প্রিয়তম কাদেরে মুতলাক মহামহিম প্রতিপালক! লাখো কোটি ভক্তিপূর্ণ সিজদা তোমার কদমে। আর প্রশংসা! সে তো সবই তোমার। তোমার সৌন্দর্য, পূর্ণতা, মায়া-মমতা আর সকল গুনের প্রদর্শনী হিসেবে যাকে পাঠিয়েছ আমাদের রাহবার বানিয়ে, তুমি নিজেই যার প্রশংসা করেছ তোমার পবিত্র কালামে, আমি পাপি তার সম্পর্কে কী আর বলব... নির্জন নিশিতে পূর্ণিমার চাঁদকে বলি, তুমি যদি দেখতে আমার প্রিয়তমের হাসি জুড়ে কী মুগ্ধতা, তাহলে তোমার এ হাসি থেমে যেত। গায়ের মেটুপথের ¤্রয়িম্লান বনফুলকে বলি, তুমি যদি অনুভব করতে আমার প্রিয়তমের চাহনী জুড়ে কী ¯িœগ্ধতা, তাহলে কুহেলিকায় ¯œাত হত তোমার শুকনো কায়া। শিশিরভেজা রক্তিম গোলাপ! তুমি যদি দেখতে আমার প্রিয়তমের গ-দেশের দুধে আলতা রঙ, তাহলে তুমিও নত হয়ে চুমু খেতে। ফালগুনের নবযৌবনা পুস্পোদ্যান! তুমি যদি একবার আমার প্রিয়ের ঘামের সৌরভ পেতে, তাহলে তুমি ঘ্রাণ বিলানো বন্ধ করে দিতে। হালিমার কুড়ে ঘরে কী সুখ পেয়েছিলেন আমার প্রিয়তম, তা জানতে প্রভুর নিকটতম ফেরেশতারাও তো মনে হয় মাঝেমধ্যে মর্মপীড়ায় ভুগে। সেখানে আমি কোন নচ্ছাড়। ফিরদাউসের রাজপ্রাসাদগুলোও তো মনে হয়, ঈর্ষা করে মদিনার বসতিগুলোর ওপর। নিউইয়র্ক, লন্ডন আর সাংহাই তো দূর কি বাত। এসবের চাকচিক্য তো আবু আইয়ুব আনসারীর ঝুপড়ি ঘরের চেরাগের সামনেও নিস্প্রভ। দুনিয়ার সকল রূপ আর সৌন্দর্যকে মাঝেমধ্যে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে, বন্ধ কর এসব কৃত্রিমতা আর মেকি লৌকিকতা। প্রকৃত সৌন্দর্য যদি দেখতে চাও, তাহলে চল মদিনার সবুজ গম্বুজের ছায়ায়। তোমরা জান! কেন মদিনার প্রতি আমার এত অনুরাগ! কারণ, সেখানে আমার প্রিয়তমের পূণ্যময় রওজা রয়েছে। মদিনার প্রেমে মত্ত না হয়ে কীভাবে থাকব, অথচ আমার দীন-দুনিয়া সবই তো সেখানে। যাকে হারিয়ে এতিম হয়েছি জন্মের পূর্বেই, তাকে দেখার কতটা আকুলিবিকুলি যে এই ব্যথাতুর হৃদয়ে লালন করি, সে কথা তোমাদের কী করে বুঝাব। কল্পনার জগতে প্রিয়তমের পদচুম্বনের স্বর্গসুখ কি অলস দুপরে বাতায়ন শিয়রে মৃদুসমীরণে দোল খাওয়া লতাগুল্মকে বুঝানো সম্ভব। প্রিয়তমের স্মরণে অশ্রু ঝরানোর স্বাদ পাহাড়ি ঝর্ণাগুলো কী করে বুঝবে। তোমরা যদি জুলাইখার বান্ধবীদের দেখতে, তাহলে বুঝতে নবি ইউসুফের প্রেমে মাতওয়ারা হয়ে আঙুল কাটা কতটা সহজ! তোমরা যদি ফারহাতকে দেখতে, তাহলে বুঝতে শিরির বসতির দেয়ালে চুমু খাওয়ায় কী মুদিরা রয়েছে! জান প্রভু! আমার খুব ঈর্ষা হয় আরবের ধূলিবালির ওপর। ওরা পদতলে থেকেও প্রিয়তমের দেখা পেল, কিন্তু আমি পাপি আশরাফুল মাখলুকাত হয়েও বঞ্চিত হলাম। আহা! কী সৌভাগ্য তোমার মা আমেনা! কী সৌভাগ্য তোমার আব্দুল্লাহ! আমি যদি তোমার গৃহের উঠোন হতাম, তাহলে প্রিয়তম আমার কোলে খেলা করত। প্রাণভরে দেখতাম তাঁরে লুকিয়ে। জান প্রভু! প্রিয়তমের জন্য আমার হাহাকার, আনচান আর ব্যাকুলতা দেখে রাতের তারাগুলো মুখটিপে হাসে। গভীর রাতের নিশাচর পাখিগুলো মাঝেমধ্যেই বিদ্রুপ করে ওঠে। প্রিয়তমের আদর্শ লালন করি বলে দু’পেয়ে দানবগুলো আমার নিঃশ্বাস বন্ধ করে দিতে চায়। কিন্তু জান প্রভু! ওদের ভৎর্সনা, গঞ্জনা আর মৃত্যুর ভয় কিছুতেই আমার কোনো পরওয়া নেই; যদি প্রিয়তম একবার ডেকে বলে, চলে আয় মদিনায়, এখানেই তোর জীবন-মরণ। জানি, পাপাচারে ক্লিষ্ট আমার এই চর্মচক্ষু প্রিয়তমের সাক্ষাতের উপযুক্ত নয়। কিন্তু অন্তত স্বপ্নের পদ্মফোটা সরোবরের শানবাঁধানো ঘাটে হলেও একবার এসে যাও প্রিয়তম। দেখে যাও কতটা ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষমান এই পাপি। তাও যদি না হয়, অন্তত পরপারের কোনো খেয়াঘাটে যদি পাপের ভারে ডুবে যেতে থাকি, কা-ারি হয়ে টেনে তুলো প্রিয়.... নবিপ্রেমে উতলা প্রতিটা অন্তরকে স্বাগত জানাই, আসুন নবিপ্রেমের সজিব, প্রাণবন্ত উদ্যানে। উচ্ছল প্রাণে ছুটে বেড়ান আর আহরণ করুন নানা রঙের ফুল ও মধু...