সকাল থেকেই মেঘেদের অহেতুক ছোটাছুটি, অতিরিক্ত দাপাদাপি। দুপুর হতে না হতেই গাঢ় বর্ষণেরর উথাল পাথাল জল। উঠান গড়িয়ে দেূ্র মাঠের সবুজ ঘাসের উপর আধ হাঁটু জল। আগে যে দল বাধা হাঁসেরা বৃষ্টির প্রথম প্রহরে হেসেহেসে ছুটোছুটি করছিল এখন গম্ভীর নীরবতায় ঝুল বারান্দার আঁড়ালে আশ্রয় নিয়েছে। বিছানা ছেড়ে জানালার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে রানু। জানালার কাঁচ গলে লোহার গ্রিলে বিন্দু বিন্দু জল জমে আছে। রানু মাথা রাখল গ্রিলে। আজ তার ভীষণ মাথা ধরেছে। দৃষ্টিতেও যেন কিসের আচ্ছন্নতা অথবা আলোর অভাবেই ঝাপসা। দূরের গাছগুলো ঠায় দাঁড়িয়ে ভেজা আকাশের দিকে তাকিয়ে। রানুর দৃষ্টি ক্ষয়ে আসে। গাছগুলো অন্ধকার রেখা থেকে ক্রমে অস্পষ্ট বিন্দুতে পরিণত হয়। রানু কাঁদছে। বাইরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামছে। রানু জানে সৈকত খুব শক্ত পোক্ত ছেলে। অনেক ডানপিটেও ছিল। আজই কেবল বিচলিত হতে দেখল একবার। এই একবারই তার চোখে দেখা অসহায় সৈকত ফিরে যাচ্ছে। পরাজিত সৈনিকের নত শিরে ধীর পায়ে। সম্মুখে ফাঁসির দড়ি। পাটাতনের উপর এক পা দু’পা। সৈকতের মনে এখন কি ভাবনা কাজ করছে। ফাঁসি মঞ্চের আসামীর মনে দড়ি পড়বার আগে কি খেলে যায়!
জিল্লুর রহমান ভ্রমণ অন্তপ্রাণ নিভৃতচারী। বানের জলের মতো প্রকৃতি টানে প্রবলভাবে। নগর জীবনে থেকেও ছোটা হয় পাহাড়-পর্বত, হাওর-বাঁওড়-সমুদ্র। দেখা হয় প্রকৃতি কাছ থেকে। কখনও পূর্ণিমার ভরা জ্যোৎস্নায় ভেসে যাওয়া সমুদ্র চরাচর; আবার অমাবস্যার কালো অন্ধকারে ঢাকা শৈল-পাহাড়। দক্ষিণ বংগের কোল জুড়ে বয়ে যাওয়া নোনা জল আপন রূপে ধরা দেয় নিসর্গ প্রেমীদের শ্যেন দৃষ্টিতে। সমুদ্রের অপার সৌন্দর্য কুহক ছড়ায় ভ্রমণ পিয়াসীদের মনে। আবার পাহাড়ের দৃঢ় অবয়ব কেড়ে নেয় কোমনীয় হৃদয়। নৈসর্গের এক একটি সোপান পেরিয়ে যেন আকাশের ঠিকানায় পৌঁছান। আজতক নিসর্গ প্রেমী এক শিক্ষকের ভ্রমণনামায় যুক্ত হওয়া দ্বিতীয় বই জল ছুঁয়ে হাওয়া। পড়েছেন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পিএইচডি গবেষণা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। পেশাঃ সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারপারসন, ইংরেজি বিভাগ, ইউনিভার্সিটি অব ডেভলপমেন্ট অলটারনেটিভ, ইউডা। আগ্রহ প্রকৃতি ও ভ্রমণে। কাব্যগ্রন্থঃ এই জলে এই জ্যোৎস্নায় গল্পগ্রন্থঃ নীল খামের গল্পেরা ভ্রমণ সাহিত্যঃ শার্দুলের খোঁজে সুন্দরবনে সম্পাদনাঃ সাহিত্য পতিতা 'প্যাটা