খাদ্যাভ্যাসে, আচার-আচরণে সচেতন একজন মানুষ রোগ নিরাময় থেকে রোগ প্রতিরোধে বেশি গুরুত্ব দেয়। স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন না হলে শরীরে রোগ আক্রমণ করবেই, আমরা না জানার কারণে রোগকে ডেকে নিয়ে আসি। রোগে আক্রান্ত হলে সবাই স্বাস্থ্য সচেতন হয়, ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়। আপনি যদি চান অপ্রয়োজনীয় খাবার গ্রহণের ফলে রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগেই স্বাস্থ্য সচেতন হতে, তা হলে এই বইটি আপনি পড়তে পারেন। আপনার বয়স কি ৩০ কিংবা ৪০ অতিক্রম করেছে? আপনার ওজন কি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি? মধ্যবয়স অতিক্রম করার পর এখন আপনি চিন্তা শুরু করেছেন কীভাবে ব্যায়াম করে, হাঁটাহাঁটি করে, খাদ্যতালিকার শর্করা ও চর্বিজাতীয় খাবার নিয়ন্ত্রণ করে শরীরের দুর্বল কোষকে আবারও সতেজ করা যায়? ডায়েটিং করার কথা ভাবছেন? এগুলো শুরু করার আগে আপনাকে আপনার শরীরের ভাষা বুঝতে হবে, আপনাকে জানতে হবে কোন ধরনের ডায়েট আপনার জন্য কার্যকর। ডায়েট করার উপকারিতা-অপকারিতা কিংবা ডায়েট না করেও যদি ওজন কমানোর সঠিক উপায় জানতে চান, তা হলে এই বইটি আপনার জন্য। আপনার বংশে কি কেউ হৃদরোগ কিংবা ডায়াবেটিকে আক্রান্ত আছে কিংবা ছিল? আপনি নিজেও কি ডায়াবেটিকের ঝুঁকিতে আছেন? জানতে চান কীভাবে ইনসুলিন ছাড়া ডায়াবেটিক মোকাবেলা করবেন কিংবা ডায়াবেটিকের আক্রমণ পিছিয়ে দেবেন ১০-১৫ বছর, তা হলে এই বইটি আপনার জন্য। আপনি যদি জাপানিদের মতো তারুণ্য ধরে রেখে দীর্ঘ রোগমুক্ত জীবনের গোপন সূত্র জানতে চান, তা হলে এই বইটি আপনার জন্য। আপনি কি জানতে চান বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় অটোফেজি প্রক্রিয়া সম্পর্কে, যা আবিষ্কার করে জাপানের বিজ্ঞানী ওশিনরি ওসুমি ২০১৬ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন? আপনার যদি জানার ইচ্ছে থাকে এই অটোফেজি কীভাবে আমাদের উপকার করে কিংবা কী উপায়ে একে শরীরে চালু করা যায়, তা হলে এই বইটি আপনার জন্য। আপনি যদি শুধু আনন্দ পাওয়ার জন্য কিংবা উঁচুমানের সাহিত্য অনুধাবন করার আশায় এ বইটি হাতে নিয়ে থাকেন তা হলে এ বইটি আপনার জন্য নয়। আমার গবেষণার বিষয় অটোফেজি, সেটা নিয়েই আমি বাংলায় লেখার চেষ্টা করেছি, সেই সাথে গ্রাম থেকে এসে আমেরিকায় বিজ্ঞানী হয়ে যাওয়ার গল্প পাবেন। তাই অপ্রয়োজনীয় অনেক কথা থাকতে পারে, এ জন্য আমি দুঃখিত। তবে আমার লেখায় অতিরঞ্জিত কিছু নেই, মিথ্যা কোনো আশ্বাস নেই, আপনার রোগের সমাধানও নেই। আমি বিশ্বাস করি জীবন ও মরণের মালিক একমাত্র আল্লাহ, আমরা শুধু চেষ্টা করতে পারি। এটা বলতে পারি আমার কথাগুলো, গল্পে গল্পে লেখা তথ্যগুলো আপনার শরীর সম্পর্কে জানা এবং শরীর নামক বাহনকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে সহায়তা করবে, সেটা আমি নিশ্চিত। এই বই আপনাকে ডায়েট চার্ট দেবে না, অপ্রয়োজনে ডায়েট করতেও বলবে না, তবে সুস্থ থাকার উপায় জানাবে। এটা একটা শিক্ষামূলক বই, এটা কোনো প্রেসক্রিপশন নয়। কোনো চিকিৎসা প্রয়োজন হলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে সরাসরি যাবেন, কোনো লেখক, ফেসবুক সেলিব্রেটি কিংবা ইউটিউবারের কাছে নয়। বইটি সম্পূর্ণ পড়বেন, সময় নিয়ে পড়বেন, বুঝে বুঝে পড়বেন।
মোহাম্মদ আরিফুর রহমান। ডাকনাম ফাহিম। তিনি একজন ফার্মাসিস্ট, শিক্ষক ও গবেষক। জন্ম ১৯৮৫ সালের ২৪ অগাস্ট কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার কাজিহাটি গ্রামে। পিতা মো. আব্দুল কুদ্দুছ, মাতা রাশিদা খাতুন। শৈশব কেটেছে গ্রামে। পড়াশোনা শুরু করেছেন গ্রামের স্কুলে। গ্রাম থেকে প্রাইমারি পড়া শেষ করে ক্লাস সিক্সে ভর্তি হন কিশোরগঞ্জ সরকারি বালকউচ্চ বিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে এখান থেকেই এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। সে বছর এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে কিশোরগঞ্জ জেলায় সর্বাধিক মার্কধারী হিসেবে পান ‘রায় সাহেব স্বর্ণপদক’। ২০০২ সালে গুরুদয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ থেকে ২০০৬ সালে স্নাতক এবং ফার্মাসিওটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগ থেকে ২০০৭ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৮ সালে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করে পরবর্তীতে উক্ত বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালে মনবুকাগাকাশো বৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষার্থে জাপান যান এবং সেখানে শিজুওকা ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল ‘অটোফেজি’। বর্তমানে তিনি আমেরিকার জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির পোস্ট-ডক্টরাল গবেষক। লেখকের স্ত্রী তানবিরা শারমিনও একজন ফার্মাসিস্ট। ছেলে আরহামকে নিয়ে তারা বসবাস করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায়। লেখক ওষুধ এবং বিজ্ঞানের নানা বিষয় নিয়ে নিয়মিত লিখেন দৈনিক পত্রিকাগুলোতে। এ পর্যন্ত তার ৯টি বই প্রকাশিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ‘ওষুধের যথাযথ ব্যবহার’, ‘ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া’ ‘বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে রোজার স্বাস্থ্যগত গুরুত্ব’, ‘বিদেশে উচ্চশিক্ষা’ এবং ‘আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা’ উল্লেখযোগ্য।