সময় বদলে গেছে। পরিবর্তিত এই সময়ে বদলে গেছে বাংলা গল্পের ধারাও। অতীতের সেইসব একমাত্রিক "কেবলই একটি গল্প" বলাও আর নেই বাংলা গল্পে। গল্প-বলার কৌশলের দিকে অনন্য-মনোযোগ দিতে গিয়ে অনেকেই হারিয়ে ফেলছেন নিখাদ একটি গল্পকেই।
কথাসাহিত্যিক ইফতেখার মাহমুদ এইদিক থেকে ব্যতিক্রম। গল্প বলার কৌশলে তিনি যতই অভিনবত্ব প্রয়োগ করেন না কেন কখনোই তিনি তাঁর গল্পে গল্পকে হারিয়ে যেতে দেন না। তাঁর গল্পে অবশ্যম্ভাবীভাবে থাকে একটি সুন্দর নিখাদ গল্প। যেমন "অসমাপ্ত সাঁকো" বইয়ের প্রথম গল্প 'ইন দ্য মেকিং' মূলত একটি নিরূপম প্রেমের গল্প, নিজের ক্ষতি করে হলেও অপরের কাছে অতি-প্রিয় হতে চাওয়ার এক কৌশলের গল্প।কিন্তু এই পুরো গল্পটাই লেখা হয়েছে মঞ্চের ধাঁচে, যা পাঠক পড়া মাত্রই বুঝতে পারবেন এ এক স্বতন্ত্র লেখা। আবার 'নদী নিয়ে আসা' গল্পটি মাথার ভেতরের গল্প। শহুরে কয়েকজন লোক মাথার ভিতর নদী নিয়ে বসে আছে, এই গল্প তাদের কাছে আসার গল্প। পড়তে পড়তে পাঠক যেন নিজের অজান্তেই ওই সব নদীওয়ালাদের একজন হয়ে শহুরে যান্ত্রিকতার মাঝে থেকেও গায়ে নদীর নরম হাওয়ার পরশ পাবেন।
গল্পপাঠ যেহেতু ঘটনার সাথে পরিচিত হওয়া নয় কেবল, এই পাঠ যে তারও অধিক যে গল্পের জীবন ঘিরে তার ভেতরে বলা, না-বলা কথাগুলোকে বুঝতে পারার অনির্ধারিত যাত্রা, সেই অমোঘ সত্য মনে রেখে অসমাপ্ত সাঁকো পাঠের আমন্ত্রণ রইল। অসমাপ্ত সাঁকো আসলে যাত্রাবিরতির নিয়তিকে মনে করিয়ে দেয়ার আয়োজন। স্মরণে স্বাগত।
লেখক পরিচিতিঃ ১৯৮০ সালের ৬ মে জন্ম, রংপুরে, নানাবাড়িতে। স্কুল নাটোরে, এরপর রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ, তারপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়া। ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। শিক্ষকতার ভেতর দিয়ে বাংলাদেশী জীবনটাকে খুঁড়তে থাকা। লেখার ভুবনে বাস করেও অ-লেখাকে জীবন জ্ঞান করা সম্ভব—এইটুকু স্বীকার করি। বন্ধু, স্বজন আর অচেনাকে নিয়ে মহাশূন্যের কেন্দ্রে বসে জীবন অনুভব করাই এখনকার কাজ।