ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে এলেন রাহাত খান। তার চোখ দুটো শিকার পাওয়াতে শ্বাপদের মতো লোভে চকচক করছে। তার হাতে মাছ মারার লোহার চিকন শিকওয়ালা বড় একটা সূঁচালো টেঁটা। কাল বিলম্ব না করে সেই টেঁটাটি দিয়ে তিনি এলোপাথাড়ি খুনিটার শরীরে আঘাত করা শুরু করলেন। ওর মরণ আর্তনাদে আকাশ-বাতাস একবার ফিক করে হাসল শুধু। শরীর থেকে অঝোরে বেরোতে লাগল লোহিতধারা। তারপর?... ভয়ে অন্তরাত্মা কাঁপছে তন্ময়ের। বিছানার এক পাশে জড়সড় হয়ে বসে আছে। প্রিয়তম স্ত্রীর ছিন্নভিন্ন লাশ পড়ে আছে ওর চোখের সামনেই। এ কী দেখছে ও! ভুল দেখছে না তো? ঘুমজড়ানো চোখ দুটো রগড়ে ভালো করে দেখার চেষ্টা করল। স্ত্রী জয়িতার কন্ঠনালী প্রবল আক্রোশে ছিঁড়ে ফেলেছে যেন কোনও পিশাচ! যে পিশাচ চুকচুক করে পান করেছে ওর উষ্ণ রক্ত। কে সেই পিশাচ?... চাকুটা ধরা ছিল ডেভিডের হাতে। কিন্তু খুনটা করেছে অন্য কেউ। শেষ পর্যন্ত চাচাকে খুন করার দায়ে কি ওকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হবে?... তরুণীর সম্ভ্রম নষ্ট করতে চাইছিল কিছু নরাধম। তাদের পথ আগলে দাঁড়াল বলিষ্ঠ এক যুবক। তরুণী সেই যুবকের নাম দিল-ব্যাঘ্রমানব। কেন?... প্রিয় বোনটিকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে নিতে এসে এ কোন নির্মমতার শিকার হলো রাতুল? প্রিয় বোনটি কীভাবে পারল, ভাইয়ের বুকটা এফোঁড়ওফোঁড় করে দেওয়ার জন্য প্রেমিকের হাতে ধারালো ছুরিটা তুলে দিতে?... এরকম অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আপনার অপেক্ষায়-রক্তপুরাণ। প্রিয় পাঠক, রক্তপুরাণের ভুবনে আপনাকে স্বাগতম।
রহস্যপত্রিকা’র অন্যতম জনপ্রিয় লেখক। ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি ‘সেবা প্রকাশনী’র এই জনপ্রিয় মাসিক পত্রিকায় লিখে চলেছেন। তিনি জন্মগ্রহণ করেন দক্ষিণ কাট্টলী, চট্টগ্রামে। পেশায় ব্যবসায়ী। লেখালেখি ও বই পড়া তার অন্যতম নেশা। ২৫ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখে চলেছেন। প্রথম আলো, সমকাল ও সংবাদ-এর ফান সাপ্লিমেন্ট আলপিন, প্যাঁচআল ও বাঁশ-এ কন্ট্রিবিউটর হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। বর্তমানে কন্ট্রিবিউটর হিসেবে যুক্ত আছেন, ইত্তেফাক-এর ঠাট্টা, যুগান্তর-এর বিচ্ছু ও খোলা কাগজ-এর বাংলা ওয়াশ-এ। এছাড়াও তিনি নিয়মিত লিখেছেন- আজাদী, সাপ্তাহিক এখন, সাপ্তাহিক ২০০০, সাপ্তাহিক, কিশোর তারকালোক, তারকালোক, আনন্দধারা, আনন্দভূবন, মৌচাকে ঢিল, উন্মাদ, অফলাইন, ও সাতবেলা-সহ বিভিন্ন পত্রিকায়। দীর্ঘসময় লেখালেখি করলেও একক ও যৌথ মিলিয়ে তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা মাত্র ১০টি। কারণ, বই প্রকাশ বা খ্যাতির আশায় তিনি লিখেননি কখনো। মানুষের জন্যই লিখেছেন- আজীবন মানুষের জন্যই লিখতে চান। ‘ভাইজান, আপনি কি পথ হারিয়ে ফেলেছেন? আমার সঙ্গে চলেন। আপনাকে পথ দেখিয়ে দেবো।’ বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কপালকুন্ডলা’ উপন্যাসেও প্রায় একই ডায়ালগ ছিল। নবকুমারকে জিজ্ঞাসা করেছিল কপালকুন্ডলা, ‘পথিক, তুমি কি পথ হারাইয়াছো?’ এই নতুন কপালকুন্ডলার আবির্ভাবে স্বস্তি পেলো ও। ভাবছিল, এ গভীর জঙ্গলে মেয়েটি কীভাবে, কোথা থেকে এলো? এতো বড় সাতাশ বছরের গাধা জঙ্গলের মধ্যে পথ হারিয়ে বসে আছে আর এতোটুকুন একটা পুঁচকে মেয়ে ওকে পথ দেখাবে? তবুও দ্বিধা না করে তার পেছন-পেছনে হাঁটা দিল। মেয়েটি যেভাবে হাঁটছে তাতে বোঝা গেল, পুরো জঙ্গলটাই তার খুব চেনা। তার সঙ্গে হাঁটতে-হাঁটতে অনেক প্রশ্নের মাধ্যমে জানতে পারল, এই বিরাট পৃথিবীতে তার আপন বলতে কেউ-ই নেই। জন্মের পর থেকে বাবা-মাকে দেখেনি সে। জঙ্গলের পাশে রেললাইনের ধারে সে এক বস্তিতে থাকে এক বিধবার সাথে। ... দিন-রাত অনেক পরিশ্রম করেও ঠিকমতো দু’বেলা পেট পুরে খেতে পারে না সে। মহিলাটি বিভিন্ন অত্যাচার করে তার উপর। এসব বলতে-বলতে মেয়েটির চোখে জল এসে গেল। দেখে ওর খুব মায়া হলো। একটুও দ্বিধা না করে বলল, ‘তুমি কি আমার সঙ্গে যাবে?’ বুঝতে পারেনি মানুষরুপী এক কালনাগিনীকে স্বেচ্ছায় নিজের ডেরায় নিয়ে যাচ্ছে ও...