আজকের পৃথিবীতে দেড়শ কোটি মুসলমানের বসবাস, একশব্দে যাদের পরিচয় মুসলিমজাতি। চৌদ্দশ বছর পূর্বে বিদ্যমান জাতিসত্তার তালিকায় যোগ হয়েছিল এই জাতিসত্তার নাম। সেদিন আকাশ-বাতাস, উদয়াচল-অস্তাচল, ঊর্ধ্বগগণ-ধরণিতল সবকিছু আলোড়িত হয়েছিল। কারণ, দিনটি কেবল একটি জাতিসত্তার জন্মদিন ছিল না, ছিল নতুন পৃথিবীর জন্মদিবস! মুসলিম জাতিসত্তার উৎপত্তি ও বিকাশ নিত্যদিনের গতানুগতিক কোনো ঘটনা ছিল না। ইসলামি সভ্যতার কীর্তি ও অবদান কেবল ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অঙ্গনে সীমাবদ্ধ ছিল না। মুহাম্মাদি সংস্কৃতির দান ও কল্যাণ শুধু মুসলিম সমাজে প্রবহমান ছিল না। ইসলাম ও মুসলিমজাতি, ইসলামি সভ্যতা ও মুহাম্মাদি সংস্কৃতি মানবজাতির জন্য আল্লাহ তাআলার এক অনুপম দান, বিশ্বসমাজের জন্য এক অনুকরণীয় আদর্শ। স্রষ্টা-সৃষ্টি সম্পর্কের সুষম ভারসাম্যের পরিচয় ও রূপ পৃথিবীতে ইসলামই তুলে ধরেছে। মানবিক সম্পর্কের ন্যায় ও উদার কাঠামো জগতে মুসলিমজাতিই প্রতিষ্ঠা করেছে। মানবকল্যাণে যা-কিছু প্রয়োজন, ইসলামি সভ্যতাই তার সবকিছু আবিষ্কার ও উৎপাদন করেছে। আদর্শ মানবসমাজ বিনির্মাণে যত উপায়-উপকরণ প্রয়োজন, মুহাম্মাদি সংস্কৃতিই তার দাবি মিটিয়েছে। আর তাই এ দাবিতে মোটেও অত্যুক্তি নেই যে, ইসলামই অন্ধকার পৃথিবীকে আলোর দিশা দিয়েছে, মুসলিমজাতিই বিভ্রান্ত মানবসভ্যতাকে পথের দিশা দিয়েছে, ইসলামি সভ্যতাই বিষণ্ন মানবতার মুখে নির্মল হাসি ফুটিয়েছে এবং মুহাম্মাদি সংস্কৃতিই মশাল হাতে গৌরবময় আগামীর পথ দেখিয়েছে। হায়, মুসলিমজাতি কি জানে আপন অতীতের কথা, সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে তার অনুপম অবদানের কথা?! সুন্দর পৃথিবী নির্মাণে তার সক্রিয় অংশগ্রহণের কথা?! দেড়শ কোটির এই পরিবার কি জানে, একদিন তারা কেবল বিশ্ব শাসন করেনি, সমাজ ও সভ্যতার প্রতিটি অঙ্গনের তৃষ্ণাও নিবারণ করেছিল। একদিন তারা কেবল ইবাদতের ইমামতি করেনি, জ্ঞানবিজ্ঞান, শিল্প-সংস্কৃতি, চিকিৎসা-দর্শন, স্থাপত্য-নগরায়ণ, রসায়ন-প্রকৌশল—কল্যাণকর প্রতিটি ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছিল। হায়, অমুসলিম জাতিসংঘ কি জানে মুসলিমজাতির পরিচয়?! অন্ধকারে কে তাদের হাত ধরেছিল? তৃষ্ণার্ত সন্ধ্যায় কে তাদের ঠোঁটে অমীয় সুধা তুলে ধরেছিল?! কে দিয়েছিল সত্য ও সফলতার সন্ধান?! কে শুনিয়েছিল সাম্য ও সুদিনের জয়গান?! রাহবার কি জানে আত্মপরিচয়?! পথহারা কি জানে রাহবারের পরিচয়?! --------- ড. রাগিব সারজানি। একজন দরদি দাঈ, একজন কুশলী ইতিহাসবিদ। আলোচনার ময়দানে ও বইয়ের পাতায় তিনি তুলে ধরেন মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস ও অবদান, করণীয় ও প্রয়োজন। তিনি সমৃদ্ধ অতীতের গল্প শোনান, সমুজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন বোনেন। তিনি ঘুমন্ত রাহবারকে জাগরণের আহ্বান