দার্জিলিং শব্দটি এসেছে সংস্কৃত থেকে। যার অর্থ দুর্জয় লিঙ্গ। হিমালয়সংলগ্ন এই দার্জিলিংকে তুলনা করা হয় অদম্য ক্ষমতার অধিকারী শিবের সঙ্গে। যে হিমালয় শাসন করে। একে বজ্রপাতের শহরও বলা হয়। হিমালয় পর্বতে ধাক্কা খেয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে যাওয়া মেঘ ফিরতিপথ ধরে। ওই ধাক্কাধাক্কিতে সেখানে প্রচুর বৃষ্টি হয়, বজ্রপাত হয়। এটি একটি মনোরম শৈলশহর। যা চায়ের জন্য বিখ্যাত। ব্রিটিশরা দার্জিলিংকে সাজিয়েছিল নিজেদের মতো করে। যুক্তরাজ্যের শীতল আবহাওয়ার সঙ্গে দার্জিলিঙের মিল ছিল। ইংরেজরা যখন ভারতবর্ষ শাসন করে, তখন তাদের স্ত্রী-সন্তানদের ওখানে রাখত। যে কারণে দার্জিলিং উন্নত অবকাশ যাপনকেন্দ্রে পরিণত হয়। গড়ে ওঠে নামিদামি ইংরেজ ঘরানার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাঙালি তথা ভারতবর্ষের সামর্থবান লোকেরা সন্তানদের ভালো পড়াশোনার জন্য সেখানে পাঠাত। সন্তান দার্জিলিঙে পড়ছেÑ এটি ছিল অভিজাত সমাজের একটি গর্বের বিষয়। দার্জিলিং ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য একটি আকর্ষণীয় জায়গা। দার্জিলিং এবং কালিম্পঙের মাঝ সীমায় রয়েছে তিস্তা। তিস্তার সঙ্গে রাংগিত নদী মিশে তৈরি হয়েছে ত্রিবেণি। ত্রিবেণি ভিউ পয়েন্ট যে-কোনো মানুষের মনে নাড়া দেবে। কালিম্পং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র। কালিম্পং অর্থÑ যে শৈলশিরায় মানুষ খেলা করে। সেখানকার পাইন ভিউ ক্যাকটাস নার্সারি জগদ্বিখ্যাত। তিস্তার তীরে পাহাড়ের ওপর গড়ে উঠেছে দেলো বাইও বোটানিক পার্ক; সেখান থেকে খুব সহজেই তিস্তা এবং কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মেলে। হিমালয় থেকে নেমে যাওয়া সর্পিল তিস্তা এবং পাহাড়ের গায়ে আটকে থাকা সাদা মেঘ মন ভরানো সুধার মতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাওয়া পরিবর্তনের জন্য কালিম্পং যেতেন। গৌরীপুর হাউজে থাকতেন তিনি। ময়মনসিংহের গৌরীপুরের জমিদার বীরেন্দ্রকৃষ্ণ রায় চৌধুরী অবকাশ যাপনের জন্য ওই বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন। ওখানকার মর্গান হাউজও বিখ্যাত। বাড়িটি এখন হোটেল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মর্গান নেই, নেই তাঁর স্ত্রীও। কিন্তু ওই নিঃসন্তান ইংরেজ ব্যবসায়ী দম্পতি এখনো নিঝুম মধ্যরাতে ওই বাড়ির অতিথিদের দেখভাল করতে বের হন!