করোনাভাইরাসের অতিমারি তাণ্ডব উন্মোচন করেছে ভোগবাদী, বর্ণবাদী, বৈষম্যমূলক বিশ্বব্যবস্থার নগ্ন চিত্র। প্রকৃতিকে ধ্বংস করে গড়ে ওঠা মেকি সভ্যতা যে কত ঠুনকো, কত অসহায়, তার জাজ্বল্যমান প্রমাণ ক্ষুদ্র পরজীবীর আক্রমণে দিশেহারা পৃথিবীর মানুষ। বিশ্বমানবতা আজ শঙ্কাগ্রস্ত, প্রগতির চাকা ঘোরাতে চাইছে কেউ কেউ উল্টো পথে। দেখা দিয়েছে জীবনের সাথে জীবিকার দ্বন্দ্ব। অন্যদিকে সমস্ত দ্বন্দ্ব-স্বার্থ ভুলে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে সারা বিশ্বের স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজের জীবনকে ভুলে গিয়ে করে যাচ্ছেন জীবন বাঁচানোর লড়াই। জীবনের জন্য সংগ্রাম করাটাই জীবনের সৌন্দর্য। মৃত্যুও নয় সৌন্দর্যের অতীত। বাউল দর্শন, সুফিবাদ সর্বদা এক সুতায় গাঁথে জীবন-মৃত্যুর সৌন্দর্য। জীবাত্মাকে পরমাত্মার সাথে বিলীন করে পূর্ণ করে মহাকালের চিরন্তন চক্র ‘শূন্য বৃত্ত’। কবি তাই খোঁজেন সামগ্রিকভাবে মরমি মানবাত্মা, বিলীন হতে চান প্রকৃতির চক্রের সাথে। ঘাসফুলের গয়নায় সাজাতে চান মানব সভ্যতা-সংস্কৃতিকে। দৃঢ়ভাবে উচ্চারণ করেন ‘আমরা সবাই প্রকৃতির সন্তান’। আবার গভীর দৃষ্টিতে জীবন-মৃত্যুকে একই সমতলে এনে খোঁজেন সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমা, রচনা করেন ‘একটি সরল প্রার্থনা’। ‘রেখার দৃষ্টিসীমানা’ই কবির মানবিক বিশ্বের সীমানা। অমানবিক বিশ্বে ভেলেরিয়ার করুণ মৃত্যুতে ভেঙে যায় কবির অন্তর, তাই প্রাণের টানে লেখেন ‘ভেলেরিয়ার স্বপ্নভঙ্গ’। আবার প্রচণ্ড দ্রোহে রচনা করেন ‘বর্ণবাদের মৃত্যু পরোয়ানা’। আজন্ম সংগ্রামী কবি সংগ্রাম-সৌন্দর্যে প্রবলভাবে আশাবাদী একজন মানুষ। তাইতো রেখে যেতে চান ‘একটি স্বপ্ন’ নতুন প্রজন্মের কাছে। ধ্বংসের মধ্য দিয়ে নতুন প্রাণের জন্ম, কচি ঘাস, বিরান ভূমি হতে জেগে ওঠা প্রাণের প্রত্যাশা করেন। সর্বোপরি প্রত্যাশা করেন ‘নেটিজেন’-এর স্বার্থপরতার বিপরীতে সাম্য-মৈত্রী-সংহতির মানবিক বিশ্বব্যবস্থা।