"কিশোর মুক্তিযুদ্ধ" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বাঙালি জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন। এই স্বাধীনতা একদিনে অর্জিত হয়নি। সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বাঙালি জাতিকে নানা আন্দোলন ও সংগ্রামের মাধ্যমে আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে অর্জন করতে হয়েছে বিজয়ের গৌরব। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রবর্তিত ৬-দফা বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ভিত্তি রচনা করে। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র ঐতিহাসিক ৬-দফা ও তার বিরুদ্ধে দমন পীড়ন নীতি গ্রহণ করে। কারণ ৬-দফার মধ্যে বস্তুত দু'টি রাষ্ট্রের অবয়ব দেওয়া হয়েছিল। এই কারণেই ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও তাকে সরকার গঠন করতে দেওয়া হয়নি। কেবল তাই নয়, ৬-দফার মধ্যে বাঙালির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার যে আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ ঘটে তাকে নিরুদ্ধ করার জন্য একাত্তরের ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পর (অর্থাৎ ২৬ মার্চ) পাকিস্তানের সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র সারা বাংলাদেশ জুড়ে গণহত্যা শুরু করে। এটা সন্দেহাতীত যে, একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর দেওয়া রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাসিক ভাষণ বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তির পথনির্দেশিকা দান করে। বঙ্গবন্ধুর নির্ভীক নেতৃত্বে সর্বস্তরের বাঙালির ভেতর স্বাধীনতা লাভের আকাঙ্ক্ষা মূর্ত হয়। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি তার নেতৃত্বে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। কিন্তু এই অর্জনের পেছনে রয়েছে ত্রিশ লাখ জনতার প্রাণদান ও ততােধিক বাঙালির অশ্রুর ইতিহাস