“মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ' রবীন্দ্রনাথের এই বাণীর ওপর গভীর আস্থা ও বিশ্বাস ছিল হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। মানুষের জন্য তাঁর ছিল অতলান্ত ভালোবাসা, অবিচল আস্থা। দেশ ও মানুষের মঙ্গলচিন্তাই ছিল তাঁর সার্বক্ষণিক ধ্যান, জ্ঞান, সাধনা। বুকের রক্ত দিয়ে তিনি জন্মভূমির ঋণ শোধ করে গিয়েছেন। মানুষের জন্য অকুণ্ঠ প্রশ্নহীন ভালোবাসা এমন কোনো মহামানবের জন্যেই স্বাভাবিক ও শোভন। তাঁর সারল্য ছিল আকাশপ্রতিম। ছোট্ট একটি ঘটনায় একথার সারবত্তা প্রমাণিত হয়। ভালোবাসার এই শক্তি ও দীপ্তি ছিল বঙ্গবন্ধুচরিত্রের সবলতা এবং একইসঙ্গে দুর্বলতাও। তিনি নিজেও এই স্পর্শকাতর বিষয়টি উপলব্ধি করতেন। একবার এক বিদেশী সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করলেন, 'স্যার, হোয়াট ইজ ইয়োর কোয়ালিফিকেশনস?' সাংবাদিকের এই ঘোরালো টাইপের কূটপ্রশ্ন তিনি স্বভাবসুলভ প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব দিয়ে চমৎকারভাবে সামাল দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সহজ উত্তর ছিল: 'আই লাভ মাই পিপল'। ঝানু সেই সাংবাদিকও কম যান না। বাংলার মৃত্তিকার মহান সন্তানকে তিনি পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন, 'হোয়াট ইজ ইয়োর ডিসকোয়ালিফিকেশনস দেন?” বঙ্গবন্ধু এই জটিল প্রশ্নেরও জবাব দিলেন তাঁর অননুকরণীয় সারল্য ও মহত্ত্বের ভাষায়, ‘আই লাভ দেম টুওও মাচ।' আরেকটি ঘটনা আমেরিকার, সেটি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। সেখানে একবার বঙ্গবন্ধু বিষয়ক এক বক্তৃতা দিয়েছিলেন প্রবীণ প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কলামিস্ট, বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য প্রিয়জন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। ওয়াশিংটনের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে হচ্ছিল সেই অনুষ্ঠান। এক ছাত্র আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে প্রশ্ন করে, পশ্চিমা কোনো রাষ্ট্রনায়কের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কোনো তুলনা করা যায় কি না? তাহলে ছাত্রটির পক্ষে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি শেখ মুজিবকে বুঝতে পারা সহজতর হয়। প্রাজ্ঞ, কৃতবিদ্য সাংবাদিক এই প্রশ্নের উত্তরে একটু ভেবে যে কথা বলেছিলেন, তা আমরা তাঁর জবানীতেই শুনি।
হাশিম মিলন। জন্ম : ৩১ জানুয়ারী ১৯৭২, ঝিনাইদহ শিক্ষা: এম এস এস (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) এম বি এ (মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা) প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা: ১১টি মূলত: ছড়া ও কবিতায় বিচরণ নব্বই দশক থেকে লেখালেখির আঙিনায় দীপ্ত উপস্থিতি।