সৃজনশীলতায় নিরন্তর পরিব্রাজক কবি নাসের ভূট্টো’র আজন্ম শ্লোগান প্রচলিত সমাজ ও অসুন্দরের বিরুদ্ধে। প্রয়োজনে ভেঙেছে বৈষম্য, প্রথা আর প্রত্যাখান। বাস্তবতার ঘোর ঠেলে খুঁজে ফেরেন সুন্দরের অনন্ত বৈভব। রোপণ করেন বহুমাত্রিক নন্দনবৃক্ষ। বোধ নয়, বোধাতীত বিস্ময়ে জাগরণ ঘটান চারপাশের নিরন্তর শুভকে। প্রেমে যেমন কোমল হয়ে উঠেছেন, কামে যেমন প্রজ্জ্বলিত হয়েছেন, তেমনি সমাজ-রাষ্ট্রকে দেখে ক্ষুদ্ধ হয়েছেন। নাসের ভূট্টো’র এই কবিতারাশিতে যা বড়ো হয়ে ধরা পড়েছে, তা হচ্ছে প্রাজ্ঞতা। কবিদের বয়স বাড়ে না, তাঁরা প্রাজ্ঞ হন না, থেকে যাওয়ার চেষ্টা করেন উত্তেজিত যৌবনে। কিন্তুু নাসের ভূট্টো এগিয়েছেন সামনের দিকে যেখানে মিশে থাকে অন্তর্লীন বেদনা, শক্তিমত্তার অনতিক্রম্য চেতনাপ্রবাহ। নাসের ভূট্টো সংকীর্ণ নগরে বন্দী হয়ে নেই, বেরিয়ে পড়েছেন পল্লীর অম্লান সৌন্দর্যের মধ্যে, সেই শোভা থরে থরে ফুটে উঠেছে এবং প্রেমের কোমলতা, বেদনা, হাহাকার ছড়িয়ে আছে কবিতার পর কবিতায়। একগুচ্ছ কবিতায় আন্তরিক প্রকাশ ঘটেছে ব্যক্তিগত মৃত্যুবোধ ও চরম যন্ত্রণার, যার তুলনা মিলে না চারপাশে। যা সাম্প্রতিক কবিতার দূষণমুক্ত-নিবিড়, অন্তরঙ্গ, অমল এবং এর ভাষা ভিন্ন, গভীর অনুভূতির ছোঁয়ায় যা পঙ্ক্তিতে পঙ্ক্তিতে আলোড়িত। গভীরভাবে আধুনিক এই কবিতারাশি কবিতার শাশ্বত সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ যা এক বড়ো অশুভ সময়ে কবি ও প্রাবন্ধিক নাসের ভূট্টো খুলে খুলে দেখিয়েছেন মানুষের সৌন্দর্যের অন্তঃসারশূন্যতা।
প্রথাবিরোধী লেখক, মূলত কবি-প্রাবন্ধিক। জন্ম : সম্ভ্রান্ত সিকদার পরিবারে। স্বাধীনতা দিবস ১৯৭৬। স্থান : মাছুয়াখালী (সিকদার পাড়া), রশিদনগর, রামু, কক্সবাজার। পিতা : মরহুম মোখতার আহমেদ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। একজন আদর্শবাদী, শিক্ষানুরাগী, সমাজহিতৈষী সাদামনের মানুষ ছিলেন। মাতা : মরহুমা রেগন আরা বেগম। সন্তান বৎসল সু-গৃহীনি। পত্রিকা সম্পাদনা, মিড়িয়ার তথাকথিত সাংবাদিকদের সাথে মতবিরোধ, ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে দাসশ্রমিক হিসেবে ব্যক্তিকে পুজা না করে ফিরে আসা, জোট শাসনামলে রাজনীতির নোংরা ব্যাকরণের শিকারে কারাবরণ এবং সেই সম্পর্কে পোক্ত ধারনাকে পুঁজি করে সাহিত্যের অবারিত ভুবনে অন্বেষণ করেন জীবনের রূপ ও রঙ। এ কাজে পেয়েছেন মানুষের ভালোবাসা এবং স্বীকৃতিÑ আলোকিত রামু পদকÑ২০১৮, নীলপদ্ম সাহিত্য সম্মাননাÑ২০১৯, বাংলাদেশ হেরিটেজ সম্মাননাÑ২০২০। সাহিত্য-সংস্কৃতি-সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে যুক্ত আছেন বিভিন্ন সংগঠনের সাথে। এখন, সমন্বয়ক : কবিতা বাংলা, কক্সসবাজার ও যুগ্ম সম্পাদক : লোক বাংলা, কক্সবাজার জেলার দায়িত্বে আছেন। পাশাপাশি যুক্ত আছেন খেটে খাওয়া মানুষের মুক্তি নিয়ে কাজ করা ‘মানুষ হবে’ সংস্থার সাথে। ব্যাংকার রোমেনা আফাজ রুমি, সন্তান আলিফ ও রেগনকে নিয়ে তার কবিতার গেরস্থালী।