"যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ কুয়াশার ভেতরে হাতড়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি রাষ্ট্র হবে। যার চেহারা, চৌহদ্দি, সীমানা অবয়ব কিছুই দৃশ্যমান ছিল না। ১৯৪০ সালে লাহােরে মুসলিম লীগের কাউন্সিলে বাংলা-আসাম ও সিন্ধু, বেলুচিস্তান, পাঞ্জাব, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ নিয়ে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের কথা ঘােষণা করলেন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক। সেই থেকে রাষ্ট্রের নাম হল পাকিস্তান। ১৯৪৬ সালে দিল্লিতে মুসলিম লীগের পার্লামেন্টারি পার্টিতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী কর্তৃক দুই পাকিস্তানের বদলে স্বাধীন সার্বভৌম এক পাকিস্তানের প্রস্তাব গৃহীত হয়। অথচ বাংলার এই দুই মহান নেতাকে লীগ সভাপতি মুহম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তান জন্মলগ্নে মুসলিম লীগ দল থেকে ছুড়ে ফেলে দেন। কারণ, দুজনই ছিলেন সমকক্ষ এবং প্রতিদ্বন্দ্বী। পাকিস্তান সৃষ্টির পর জিন্নাহর জীবিতকালেই আমলাচক্র রাষ্ট্রকে কব্জা করে। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট বিজয়ী হয়। ক্রমাগত আন্দোলনের মুখে ১৯৫৬ সালে জন্মের দীর্ঘ ৯ বছর পর গৃহীত হয় শাসনতন্ত্র। প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইস্কান্দার মীর্জা ও সামরিক প্রধান জেনারেল আইয়ুব খান ৭ অক্টোবর ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারি করে শাসনতন্ত্র ছুড়ে ফেলে দেন। সিভিল-মিলিটারি ব্যুরােক্রেসি বাঙালির কণ্ঠ চেপে ধরে। এর বিরুদ্ধে ১৯৪৮ সাল থেকেই হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী এবং শেখ মুজিবুর রহমানসহ সংগ্রামী নেতৃবৃন্দ নিরবিচ্ছিন্নভাবে বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির উপর আঘাত, শাসন ও শােষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। মৃত্যু ভয়কে তুচ্ছ করে শেখ মুজিব বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য ৬৬ সালে ছয় দফা ঘােষণা করলে তাকে ফাঁসি দেবার জন্য আগরতলা ষড়যন্ত্রের মামলা দায়ের করেন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব। কিন্তু ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে বাধ্য হয়ে ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহৃত হয়, শেখ মুজিব মুক্তি লাভ করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন। উত্তাল গণআন্দোলনের মুখে '৬৯ সালে ক্ষমতা দখল করেন। সেনাপ্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খান। ৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়। কিন্তু সামরিক-বেসামরিক আমলাচক্র বাঙালির গণরায় বানচালের চক্রান্ত করে। বঙ্গবন্ধু এসব চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র মােকবেলা করে ৭ মার্চ '৭১ স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের ঘােষণা দেন। স্বহস্তে শাসনভার গ্রহণ করেন। ইয়াহিয়া খান আলােচনার এক পর্যায়ে সামরিক বাহিনীকে ক্রাক ডাউনের নির্দেশ দেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘােষণা করেন। নয় মাসের যুদ্ধে লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময়ে অভ্যুদ্বয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
Professor Abu Sayed অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এককালীন শিক্ষক ও রাকসুর ভিপি । সত্তরের নির্বাচনে নং সেক্টরের উপদেষ্টা ও ক্যাম্প ইনচার্জ। গণপরিষদে বাহাত্তরের খসড়া সংবিধান সংরচনা কমিটির অন্যতম সদস্য। বঙ্গবন্ধু কর্তৃক পাবনা জেলা গভর্ণর ' ডেজিগনেট । সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী। এছাড়া জাতীয় প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অভিজ্ঞতাঋদ্ধ। তাঁর লেখা বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ফ্যাক্টস্ এন্ড ডকুমেন্টস: বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, মেঘের আড়ালে সূৰ্য, ছোটদের বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব, আঘোষিত যুদ্ধের ব্ল-প্রিন্ট, ব্রুটাল ক্রাইমস্, বাংলাদেশের স্বাধীনতা: যুদ্ধের আড়ালে যুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ: সিক্রেট ডিপ্লোম্যাসি, মুক্তিযুদ্ধ: উপেক্ষিত গেরিলা, জেনারেল জিয়ার রাজত্ব, সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেক্ষিত ও গোলাম আযম, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঐতিহাসিক রায়, বাংলাদেশের গেরিলা যুদ্ধ, যুদ্ধাপরাধ: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ, বাংলাদেশ থ্রেট অব ওয়ার, একাত্তরে বন্দী মুজিব: পাকিস্তানের মৃত্যু যন্ত্রণা, সমাজ বদলে বঙ্গবন্ধুর ব্ল-প্রিন্ট, মুক্তিযুদ্ধের দলিল লণ্ডভণ্ড এবং অতঃপর, বাংলাদেশের স্বাধীনতা: কুটনৈতিক যুদ্ধ ইত্যাদি।