‘তুমি ডাক দিয়েছ কোন সকালে , কেউ তা জানে না’- সেটা হতে পারে শিল্প সাহিত্য সাধনার ডাক । অন্তরের গহন থেকে বেজে ওঠে সেই আশ্চর্য জাদুকরী অনুভব । এই যে যাপিত জীবনের পরতে পরতে নিত্য হাসি কান্নার চিত্রালী-এইসব অমূল্য জলছবি মূর্ত হতে চায় । সেই যতো প্রফুল্ল অথবা বেদনাঘন প্রতিটি মহার্ঘ ডাক শুনেছিলেন ।কর্ণের ভিতর দিয়ে মর্মমূলে ।সেহেতু গভীর মমতায় , কুশলি বিন্যাসে অক্ষরের মালায় সাজিয়েছেন তাঁর সাহিত্য ভুবন । তাঁর রচনাসমূহ গল্পে বিষণ্ন , বিহবল অথবা আনন্দময় চরিত্রগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠে । ক্ষুয়িষ্ণু সমাজের স্বার্থান্ধ মানুষ ছুটছে দিকবিদিক । তাঁদের সিংহভাগ মানুষ আজ হারিয়েছে বিবেকের দায় ।সেইসব নকল মানুষ , যন্ত্রমানুষ ঘুরে ফিরে নরক গুলজার করে তাঁর গদ্য বুননে ,কবিতার মুল ভাবানায় ।সপ্রশংস দুচোখে পাঠক অনুধাবন করে- এতো আমাদেরই শহর কিংবা গঞ্জের চিত্ররূপ ।কিন্ত নতুন আবিস্কারের আলোর ছটায় ! এখানেই তাঁর কারিশমা । জীবন তো দৈর্ঘে প্রস্থে নিতান্তই কৃপন । যাপিত জীবনের যন্ত্রনা ,আনন্দ সমুচিত যত্নে ফ্রেমবন্দি করার কাজটি অসামাপ্ত রয়ে যায় । লেখকের আমৃত্যু লড়াই -কৃপন জীবনের মজমা থেকে যাপিত জীবনের সত্যটুকু কিংবা মিথ্যেটুকু অক্ষরে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা যায় ।তাহমিনা সেই নিপূণ খোদাই শিল্পী । শিশুকিশোর সাহিত্য রচনায় তাঁর অভিনিবেশ গুরুত্বপূর্ণ । ছড়ার রাজ্যে তাঁর পরিভ্রমণ আশা-জাগনিয়া । তাহমিনার প্রিয় পঞ্চাশটি গল্প । যা নাকি পাঠকে তুষ্ট করতে সক্ষম ।তাহমিনা পরিশ্রমী ,লাগাতার অন্বেষণে জীবন গল্পের মাল মসল্লা খুঁজে বেড়ান । যেখানে যেটুকু সূত্র পান , তাই কুড়িয়ে আনেন কোচড়ে । অসীম দরদে । প্রিয় পঞ্চাশ গল্প সাহিত্যে হবে এক নতুন সংযোজন ।
তাহমিনা কোরাইশী । ঢাকার শান্তিনগরে ১৪ নভেম্বর ১৯৫৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতৃনিবাস পাবনা। পিতা : লুঙ্কর রহমান খান (প্রয়াত), মাতা : নূরজাহান খান (প্রয়াত)। স্বামী : বীর মুক্তিযােদ্ধা ওমর কোরাইশী। পুত্রত্রয় : তানভীর, তানিম ও তাওসীফ। পুত্রবধূ : মৌসুমী, মাহেনূর এবং নাতনী সামারা ও আফশীন। তিনি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস-এ কমার্শিয়াল কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘ সাতাশ বছর চাকরি করে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছেন। তিনি বেশ কিছু দেশ ভ্রমণ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৫টি। প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ : হঠাৎ তােমাকে দেখা, খােলা। চিঠি, ফিরে কি আসা যায়, তখন এখন, দিনের পায়ে বেঁধেছি নূপুর, জলেই জ্বেলেছি আগুন, নির্বাচিত কবিতা । প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ : অমানিশার গল্প, হলদে পাকার গুঞ্জন, কুয়াশার দেওয়ালে যে সূর্য, চেনা মুখ অচেনা আলােয়, অহল্যা যামিনী ।। প্রকাশিত কিশাের গল্পগ্রন্থ : বামন মামা, পন্টুর কাঠাল। চুরি, ফুলপরীদের দেশে (বাংলাদেশ শিশু একাডেমি থেকে প্রকাশিত-২০১৬)। প্রকাশিত উপন্যাস : যে জলে চন্দন ঘ্রাণ । প্রকাশিত ছড়াগ্রন্থ : ছড়ার বনে হারিয়ে যাব, হৈ হুল্লোড়, ছড়া আমার খেলার সাথী, টাপুর টুপুর মিষ্টি দুপুর, ছড়া যত মজা তত, ছড়ার ঝুড়ি, মেঘের ঘুড়ি, রঙধনু প্রজাপতি (শিশুতােষ ছড়া) সহ মােট ২৫টি।