লেখকের জবানবন্দী ‘আস্তিক ও নাস্তিক্যবাদের দর্শন’ গ্রন্থটিতে ব্যক্তিগত চিন্তা-চেতনার বহিঃপ্রকাশ না ঘটিয়ে বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের আলোকে আস্তিক ও বিভিন্ন রেফারেন্সের মাধ্যমে নাস্তিকতার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। সত্যের উন্মোচনে সুন্দরের বর্ণনা, মানব কল্যাণের স্বরূপ উন্মোচনের ক্ষেত্রে তুলনামূলক বিশ্লেষণের উপর গুরুত্বারোপ করাই হচ্ছে মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। ধর্মীয় অপব্যাখ্যা এবং নাস্তিকদের স্বেচ্ছাচারি যুক্তি কিন্তু মানব জাতির কল্যাণকামীতার ধারক-বাহক নয়। ধর্মীয় সঠিক পথের দিক নির্দেশনা মানব সমাজের কল্যাণের ধারক-বাহক। গ্রন্থিত হয়েছে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান, যৌক্তিকতার আলোকে বিশ্লেষণ, স্বাধীন চিন্তাশক্তির সাথে ধর্মীয় রীতিনীতি কতটুকু সাদৃশ্য কিংবা বৈসাদৃশ্যের প্রেক্ষিত। যুক্তি দিয়ে ধর্মীয় আদেশ-নিষেধ যেমন খন্ডন যোগ্য নয়, পাশাপাশি বল প্রয়োগে সব মানুষকে রাতারাতি একটি নির্দিষ্ট ধর্মের আদর্শে একীভূত করা সম্ভব নয়। ধর্মীয় আদর্শের মানবিকতায় মানুষ এবং সমাজ সঠিক পথ অন্বেষণে ব্যর্থ হলেইতো যুক্তি তর্কের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে নাস্তিকতার দিকে ধাবিত হয়। প্রেক্ষিত বিবেচনায় কেউ যদি ইসলাম ধর্মের অনুসারী না হয়ে সে যদি নাস্তিক হন এবং ইসলাম অবমাননাকর রীতি-নীতি বিষয়ে মন্তব্য না করেন, তাহলে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বেলায় ইসলাম যেমন উদার ও মানবিক তদ্রুপ একজন নাস্তিকের ক্ষেত্রেও একই ব্যবহার প্রযোজ্য নয় কি? কোনো ধর্মই কোনো ধর্মের প্রতিবন্ধক নয়, কারণ কোনো ধর্ম কোনো ধর্মের বিধি-বিধান নিয়ে সমালোচনা করে না, এ বিষয়টি নাস্তিক্যবাদের ধারক-বাহকদের একটু চিন্তা করা প্রয়োজন বলে উল্লেখিত গ্রন্থে আলোচিত হয়েছে। এ গ্রন্থে যাবুর, তাওরাত, ইঞ্জিল, ত্রিপিটক, ভগবদ, গীতা, বেদ, আল কোরআন ও সহীহ হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে আস্তিক ও নাস্তিক প্রাসঙ্গিক আলোচনা করা হয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশে ৯০ শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী কাজে-কাজেই সে বিষয়টিও অধিক প্রাধান্যের দাবীদার। ইসলাম ধর্মের আদেশ-নিষেধ (হারাম-হালাল, পালনীয়-বর্জনীয়) বিষয়ে যদি কারো দ্বিমত থাকে এবং তা যদি ভঙ্গুর যুক্তি উপস্থাপনের নামে তর্ক-বিতর্ক জুড়ে দেওয়া হয়, সন্দেহের নিক্ষিপ্ত তীরে জর্জরিত করা হয়, তাহলে তাকে নিশ্চিতভাবে উগ্র নাস্তিক হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। আর যাই হোক উগ্রতার জায়গা ইসলাম ধর্মে নেই বলেই আমি জানি। ধর্ম পালনে ব্যক্তি নিজস্বতা রয়েছে, যারা মুক্ত চিন্তার চর্চা করেন তাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে স্বাধীনতা মানে অন্যের অধিকার খর্ব করা নয়। অন্যের বিশ্বাসের উপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দেওয়ার নাম ইসলাম নয় এবং অনুরূপভাবে তা নাস্তিকতাও নয়। ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা নামাজ পড়বে এটা তাদের বিশ্বাসের সাথে ফরজ পালন। কারো পছন্দ না হলে পড়বে না কিন্তু নামাজরত মুসল্লিদের নিয়ে কটুক্তি করা সমোচিত নয় এবং নামাজ যিনি পড়েননি তাকে জোর করে নামাজ পড়ানো যেমন ইসলাম নয়, পাশাপাশি নামাজে বাধা দেওয়াও সমোচিৎ নয় বলে আমার ব্যক্তি ধারণা ।
সৈয়দ রনো ১৯৭৮ সালের ১ জানুয়ারি মানিকগঞ্জ জেলাধীন ঘিওর উপজেলার বড়টিয়া ইউনিয়নের হিজুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা- আলহাজ সৈয়দ আব্দুল লতিফ, পেশায় তিনি স্কুল শিক্ষক এবং মুসলিম বিবাহ রেজিস্ট্রার ও কাজী এবং মাতা- আলেয়ার নাহার হাওয়া। পরিবারে তিন ভাই এবং পাঁচ বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা জীবন কেটেছে নিজ গ্রাম হিজুলিয়ায়। ঘিওর উপজেলার আঞ্চলিক উচ্চ বিদ্যালয়,ফুহাড়া থেকে এসএসসি ও ঘিওর সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর উচ্চশিক্ষা প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল এল বি, শান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাংলায় এম.এ. পাস করেন। এরপর তিনি আইনবিদ্যায় স্নাতক এল.এল.বি ও বি.এড ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম এড পাশ করেন। ধর্মের প্রতি দুর্বল থাকায় তিনি আরবি শিক্ষায় আলিম পাশ করেন। ২০১৩ সালে লোকসংস্কৃতি -তে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম এড ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবন : বাল্যকাল থেকেই তিনি সাহিত্য অনুরাগী। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যায়নরত অবস্থায় প্রথম কবিতা প্রকাশ হয় মানিকগঞ্জের স্থানীয় আলোর বাণী পত্রিকায়। এরপর থেকে নিয়মিত বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তার কবিতা, ছড়া, পদ্য, গল্প, প্রবন্ধ, ভ্রমন কাহিনী, নিবন্ধ, রম্যরচনা প্রকাশ হতে থাকে। মঞ্চ নাটক লিখে এবং অভিনয় করে নব্বই দশকে সুনাম এবং সুখ্যাতি কুড়াতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি অনুশীলন সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন বর্তমানে যার নাম পরিবর্তন হয়ে অন্যধারা সাহিত্য সংসদ হয়েছে, এই সংগঠনের তিনি প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। ছাব্বিশ বছর যাবত সাপ্তাহিক অন্যধারা যা বর্তমানে দৈনিক অন্যধারা পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এছাড়া বর্তমানে জাতীয় দৈনিক আলোকিত প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক।