কিছু কিছু কবিতা পাঠে অনির্বচনীয় আনন্দের সঞ্চার হয় পাঠকের দেহমনে। ধীরে ধীরে তা তীব্র ক্রিয়া করে অন্তর্জগতে। সেরকম কবিতারই সমাবেশ ঘটেছে রাম চন্দ্র দাসের ‘নদীর কাছে শেখা জীবনের পাঠ’ কাব্যগ্রন্থে। অথচ বিস্ময়করভাবে আমাদের চারপাশের দৈনন্দিন ঘটনাবলির সহজসরল প্রকাশ প্রতিটি কবিতায়। তবে কোনো কবিতাই সাদামাটা নয়; বরং তীব্র জীবনবোধকে উসকে দিয়ে রুচির স্তর উন্নত করার প্রয়াস পরিলক্ষিত হয়। মানবজীবনে করোনার প্রভাব, বিত্ত-বৈভব ও ক্ষমতার মোহজালে আটকে অহংকারে মত্ত হয়ে পড়া, নিপীড়ন ও অত্যাচারের কবলে থাকা অসহায় বিত্তহীনের কথা যেমন সরস ও ব্যাঙ্গাত্মকভাবে ফুটে উঠেছে, তা সত্যিই অতুলনীয়। সাংসারিক তামাশা, শিক্ষাদান পদ্ধতির অসংগতি এসব নিয়ে হাস্যরসাত্মক কবিতার পাশাপাশি জীবনবোধের সূক্ষ্ম ব্যঞ্জনার পরশ-সমৃদ্ধ কবিতার সমাহার ঋদ্ধ করেছে কাব্যগ্রন্থটিকে। ‘মা’ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ, সেটি উপলব্ধি ও অনুধাবনের সুযোগই ঘটে না অনেকের জীবনে। ‘মা’কে নিয়ে আবেগঘন কবিতা পাঠে যেকোনো ব্যক্তির মনে পুলক, দোলা ও বেদনার সঞ্চার ঘটবে- এটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। প্রত্যেকটি কবিতা আবৃত্তিযোগ্য হওয়ার ফলে আবৃত্তিশিল্পীদের জন্য এই গ্রন্থটি অতি প্রয়োজনীয় গ্রন্থ হয়ে উঠবে অচিরেই। রঙ্গ-ব্যঙ্গ ও সিরিয়াস বিষয় নিয়ে কবিতাগুলো বহুমুখী। ফলে পাঠক, আবৃত্তির শ্রোতা ও বোদ্ধাজন সবার কাছেই এই কাব্যগ্রন্থটি আদরনীয় না হয়ে পারে না। - মীর বরকত বিশিষ্ট আবৃত্তি শিল্পী, প্রশিক্ষক ও নির্দেশক অধ্যক্ষ, কণ্ঠশীলন
জন্ম : ১৫ মার্চ, ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দ। মা সন্ধ্যা রানী দাস, বাবা নারায়ণ চন্দ্র দাস। জন্মস্থান : খাগজানা, উপজেলা : কালুখালি, জেলা : রাজবাড়ী। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা গ্রামের খাগজানা স্কুলে। অতঃপর পাংশা জর্জ হাই স্কুল ও পাংশা কলেজ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে ¯œাতকসহ মাস্টার্স এবং ইংল্যান্ডের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। ইচ্ছে ছিল শিক্ষক হবার, তা হয়নি। নবম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। মন্ত্রণালয় ও মাঠ প্রশাসনে বিভিন্ন পদে চাকরির এক পর্যায়ে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক হিসেবে তিন বছরেরও অধিককাল কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে ঢাকায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হন। এরপর বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার ও বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। একজন বহুমুখী প্রতিভাধর ব্যক্তি রাম চন্দ্র দাস একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, গীতিকার, সুরকার ও সংগীতশিল্পী। লেখালেখির শুরু কবিতা দিয়েই। ছাত্রজীবন থেকে এ পর্যন্ত বেশ কিছু পত্রপত্রিকায় তাঁর লেখা কবিতা ও গান প্রকাশিত হয়েছে। নিজের লেখা অসংখ্য গানে নিজেই সুর করে সকণ্ঠে গেয়েছেন শিল্পী রাম চন্দ্র দাস। তাঁর লেখা গান, ‘রাম সঙ্গীত’ নামে পরিচিত। তিনি বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভির তালিকাভুক্ত গীতিকার ও সংগীতশিল্পী। ইতোপূর্বে ‘আমি ছুঁয়েছি স্বাধীনতাকে’, ‘শ্যামল সন্ধ্যার কাব্য’, ‘যদি এই বাংলায় আসো’, ‘দাবায়ে রাখতে পারবা না’ এবং ‘নদীর কাছে শেখা জীবনের পাঠ’ নামে তাঁর পাঁচটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ‘বিবাহ বিসংবাদ’ রাম চন্দ্র দাসের প্রথম গল্পগ্রন্থ।