জানান, দিগ্ভ্রান্ত পথিককে রাহবারের পথ দেখান। নন্দিত ও বরণীয় লেখক ড. রাগিব সারজানির এক অনন্যসাধারণ গ্রন্থ ‘মা-যা কাদ্দামাল মুসলিমুনা লিল-আলাম’। গ্রন্থটিতে তিনি তুলে ধরেছেন পৃথিবী ও মানবজাতির কল্যাণে মুসলিমজাতির উদ্ভাবন ও আবিষ্কার এবং কীর্তি ও অবদানের বয়ান। তথ্য ও যুক্তির মিশেলে তিনি রচনা করেছেন শ্রেষ্ঠতম জাতির নিখুঁত পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য অভিধান। গ্রন্থটিতে আছে ঘুমন্ত রাহবার ও দিকহারা কাফেলা—উভয় শ্রেণির প্রয়োজনীয় তথ্যের চমকপ্রদ বিবরণ। গ্রন্থটি তাই হতে পারে প্রতিটি মুসলমান ও প্রতিটি মানবসন্তানের অধ্যয়ন-তালিকায় অমূল্য সংযোজন। গ্রন্থটি ২০০৯ সালে মিশরের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার ‘মুবারক অ্যাওয়ার্ড’ এবং ২০১৪ সালে ইন্দোনেশিয়ায় সে দেশের ভাষায় অনূদিত ‘শ্রেষ্ঠ বই’ পুরস্কারে ভূষিত হয়। ড. রাগিব সারজানির এ গ্রন্থটি ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার পাশাপাশি পর্তুগিজ, স্প্যানিশ, ইন্দোনেশীয়, মান্দারিন ও রুশ ভাষায় অনূদিত ও বেশ সমাদৃত হয়েছে।
Title
মুসলিমজাতি বিশ্বকে কী দিয়েছে ৪ খণ্ড (২ ভলিউমে স্টুডেন্ট এডিশন)
Dr. Rageb Sarjani জন্ম: ১৯৬৪ঈ. আল মুহাল্লা কুবরা, মিশর। ড. রাগেব সারজানী মিশরের বিশিষ্ট ইসলামপ্রচারক, ইতিহাসবিদ ও একজন আধুনিক আরবলেখক। পেশায় মূলত তিনি একজন ডাক্তার। তবে ডাক্তারি পেশার পাশাপাশি ইসলামী ইতিহাসের গভীর গবেষণা বর্তমান পৃথিবীতে তাকে একজন বিশিষ্ট ইসলামী ইতিহাসবিদ হিসেবে পরিচিত করেছে। ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করার পর পবিত্র কুরআনুল করীম হিফজ করেন। ইসলামের প্রতি আস্থা ও ভালোবাসা, ইসলামের ইতিহাসের প্রতি দরদ ও শ্রদ্ধা-তার চোখের তারায় যে আগামীর স্বপ্ন আঁকে-সেই স্বপ্ন বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতেই তার লেখালেখি। এই স্বপ্ন ছবি হয়ে উড়ে বেড়ায় তার রচনার ছত্ৰে ছত্ৰে | শিক্ষা তিনি ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদ থেকে ইউরোসার্জারি বিষয়ে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে পবিত্র কুরআনুল করীম হিফজ করেন। কর্মক্ষেত্র অধ্যাপক : মেডিসিন অনুষদ, কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়,সদস্য : ইন্টারন্যাশনাল মুসলিম উলামা পরিষদ,সদস্য : মানবাধিকার শরীয়া বোর্ড, মিশর,সদস্য : আমেরিকান ট্রাস্ট সোসাইটি ,প্রধান : ইতিহাস বিভাগ, ইদারাতুল মারকাযিল হাজারা, মিশর রচনাবলি ইতিহাস ও ইসলামী গবেষণা বিষয়ে এ পর্যন্ত তার ৫৬টি মূল্যবান গ্ৰন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য— কিসসাতুত তাতার (তাতারীদের ইতিহাস),কিসসাতু উন্দুলুস (স্পেনের ইতিহাস),কিসসাতু তিউনুস (তিউনেসিয়ার ইতিহাস) আর রহমা ফি হায়াতির রসূল মা'আন নাবনী খায়রা উন্মাতিন প্রভৃতি।