সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবি। বিশ্ব-ইতিহাসের মহাবীর। ক্রুসেডবিরোধী সেনানায়ক। তাঁর জীবনের পরতে পরতে মিশে আছে বীরত্বের রোমাঞ্চকর সব কীর্তি। বদলে দিয়েছিলেন পৃথিবীর মানচিত্র। ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন ধর্মযুদ্ধের নামে খ্রিষ্টানদের উদ্ভাবিত হিংস্র ক্রুসেডের গতিপথ। অসীম সাহস, ইমানি তেজ ও মহানুভবতার জন্য শত্রুর কাছেও ছিলেন যারপরনাই সম্মানী। ইনসাফ ও শরিয়া প্রতিষ্ঠা করে হয়ে ওঠেন মুসলিম উম্মাহর অনুকরণীয় মহান সুলতান, উম্মাহর ভাগ্যাকাশে সৌভাগ্য আনয়নকারী তারকা। সালাহুদ্দিনের আবির্ভাব আব্বাসি খিলাফতের শাসনকালে। আব্বাসি শাসনকেন্দ্রের দুর্বলতায় পৃথিবী তখন ক্ষমতার বিচ্ছিন্ন লড়াইয়ে বিভীষিকাময়; মিসরকেন্দ্রিক গড়ে উঠেছিল শিয়া ফাতিমি সাম্রাজ্য; খলিফার নামমাত্র আনুগত্যে মুসলিম ভূখণ্ডগুলো স্বাধীন সাম্রাজ্যে বিভক্ত; ক্রুসেডারদের হিংস্র আক্রমণে সকল জনপদ আতঙ্কিত; আকসাকে হারিয়ে উম্মাহ হতবিহ্বল-পেরেশান! তখন এই মহান বীর নির্ভীকচিত্তে নিজেকে নিবেদিত করেন ক্রুসেডারদের সাহায্যকারী ফাতিমি সাম্রাজ্যের বিলুপ্তকরণ, ঐক্য বিনষ্টকারী শাসকদের ক্ষমতাহরণ, ইউরোপীয় ক্রুসেডারদের ঔদ্ধত্য চূর্ণীকরণ, জেরুসালেম মুক্তকরণ ও ইসলামের বিরুদ্ধে অস্ত্র উত্তোলনকারী সকল শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করে আব্বাসি খিলাফতের পতাকাতলে উম্মাহর ঐক্যের জন্য! আজকের পৃথিবীও একজন নুরুদ্দিন জিনকি ও সালাহুদ্দিনের অপেক্ষায়; দ্বিতীয় খিলাফতে রাশিদার পতাকাতলে সেই ভবিষ্যৎ-কান্ডারি সালাহুদ্দিন আবারও ফিরে আসবে, মুক্ত করবে আকসা; ধূলিসাৎ করবে নব্য ক্রুসেডারদের দম্ভ! এই আকাঙ্ক্ষিত বাস্তবতার অতীত জানতে পড়ুন বিশ্বখ্যাত ইতিহাসবিদ ড. সাল্লাবি রচিত বিশুদ্ধতম এই গ্রন্থ সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবি।
ফকিহ, রাজনীতিক ও বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগবেষক। ইসলামের ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণধর্মী তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই মহা মনীষী ১৯৬৩ সনে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা বেনগাজিতেই করেন। যৌবনের প্রারম্ভেই গাদ্দাফির প্রহসনের শিকার হয়ে শায়খ সাল্লাবি আট বছর বন্দি থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি সাউদি আরব চলে যান। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও উসুলুদ্দিন বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সনে অনার্স সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান সুদানের উম্মু দুরমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে উসুলুদ্দিন অনুষদের তাফসির ও উলুমুল কুরআন বিভাগ থেকে ১৯৯৬ সনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৯ সনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ফিকহুত তামকিন ফিল কুরআনিল কারিম’। ড. আলি সাল্লাবির রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু বিশ্বখ্যাত ফকিহ ও রাজনীতিক ড. ইউসুফ আল কারজাবি। কারজাবির সান্নিধ্য অর্জনে তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কাতার গমন করেন। নতুন ধারায় সিরাত ও ইসলামি ইতিহাসের তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে ড. আলি সাল্লাবি অনুসন্ধিৎসু পাঠকের আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নবিজির পুর্ণাঙ্গ সিরাত, খুলাফায়ে রাশিদিনের জীবনী, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসি খিলাফত, উসমানি খিলাফতের উত্থান-পতনসহ ইসলামি ইতিহাসের সাড়ে তেরোশ বছরের ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন। তা ছাড়া ইসলামি ইতিহাসে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করা ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি আলাদা আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির রচনা শুধু ইতিহাসের গতানুগতিক ধারাবর্ণনা নয়; তাঁর রচনায় রয়েছে বিশুদ্ধতার প্রামাণিক গ্রহণযোগ্যতা, জটিল-কঠিন বিষয়ের সাবলীল উপস্থাপনা ও ইতিহাসের আঁকবাঁকের সঙ্গে সমকালীন অবস্থার তুলনীয় শিক্ষা। এই মহা মনীষী সিরাত, ইতিহাস, ফিকহ ও উলুমুল কুরআনের উপর আশির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাবলি ইংরেজি, তুর্কি, ফরাসি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীর জ্ঞানগবেষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ, নিরাপদ ও সুস্থ জীবন দান করুন। আমিন। —সালমান মোহাম্মদ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক ২৪ মার্চ ২০২০