১৯৮০-৯০-এর দশকের গল্প। ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর সামাজিক নিষ্পেষণে জর্জরিত এই পরিবারটির করুণ কাহিনি পড়লে আপনার চোখ ভিজে উঠবে। আনমনে আপনি বলতে থাকবেন-এই গল্প আপনার আশেপাশেরই, কিংবা আপনার নিজেরই! কারণ, গল্পগুলো জীবনের। অথবা হতে পারে জীবনটাই গল্পের। লেখক যখন বলেন-চোখ লুকানোর জন্য আকাশের দিকে তাকালাম একবার। আবার নিচের দিকে। আকাশের দিকে তাকালে শূন্যতা দেখি। নিচের দিকে তাকালে মাটি। পায়ের তলায় মাটি তার অস্তিত্ব জানান দেয়। ছেঁড়া জুতা ভেদ করে পা আর মাটি মিলেমিশে এক হয়ে যায়। কিংবা যখন বলেন-অভাবের মাঝেও কোনো কোনো বেলা আমাদের ভাত জুটত। আম্মা সেদিন সবাইকে একসঙ্গে বসাতেন। টিনের থালা নিয়ে আমরা বসে যেতাম আম্মাকে ঘিরে। নারকেল মালার চামচ দিয়ে মেপে মেপে আমাদের পাঁচ ভাইবোনের থালায় ভাত বেড়ে দিতেন আম্মা। এ ক্ষেত্রে রীতিমতো গণিতবিদ ছিলেন তিনি। কিন্তু থালার একপাশে পড়ে থাকা ভাতগুলো আমাদের দিকে যেন করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত। আমরা সেই সামান্য ভাত তৃপ্তি নিয়ে খেতাম। আম্মা শূন্য হাঁড়িতে মালার চামচের শব্দ করে বলতেন, ভাত আর নিবি? আমরা বলতাম, নাহ্, পেট ভরে গেছে। ক্ষুধা নিয়ে আমাদের এই লুকোচুরি আমরা সবাই বুঝতাম, কিন্তু কেউ কাউকে বোঝাতে চাইতাম না। -তখন জীবন আর গল্প মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
জন্ম ১৯৭৩ সালে নােয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে। লেখালেখির শুরু ৯০-এর দশকে। মানুষকে নিয়ে ভাবনা করতে তিনি ভালােবাসেন। ভাবুক মানুষ মৌচাকের মতো। ওদের দিকে ঢিল ছুড়লে খবর আছে। কথার মৌমাছি ভনভন করে আপনাকে ঘিরে ধরবে। মানুষের সঙ্গে মেশী তার স্বভাব, মানুষের ভেতরের গল্প জেনে নেওয়া তাঁর শখ। তার ভাঁড়ারে তাই অনেক গল্প। এই সব গল্প নিয়ে তিনি ভাবেন। বিচিত্র মানুষের বিচিত্র গল্প তাকে টোকা দেয়, তার মৌচাকে আঘাত লাগে। গল্পের মৌমাছিরা ভনভন করে বেরিয়ে আসে। পেশায় শিক্ষক মাইনুল এইচ সিরাজীর লেখার ভিন্ন একটা সুবাস আছে। কিংবা ভিন্ন একটা স্বাদ। সরল চিন্তা, সাবলীল ভাষা, রসবােধ—এই স্বাদ-সুবাসের সঙ্গে মজাদার মসলা হিসেবে যুক্ত হয়।