রূপে রূপে অপরূপা বাংলাদেশ। পদ্মা-মেঘনা-যমুনার গানে নিত্য মুখরিত। রাতের স্বপ্নের মতো একান্ত আপন পরিচিত। হরিয়াল-দধিয়াল-দোয়েল- কোকিলের মধুর গানে এদেশের মানুষের ঘুম আসে, ঘুম ভাঙে। সাড়ে সাত কোটি বাঙালির গর্ব এদেশ, এদেশের মাটি সোনা । বাঙলার এই রূপ, এই ঐশ্বর্যে মুগ্ধ হয়ে বার বার এদেশে বর্গী এসেছে-এসেছে ইংরেজ ও অন্যরা । তিলে তিলে শোষণ করেছে তারা এদেশের মানুষকে । তবু এদেশের মানুষ শঙ্কিত হয়নি এতটুকু । স্বাধীনতা-সংগ্রামে তারা চির-বিদ্রোহী । দুইশত বছর পরাধীন থাকার পর বহু রক্তের বিনিময়ে অবশেষে যে আশার আলোটুকু প্রজ্জ্বলিত হয়েছিল, তাও অচিরে নিভে গেল। বিদেশী বিজাতিদের হাত থেকে রাজদণ্ড গেল পাঞ্জাবি বেনিয়াদের মুঠোয়। তাই স্বাধীন আর হল না বাংলার মানুষ, মুক্তি পেল না বাংলার মাটি । দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে চলল লাঞ্ছনা, নির্যাতন, শোষণ আর নিপীড়নের স্টিম রোলার। কিন্তু বাঙালি বীরের জাতি। এরা সিরাজ, সূর্য সেন, নেতাজী, তিতুমীরের বংশধর । শোষণে শোষণে জর্জরিত হয়ে বাঙালি-জীবন যখন এমনি এক চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন, তখনই এগিয়ে এলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । বাংলার গৌরব, জাতির আশা-আকাঙ্খার প্রতীক বঙ্গবন্ধুর ডাকে কাতার-বন্দি হল বাংলার সাড়ে সাত কোটি ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক জনতা । রক্ত-শপথ নিল স্বাধীনতার সংগ্রামে, মুক্তির সংগ্রামে। পশ্চিমী শাসনতন্ত্র বিকল হয়ে গেল । বাঙলায় সম্পূর্ণভাবে অবরুদ্ধ হল এরা । পশ্চিমীদের শোষণ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দেখে হিংস্রতা আরো প্রবলভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠল । শেষবারের মতো ওরা ঝাঁপিয়ে পড়ল বাঙলার বুকে। বাঙালির উপর হানল চরম আঘাত । বাঙলার মানুষ প্রাণপণে বাধা দিল ওদের । একদিকে সর্বাধুনিক মারণাস্ত্রের উন্মত্ত তাণ্ডব, আর অপরদিকে ভাগ্যাহত নিরস্ত্র জনতার কাফেলা। পৃথিবীর ইতিহাসে এর আর নজির নেই। আধুনিক মারণাস্ত্র না থাকলেও বাংলার মানুষের মনোবলের অভাব ছিল না। এগিয়ে চলল তারা। সন্তানহারা জননী আর মাতৃহারা সন্তানের ক্রন্দনে বাংলার আকাশ অঝোরে কাঁদল। ওরা বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে ছাই করে দিল। ছারখার হয়ে গেল সোনার সংসার ।