বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার আবির্ভাব রূপকথার চেয়েও বিস্ময়কর। বাংলাদেশ যখন অপশাসন ও মৌলবাদীদের দেশদ্রোহী-কর্মকাণ্ডে কেবলি পিছিয়ে যাচ্ছিল, সেই দুঃসময়ে তিনি শতধা বিভক্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং দলীয় প্রধান হিসেবে নিজেকে অধিষ্ঠিত করে নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর এই দুঃসাহসী কাজে সর্বদা পাশে থেকে সাহস জোগান তাঁরই আদরের ছোট বোন শেখ রেহানা।
শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার সাহসী ও যুগোপযোগী রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। বলতে দ্বিধা নেই, আধুনিক বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন তার পুরো কৃতিত্বই শেখ হাসিনা ও তার সহোদরা শেখ রেহানার। এক সময়ের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’হিসেবে যে বাংলাদেশকে বোঝানো হত, সেই দরিদ্র বাংলাদেশের সঙ্গে আজকের উন্নয়নমুখী, তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর, আধুনিক বাংলাদেশের রয়েছে আকাশ পাতাল প্রভেদ। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ যতখানি এগিয়েছিল সেখান থেকেই শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। পিতার অমর কীর্তির সঙ্গে নিজের রাষ্ট্রনায়কোচিত কৃতিত্ব যুক্ত করে বাংলাদেশকে তিনি নিয়ে যাচ্ছেন উন্নতির শিখরে। দেশের শান্তি প্রত্যাশী মানুষ জননেত্রী শেখ হাসিনার কর্মকাণ্ড সাদরে গ্রহণ করে নেয়। এ কারণেই আজকের আধুনিক বাংলাদেশে তিনি সর্বাধিক জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী। তিনি এখন বিশ্বনেতা শেখ হাসিনা আঁধারভেদী অগ্নিশিখা। তাঁর রাজসিক আবির্ভাবে বাংলার বুক থেকে সব আঁধার ক্রমে ক্রমে দূরীভূত হচ্ছে। শেখ হাসিনার সঙ্গে শেখ রেহানাও আঁধারজয়ী যোদ্ধা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বাংলাদেশের বরেণ্য সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও কলাম লেখক। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে তিনি ছোটবেলা থেকেই চেনেন-জানেন। তিনি অরূপকথার এই দুই বোনের সাহসীও রাজনৈতিক দূরদর্শীতার কথা এই গ্রন্থে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন।
আবদুল গাফফার চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার উলানিয়া গ্রামে এক রাজনৈতিক পরিবারে। পিতা হাজী ওয়াহেদ রেজা চৌধুরী অবিভক্ত বাংলার বরিশাল জেলা কংগ্রেস কমিটি ও খেলাফত কমিটির সভাপতি ছিলেন। অসহযােগ আন্দোলনে তিনি কারাবরণ করেন । গাফফার চৌধুরী যখন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র, তখন কবিতা লেখা শুরু করেন। ষষ্ট শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক নবযুগের ছােটদের পাতায় তার লেখা প্রথম ছাপা হয়। তারপর স্কুলের ছাত্র থাকা কালেই তার লেখা কলকাতার। সওগাত, ঢাকার সােনার বাংলা (অধুনালুপ্ত) পত্রিকায় ছাপা । শুরু হয় । এসএসসি পাশের পর তিনি ঢাকায় আসেন এবং সওগাত, মােহাম্মদী, মাহে লও, দিলরুবা প্রভৃতি মাসিক পত্রিকায় তার গল্প উপন্যাস ছাপা হতে থাকে। বাজারে তার বেশ কয়েকটি গল্প ও উপন্যাস, ছােটদের এডভেঞ্চার কাহিনী, প্রবন্ধ সংগ্রহ, স্মৃতিকথা রয়েছে এবং পাঠক সমাজে আদৃত হয়েছে। তিনি বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, ইউনেস্কো পুরষ্কার, শেরেবাংলা পদক, বঙ্গবন্ধু পদক এবং একুশের পদক পেয়েছেন এবং বিদেশেও নানা সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তিনি অমর একুশের গান-‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানাের’ রচয়িতা। বঙ্গবন্ধু-হত্যার উপর লেখা নাটক ‘পলাশি থেকে ধানমন্ডি’ দারুন জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তিনি বহু সাহিত্য মাসিক, সাপ্তাহিক ও দৈনিক পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন । বেতার ও টেলিনাটক লিখেছেন। তবে বর্তমানে তিনি একজন সার্বক্ষণিক কলামিষ্ট । ঢাকায় চারটি জাতীয় দৈনিকে এবং লন্ডন ও নিউইয়র্কে একাধিক সাপ্তাহিক পত্রিকায় তার রাজনৈতিক বিষয়ে লেখা কলাম নিয়মিত প্রকাশিত হয়। তার কলাম দেশে-বিদেশে বাংলাভাষাভাষী পাঠকের কাছে দারুন জনপ্রিয়। গাফফার চৌধুরী এখন লন্ডনে বাস করেন। তিনি এক ছেলে চার মেয়ের পিতা। বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্য ছবি নির্মাণের কাজে তিনি এখন ব্যস্ত।