প্রত্যেক মানুষেরই একটা সাহিত্য মন রয়েছে। এজন্য জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে সবাই কমবেশি চর্চা করে গল্প কবিতা লেখার, সাহিত্য রচনার। কেউ কেউ বজায় রাখেন এই ধারাবাহিকতা, আবার কেউ কেউ নানা ব্যস্ততায় দূরে সরে যান চর্চা থেকে। দূরে সরে গেলেও সাহিত্য মনটা মনের মধ্যেই থেকে যায়, আর ড্রয়ারের তলদেশে কিংবা পুরাতন হলদে কাগজের স্তূপের নিচে রয়ে যায় আদর ভালোবাসার কবিতা কিংবা ছোটোগল্পগুলো। অসাধারণ ঐ ছোটোগল্পগুলো ছাপার অক্ষরে দেখার স্বপ্নপূরণের শুভযাত্রা ’ছোটোগল্প সমাহার’। ছোটোগল্প সমাহারে রয়েছে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের ৫২ জন লেখকের মোট ৫২টি ছোটোগল্প। একটি জেলা থেকে মাত্র একজন লিখেছেন, এমনটাই নিয়ম ছিল। প্রত্যেকটি গল্পই মৌলিক এবং সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে লেখা। গল্পগুলো কেউ সম্প্রতি লিখেছেন, কেউ হয়তো লিখেছেন অনেক আগে আবার কেউ হয়তো একটিই লিখেছেন সারাজীবনে। গল্পগুলোতে আমাদের পারিবারিক, সামাজিক ও পারিপাশির্^ক দৈনন্দিন জীবনের নানাবিধ বিষয় দারুণভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, কোনো কোনো গল্পে মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ অবাক করার মতো, আবার কোনো কোনো গল্পে রয়েছে থমকে যাওয়ার মতো চমক। আশা করছি গল্পগুলো ভালো লাগবে পাঠকদের, স্থান করে নেবে স্মৃতির চিলেকোঠায়। ‘ছোটোগল্প সমাহার’ একটি চলমান সাহিত্য কার্যক্রম। এবার প্রথম সংকলনটি বের হচ্ছে। আগামীতে বের হবে দ্বিতীয়, তারপর তৃতীয়, তারপর চতুর্থ... এভাবে চলতেই থাকবে। দুই বাংলার প্রত্যেক জেলা থেকে একজনের ছোটোগল্প ছাপানো হবে সংকলনে। ভবিষ্যতে কোনো একদিন, যখন আমরা কেউ থাকব না, তখন এই ছোটোগল্প সমাহারই মনে করিয়ে দেবে, আমরা ছিলাম, ছিলাম একসাথে একবিন্দুতে, আর... আর... আমাদের সবার একটা মন ছিল, মনটা ছিল সৃষ্টিশীলতা, সৃজনশীলতা আর সাহিত্যের মন।
লেখক মোশতাক আহমেদ এর জন্ম ১৯৭৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর, ফরিদপুর জেলায়। পেশায় একজন চাকুরিজীবী হওয়া সত্ত্বেও লেখালেখির প্রতি তাঁর আগ্রহ প্রচুর। এ পর্যন্ত সায়েন্স ফিকশন নিয়েই সবচেয়ে বেশি লিখেছেন। বাংলা সায়েন্স ফিকশন জগতে তার পোক্ত একটি অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও মোশতাক আহমেদ এর বই সমূহ ভৌতিক, প্যারাসাইকোলজি, মুক্তিযুদ্ধ, কিশোর ক্ল্যাসিক, ভ্রমণ ইত্যাদি জঁনরাতে বিভক্ত। যেকোনো একটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতেই পছন্দ করেন। মোশতাক আহমেদ এর বই সমগ্র সংখ্যায় পঞ্চাশ পেরিয়েছে। তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই ছিল ‘জকি’। এটি একটি জীবনধর্মী উপন্যাস। ২০০৫ সালে এটি প্রকাশিত হয়। মোশতাক আহমেদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথমে ফার্মেসি বিভাগে, পরে আইবিএতে। পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপরাধবিজ্ঞান থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। পড়াশোনার খাতিরেই হোক বা কর্মজীবনের তাগিদেই হোক, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অনেক ভ্রমণ করেছেন। সেসব ভ্রমণকাহিনীর আশ্রয়ে তাই ক্রমেই সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর লেখা ভ্রমণকাহিনীগুলোও। তাঁর সৃজনশীল কর্মকাণ্ড শুধু লেখালেখিতেই গণ্ডিবদ্ধ নয়। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাজারবাগের পুলিশ ও পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর মধ্যে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। সে ঘটনার ওপর ভিত্তি করে মোশতাক আহমেদ ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এটি ২০১৩ সালের মার্চ মাসে মুক্তি পায়। তাঁর পুরস্কারের ঝুলিতে এ পর্যন্ত রয়েছে ২০১৩ সালের কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের ছোটদের মেলা সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের কৃষ্ণকলি সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৫ সালের সিটি আনন্দ আলো পুরস্কার এবং সর্বশেষ সংযুক্তি হিসেবে সায়েন্স ফিকশন বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭।