডি ৩২ নম্বর’ । জানি না কবে One bright book of life, এমন একটি উপন্যাস লিখতে পারব। তবে সারাজীবন চেষ্টা করে যাব। যেদিন এমন একটি উপন্যাস লিখতে পারব সেদিনের পর আর উপন্যাস লিখব না।