প্রয়াত কথাসাহিত্যিক শহীদুল জহির কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে এ উপন্যাসে আবির্ভূত হয়েছেন। সমাজের একজন জীবিত সদস্য হিসেবে উত্তম-পুরুষে বয়ান করে গেছেন করোনাকালে সৃষ্ট মনঃসংকট, সামাজিক সংকট এবং শজারু-মুকুটধারী অণুজীবের সর্বগ্রাসী ধ্বংস ও মরণের কথা। ভ্রান্তিজাল-বিভ্রমে মোড়ানো তার মনোদার্শনিক জগতে হাজির হয়েছে পাশের ফ্ল্যাটের তরুণী শারমিন। তাদের চেতন-অবচেতনের অরূপ জগতের শিল্পরূপ সৃষ্টির প্রয়াসই আত্মার বিলাপ উপন্যাসে চিত্রিত হয়েছে। দুই চরিত্রের সমান্তরাল দূরত্বের কল্পবাস্তবতার ত্রিশটি পরিচ্ছেদ-স্রোত পাঠককে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সহজ-সরল নির্ভেজাল জীবনবোধের অতল থেকে শহীদুল জহির মনে মনে অনুভব করেন চীনা সহজিয়া দর্শন : ‘যখন থাকে না কোনো অভিলাষ তখনই পাওয়া যায় প্রশান্তি।’ সচেতন মনে নারীর প্রতি অভিলাষ নেই, বুঝতে পারেন তিনি। অবচেতন মনে কি তা গেড়ে বসে থাকে জগদ্দল পাথরের মতো ? জ্বালায়-পোড়ায় তুষের আগুনরূপে ? তার মনের ভেতরে গুমরে ওঠে : ‘যদি বা মুক্ত হও বাসনা থেকে তবে রহস্যকে পাবে’... মোহিত কামালের এ উপন্যাস পাঠকের চেতনাজগতে এক অলীক বিস্ময়বোধ সঞ্চারিত করে। আত্মার বিলাপ মূলত একটি মনস্তাত্ত্বিক, মনোসামাজিক, মনোদার্শনিক উপন্যাস; অর্থনৈতিক সংকট ও করোনাকালে বৈশ্বিক রাজনীতির উপন্যাস; অলীক বিস্ময়বোধ জাগানিয়া লৌকিক জগতের অলৌকিক বাস্তবতার উপন্যাস। সাহিত্যের প্রথাগত ফরমেট বা কাঠামো ভেঙে এ উপন্যাস এক নতুন ধারাকে উচ্চকিত করেছে। বিস্ময়ে আচ্ছন্ন কেন্দ্রীয় চরিত্রের আত্মার বিলাপ ছড়িয়ে গেছে পাঠক-হৃদয়ে, আকাশে-বাতাসে, বিশ্বজুড়ে।
তিনি একদিকে কথাসাহিত্যিক, অন্যদিকে মনোশিক্ষাবিদ। ২০১৮ সালে কথাসাহিত্যে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার। জাপানের ১২তম ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অব সাইকিয়াট্রির ফেলোশিপ প্রোগ্রামে নির্বাচিত হন বিশ্বের প্রথম সেরা ফেলো। জন্ম ১৯৬০ সালের ২ জানুয়ারি সাগরকন্যা সন্দ্বীপে। এমবিবিএস করেছেন সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে। তিনি সাহিত্য-সংস্কৃতির মাসিক ’শব্দঘর’র সম্পাদক এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (এনআইএমএইচ)-এর একাডেমিক পরিচালক। ২০১২ সালে তাঁর মনস্তত্ত্ব বিষয়ক গ্রন্থ ‘মানব মনের উদ্বেগ ও বিষন্নতা’ কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য করা হয়।