ভূমিকা জীবনানন্দ-উত্তরকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি শামসুর রাহমান (১৯২৯-২০০৬)। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় বিচরণ করলেও তাঁর সিদ্ধি ও খ্যাতি মূলত: কবিতায়। কাব্য-গ্রন্থের সংখ্যায়, কবিতার বিষয়-বৈচিত্র্যে এবং প্রকরণের প্রাতিস্বিকতায় শামসুর রাহমান অভিনবত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি মানবতার কবি। আমাদের ভাষা-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারাবাহী কবিতার রূপকার। দশক-বিবেচনায় বাংলা কাব্য-সাহিত্যে তাঁর আবির্ভাব পঞ্চাশের দশকে। সাতচল্লিশ-এ ভারত বিভক্তির ফলে পূর্ব-পাকিস্তান তথা বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যে ধারাবাহিক পরিবর্তন ও ঘটনাপ্রবাহ অব্যাহত ছিল। শামসুর রাহমান সে সবের প্রত্যক্ষদর্শী। সংবেদনশীল কবির মানস-ভূগোল নির্মাণে সমসাময়িক নানা ঘটনা প্রবল ভূমিকা রেখেছে। তিনি সমকাল ও শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে কাব্যচর্চা করেছেন। ফলে ’৫২-এর ভাষা-আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা-আন্দোলন, ছয় দফা ও এগারো দফা-আন্দোলন, ’৬৯-র গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর সাধারণ নির্বাচন, ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্যময় ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনি শিল্প-সফল কবিতা লিখেছেন। ব্যক্তি শামসুর রাহমান এবং তাঁর কবিতার নানামাত্রিক প্রসঙ্গ-প্রকরণ নিয়ে এযাবৎ কম লেখা হয়নি। শৈশবে পাঠ্যবইয়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্যের ছাত্র হওয়ার সুবাদে শামসুর রাহমানের কবিতা পড়েছি। ২০০৬ সালে শামসুর রাহমান যখন মৃত্যুবরণ করেন। তখন আমি মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। মনস্থির করি 'শামসুর রাহমানের কবিতা' নিয়ে গবেষণা করবো। ২০০৯ সালে 'শামসুর রাহমানের কবিতায় নগরচেতনা' শিরোনামে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এম. ফিল. গবেষণায় ভর্তি হই। গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস এম আবু দায়েন স্যার। এই বিষয়ের ওপর ২০১৪ সালে এম. ফিল. ডিগ্রি অর্জন করি। এভাবেই বোধ-বিন্যাসের জায়গা থেকে শামসুর রাহমান এবং তাঁর কবিতার সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত হই। গবেষণার বিষয় ছাড়াও ইতোমধ্যে শামসুর রাহমান এবং তাঁর কবিতার নানাপ্রসঙ্গ নিয়ে অসংখ্য প্রবন্ধ লিখেছি। 'শামসুর রাহমানের কাব্যস্বর' মূলত সেসবের সম্মিলিত গ্রন্থরূপ। গ্রন্থের শেষদিকে কবির গুরুত্বপূর্ণ কিছু সাক্ষাৎকার সংযোজিত হয়েছে। বিশ্বাস করি, ব্যক্তি শামসুর রাহমান এবং তাঁর কবিতার নানা প্রবণতা সম্পর্কে আগ্রহীজন এই বইটি পড়ে উপকৃত হবেন। দেশে-বিদেশে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে বইটি সমাদৃত হবে। বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য-বিভাগে বইটি রেফারেন্স বা সহায়ক বই হিসেবে উপকারে আসতে পারে। সর্বোপরি, কোভিদ ২০১৯-এর দুর্দিনে বইটি প্রকাশের ভার গ্রহণ করে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন প্রিয়জন শ্যামল পাল। যিনি বাংলাদেশের প্রথম সারির প্রকাশনা সংস্থা 'পুথিনিলয়'-এর কর্ণধার। তাঁকে আন্তরিক ধন্যবাদ। বইটি সমঝদার পাঠকের হাতে হাতে পৌঁছে যাক এই প্রত্যাশা রাখি। সবার মঙ্গল হোক।