সাম্প্রতিক সময়ে যে কজন গুণী মানুষ একক প্রচেষ্টায় গবেষণার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকে বিমূর্ত করার নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম লেখক ও গবেষক সালেক খোকন। মুক্তিযুদ্ধের বিস্মৃত ইতিহাস তুলে আনার ক্ষেত্রে তিনি কাজ করছেন বহু বছর ধরে। নিভৃতচারী লেখক নিরলস প্রচেষ্টায় আমাদের ‘গৌরব ও বেদনার’ মহান মুক্তিযুদ্ধের অনালোচিত মানুষের কথা তুলে আনায় ব্রতী হয়েছেন, যাঁরা ছিলেন অন্তরালে। গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধদিনের নানামাত্রিক অভিজ্ঞতা নিয়ে রচিত হয়েছে সালেক খোকনের ৭১-এর আকরগ্রন্থ বইটি। এ গ্রন্থে মাঠপর্যায়ে গবেষণা করে মুক্তিযুদ্ধকালীন এগারোটি সেক্টরে আহত ১১১ জন প্রান্তিক মুক্তিযোদ্ধার যুদ্ধস্মৃতি, বিভিন্ন দলিল ও আলোকচিত্র সন্নিবেশিত করা হয়েছে। যেখানে যুদ্ধাহত বীরদের যুদ্ধস্মৃতি, জাতিরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্ম, শ্রেণিহীন সমাজ গঠনের প্রত্যয় ও অন্যান্য ভাবনাপুঞ্জ সুচারুভাবে বর্ণিত হয়েছে। রচনাগুলো আকর্ষণীয়, সুখপাঠ্য কিন্তু বেদনাবহ, যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস জানার সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে। গ্রন্থটিতে কথোপকথন, সরল গদ্য ঢঙে লেখা রচনাগুলো থেকে একজন সত্যসন্ধানী স্কলারের মননচর্চার পরিচয় মিলবে। লেখাগুলো পাঠককে চুম্বকের মতো ঐতিহাসিক একাত্তরের গহিনে নিয়ে যাবে, পাঠক পাবেন একটা পুরো জীবন; যে জীবন যোদ্ধার, স্বপ্নের, ক্লান্তি, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি ও দর্শনের। অভিনব এই গ্রন্থে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় লেখক বের করে এনেছেন দেশের প্রতি, মানুষের প্রতি তাঁদের ভালোবাসা, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে তাঁদের প্রতিরোধ, তাঁদের যন্ত্রণা, বীরত্ব, পরবর্তী প্রবংশের প্রতি তাঁদের আশাবাদ-এসব অনুষঙ্গ। সেসব বর্ণনা যেমন জীবন্ত, তেমনি প্রেরণাদায়ী; যা যে কোনো বয়সি পাঠকের মনে উন্মেষ ঘটাবে দেশ ও মানুষের প্রতি প্রদীপ্ত অঙ্গীকার। তাই ৭১-এর আকরগ্রন্থ বইটি মুক্তিযুদ্ধের এক অনন্যদলিল।
লেখক ও গবেষক। জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটা বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। তাঁর রচিত যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক মৌলিক গবেষণাগ্রন্থ হিসেবে ‘তরুণ কবি ও লেখক কালি ও কলম’ পুরস্কার লাভ করে। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।