নিজের গ্রাম এখন অনীকের কাছে ‘দূরগ্রাম, গ্রামের বাড়ি আর গ্রামের বাড়ির উঠোন।’ সেই গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসে বিরতিহীন দুর্ঘটনার মত ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি অবলোকন করতে করতে সে নিজেই ঘটনার শিকার হয়ে পড়ে। সে দেখে তার কৈশোরের বন্ধু আবির ও পৃথ্বী প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, পরস্পরের শত্রু হিসেবে উপনীত। আবির রাজনৈতিক কর্মী ও মোহমুক্ত; পৃথ্বী এনজিও কর্মী বলে স্বার্থ দ্বারা প্রণোদিত। তাদের দ্বন্দ্ব দোলাচলের ফাঁক দিয়ে ধর্মের আলোয়ান গায়ে প্রবেশ করে মাওলানা রমিজ। বিনা বিরোধিতায় সে গ্রামটিকে ঠেলে দেয় মৃত্যু ও অগ্নুৎপাতের দিকে। ডানাকাটা হিমের ভেতর বাংলাদেশের প্রথম উপন্যাস যেখানে এনজিওকে শনাক্ত করা হয়েছে একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সমাজ বৈজ্ঞানিক অর্থে তা প্রতিষ্ঠান, কিন্তু তার আত্মপ্রকাশ কখনো সামাজিক কখনো অধিরাজনৈতিক। তাই গ্রাম রূপান্তরণের ভূমিকায় তারা মাওলানা রমিজ বা হাশেম প্রামাণিকের কাছে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়ায় বটে, কিন্তু তাদের অঙ্গীভূত করার পাশাপাশি সমাজ বদলের রাজনীতিকে বশীভূত করতেও পিছপা হয় না। ফলত আবির ছাত্রদের ছেড়ে মরিয়া হয়ে ওঠে রিক্তামাতা দীঘিতে জেলেদের অধিকার অক্ষুণœ রাখতে। আর অন্যদিকে তার শৈশবের সহপাঠিনী পৃথ্বী দৈবক্রমে এনজিও’র চাকরিসূত্রে তার বিরুদ্ধ পক্ষে এসে দাঁড়ায়। এসব কিছুর ভেতর অনীক কখনো রাজনীতি-নিস্পৃহ, কখনো নিস্পৃহতার খোলস ভেঙে সাধারণ মানুষের মত প্রত্যাশী। কিন্তু তার জীবনেও এমন বিকেল আসে, এমন সন্ধ্যা আসে যে বিকেল ও সন্ধ্যা পেরিয়ে সে প্রবেশ করে উন্মূল এক রাতের ভেতর। উন্মূল রাতে নিজের আকস্মিক উদ্ঘাটনে হতবিহ্বল অনীক আবিরদের পার্টির দোলাচলকে ঠেলে নিজেই নেতৃত্ব দেয় জেলেদের। রাজনীতির ফাঁক-ফোকড় না-জানা অনীককে বেঁধে ফেলে অদৃশ্য আইন। আবির পালিয়ে যায়। যে পৃথ্বীকে ভালোবেসে না বেসে অচ্ছুত স্পর্শ থেকে আড়াল করে রেখেছিল অনীক সেই পৃথ্বীও অতঃপর অনন্ত মৃত্যুর মত অনঙ্গ-স্পর্শে কেঁপে উঠতে থাকে। তারপ গল্প হয় সব কিছু; গল্প হওয়ার ভেতর দিয়ে সেই গল্প তৈরি করে নীল কমল লাল কমলের বিভ্রমতা, রূপকথার মোহাচ্ছন্ন প্রাচীনতা।
জন্ম : ১৩৭১ বঙ্গাব্দ, ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দ ; সিরাজগঞ্জের সলপ জনপদের রামগাঁতী গ্রামে। মা : হামিদা সুলতানা। বাবা : চৌধুরী ওসমান। পেশা : সাংবাদিকতা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা : এমএসএস [সমাজ বিজ্ঞান]; রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ : ডানাকাটা হিমের ভেতর (উপন্যাস, ১৯৯৬)। অন্যান্য উপন্যাস : আমরা হেঁটেছি যারা, চরসংবেগ, অন্ধ মেয়েটি জ্যোৎস্না দেখার পর, মোল্লাপ্রজাতন্ত্রী পবনকুটির, তা হলে বৃষ্টিদিন তা হলে ১৪ জুলাই, আমাদের চিঠিযুগ কুউউ ঝিকঝিক, মৃত্যুগন্ধী বিকেলে সুশীল সঙ্গীতানুষ্ঠান, নীল কৃষ্ণচূড়ার জন্মদিনে, শাদা আগুনের চিতা, অন্তর্গত কুয়াশায়, যারা স্বপ্ন দেখেছিল। স্বীকৃতি : ‘মৃত্যুগন্ধী বিকেলে সুশীল সংগীতানুষ্ঠান’ গ্রন্থের জন্যে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কথাসাহিত্য পুরস্কার (২০১২), লোক সাহিত্য পুরস্কার (২০১৩), জীবনানন্দ সাহিত্য পুরস্কার (২০১৪), ‘শীতের জ্যোৎস্নাজাবলা বৃষ্টিরাতে’ গ্রন্থের জন্যে প্রথম আলো বর্ষসেরা সৃজনশীল গ্রন্থ পুরস্কার (১৪২১), কিশোর উপন্যাস ‘পাতার বাঁশি বাজে’র জন্যে শিশু একাডেমি পুরস্কার (১৪২১) এবং কথাসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার (২০২০)।