তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ১০ লক্ষাধিক মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানিদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান ঐ দিন ঘোষণা করেছিলেন, 'এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধু সেদিন বাঙালিদের সকল দুঃখ দুর্দশার কথা তুলে ধরেছিলেন তার ভাষণে।আব্রাহাম লিংকনের ঐতিহাসিক গেটিসবার্গ ভাষণের সাথে বঙ্গবন্ধুর প্রদত্ত ভাষণটিকে তুলনা করা হয়ে থাকে।দীর্ঘ ১৮ মিনিটের( যদিও,উচ্চ মাধ্যমিক পৌরনীতি ও সুশাসন বইটিতে ১৯ মিনিট এবং অনলাইনে ১৪.০৩ মিনিট বলা আছে) বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু চারটি দাবি উত্থাপন করেন। যথাঃ ১.চলমান সামরিক আইন প্রত্যাহার, ২.সৈন্যদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া, ৩.গণহত্যার তদন্ত করা এবং ৪.নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করা। বইটিতে অসাধারণ ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, প্রতিটি বাক্য এবং প্রতিটি শব্দের ব্যাখ্যা। অনেকেই ভেবেছিলো হয়ত সেদিনই স্বাধীনতার ঘোষণা আসবে।কিন্তু, ভবিষ্যতে দাঙ্গা হাঙ্গামা যেন না ঘটে,শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সমাধানের পথ খোলা রাখতে বঙ্গবন্ধু সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন নি।যদিও,অনেকেই মনে করেন বাঙালি জাতির জন্য মুক্তিযুদ্ধের মঞ্চে লড়ে যাবার অনুপ্রেরণা এসেছিলো ওই ৭ই মার্চের ভাষণ থেকে! এই বিখ্যাত ভাষণটিকে ইউনেস্কো ২০১৭ সালে "বিশ্ব ঐতিহ্য দলিল" বলে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং জ্যাকব এফ ফিল্ডের সংকলিত 'We shall fight on the beaches:the speeches that inspired history"*- বইটিতে ২০১ পৃষ্ঠায় 'দ্য স্ট্রাগল দিস টাইম ইজ দ্য স্ট্রাগল ফর ইনডিপেনডেন্স' শিরোনামে স্থান পেয়েছে।(*বইটিতে খ্রীস্টপূর্ব ৪৩১ সাল থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত সেরা ভাষণগুলো স্থান পেয়েছে) বইটিতে পাওয়া যাবেঃ -বইটিতে মূলত একাত্তরের অগ্নিঝরা ৭ই মার্চের বিখ্যাত ভাষণের পূঙ্খানুপুঙ্খ ব্যাখ্যা রয়েছে। -বাক্যগুলোর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে লেখক বেশ কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য উপস্থাপন করেছেন।সেখানে রয়েছে নানান অজানা চমকপ্রদ তথ্যাবলির সমাহার। -ভুট্টোর রাজনৈতিক জীবনের নানান দিক।কীভাবে সবসময় কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে নিজের তথা পশ্চিম পাকিস্তানের স্বার্থ হাসিল করতে ব্যস্ত থাকতো,সেটাও ফুটে উঠেছে। -সর্বোপরি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু'র তার দেশের মানুষের প্রতি অসীম ভালোবাসার টান খুব সহজেই উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন পাঠক। বইটি মূলত কাদের জন্য? -বাংলাদের নাগরিক হিসেবে সকলের জন্যই ৭ই মার্চের ভাষণ অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ।সকলেরই এ সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত।কারণ,আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন জড়িত এখানে।সুনাগরিক হিসেবে সকলেই বইটি হাতে তুলে নিতে পারেন! -ইতিহাস সম্পর্কে যাদের জানার আগ্রহ,তাদের জন্য বইটি অবশ্যই সংগ্রহের তালিকায় থাকা উচিত। -জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর বর্ণাঢ্য জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ এই ৭ই মার্চের ভাষণ।সুতরাং,যারা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ইচ্ছুক বইটি তাদের জন্যই! -বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য ভাষণ এবং এর ব্যাখ্যা জানা অতীব জরুরি।সদ্য ফল প্রকাশিত বিসিএস প্রিলিমিনারিতেও প্রশ্ন ছিলো। এছাড়া ভাইবাতে প্রশ্নকর্তা আপনার সাথে এমন প্রসঙ্গে কথা বলতেই পারে। প্রশ্ন করুক আর না করুক.. সর্বোপরি আমাদের সকলেরই নিজেদের আর একটু আপগ্রেড করার জন্য এই ভাষণ এবং তার তাৎপর্য সম্পর্কে জানা উচিত। এছাড়াও রেফারেন্স হিসেবে এই বইটি আপনি ব্যবহার করতে পারেন। তাই,চাকরি প্রার্থীদের এগিয়ে থাকতে বইটি হাতে তুলে নিতে দ্বিধা করবার কথা নয়!