১৯৭১ সালে আমি সতের বছরের কিশোর। সবেমাত্র এসএসসি পাশ করে মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজে এইচএসসি-তে ভর্তি হয়েছি । পিতৃহীন সংসার, মা অনেক কষ্ট করে আমাদের মানুষ করছেন । আমরা তিন ভাই দুই বোন । আমি সবার বড়। মা আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন, আমিই সংসারের হাল ধরব। অথচ সেই আমি এক গভীর রাতে মা ও ছোট ছোট ভাই-বোনদের সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে কাউকে না বলে মৃত্যুর গহ্বরে গেলাম স্বাধীনতার সূর্য আনতে । টাঙ্গাইলের লাউহাটি ক্যাম্প থেকে উন্নত ট্রেনিং-এর জন্য আমাদের ভারত পাঠানো হয় । ট্রেনিং চলাকালে যখনই একটু সময় পাই তখনই মুক্তিযুদ্ধের কবিতা ও ছড়া লিখি। ভারতের মেঘালয় প্রদেশে ঢালু ইয়ৎ ক্যাম্পে থাকা হয়েছিল কিছুদিন । ক্যাম্পের ইনচার্জ ছিলেন জনাব মোঃ রফিকুল ইসলাম । সময় পেলেই আমি স্যারের কাছে গিয়ে আমার লেখা কবিতা ও ছড়া শুনাতাম । আমার কবিতা ও ছড়া শুনে স্যার খুব খুশি হতেন এবং আমাকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে পাঠাতে চাইতেন। আমি রাজী হতাম না । বলতাম-‘আমি তো স্যার যুদ্ধ করতে এসেছি।' স্যার বলতেন, 'তুমি যদি শহীদ হও, দেশ তো একজন কবি হারাবে।' উত্তরে আমি বলেছিলাম-‘আমরা হারাব না স্যার, আমরা রয়ে যাব এদেশের কৃষ্ণচূড়া, পলাশ-শিমুলের ফুলে, রাতের উজ্জ্বল শুকতারায়। এটি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ, আমরা হবো এদেশের শত-সহস্র বছরের অতন্ত্র প্রহরী।' মাত্র সতের বছর বয়সের একজন কিশোর মুক্তিযোদ্ধার মুখে এমন কথা শুনে স্যার আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন। স্যারের দু'চোখ বেয়ে অশ্রু এসে পড়েছিল ।