ছেলেবেলায় মার কাছে গল্প শুনতে খুবই ভালো লাগতো। বিশেষ করে রাজপুত্র যখন পঙ্খীরাজের পিঠে চড়ে তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে রাক্ষস খোক্ষসদের দেশ ছাড়িয়ে, দেউ দত্তিদের চোখ এড়িয়ে অজানা দেশের বিজন বনে অজগরের মণি সংগ্রহ করে পাতালপুরের রাজকন্যাকে উদ্ধার করে দেশে ফিরত তখন আমিও নিজের অজ্ঞাতে তার সাথে সাথে ছুটে বেড়াতাম। আর সাতসমুদ্র তের নদী পার হয়ে সওদাগরের ছেলের সাথে পৃথিবীর দূর-দূরান্তের অজানা দেশে চলে যেতাম, বাণিজ্য করার জন্য নয়, নতুন নতুন দেশ দেখার জন্য। প্রায়ই মনে হত আহা আমি যদি চাঁদ সওদাগর বা মধুকর বণিকের মতো সপ্তডিঙ্গা ভাসিয়ে যেতে পারতাম! সিন্দাবাদ বা গ্যালিভারর মতো নতুন অজানা দেশে গিয়ে অদ্ভুত সব পরিবেশের সাথে পরিচিত হতে পারতাম তাহলে কি যে মজা হতো। আমার সে সাধ আজও পূরণ হয়নি, হবেও না। তবে ভূগোল পড়তে গিয়ে অনেক দেশ, নদ-নদী, সাগর, মরুপ্রান্তর, চির শ্যামল নিবিড় বনের চির গোধূলী অঞ্চল, নগর ও মহানগরীর সুরম্য অট্টালিকা, সুদীর্ঘ সেতু, নদীর নিচ দিয়ে গড়ে তোলা সুরঙ্গ, চির তুষারাবৃত দেশ, বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের জীবজন্তু, উদ্ভিদ ও পাখি, আর মানুষের আচার-ব্যবহার, কথাবার্তা, চালচলন, খাদ্যদ্রব্য, পোশাক- পরিচ্ছদ, সাহিত্য সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হয়ে অনেক না পাওয়ার বেদনাকে ভুলতে পেরেছি। সেই প্রাচীন যুগে মানুষের স্থানান্তর গমনের কথা পড়ার সময় বল্গা হরিণের পিছনে ছুটতে ছুটতে স্যামুয়েলদের সাথে আমিও উত্তর আমেরিকা গিয়ে পৌঁছেছি। মার্কোপোলোর সাথে পৃথিবীর ছাদ ‘পামির মালভূমি' ও রেশম পথ হয়ে কুবলাই খানের দরবারে গিয়েছি, নতুন পৃথিবীর কোথায় কি আছে জানার জন্য ইউরোপীয় অনুসন্ধানকারী ও আবিষ্কারকদের সাথে কতবার রকি ও এ্যান্ডিজের উপর দিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি, আফ্রিকার গহীন বনের মধ্য দিয়ে পথ করে নিয়ে এগিয়ে যাবার সময় লিভিংস্টোনের সাথে সাথে কতবার বন্য মানুষদের মুখোমুখি হয়ে আত্মরক্ষার নতুন কৌশল অবলম্বন করেছি, কৃতদাসদের দুঃখ কষ্টে ব্যথিত হয়েছি, ক্যাপ্টেন কুকের সাথে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের ঝড়ো আবহাওয়াপূর্ণ পরিবেশে ঘুরে ফিরেছি। ডারউইনের সাথে শামুকের ডিম, গোবরে পোকা, প্রজাপতি ও মাছরাঙ্গা পাখি ধরেছি, স্থানভেদে উত্তাপ ও বায়ু প্রবাহের পরিবর্তনের কারণ খুঁজেছি, নীল আর্মস্টং আর এডুইন অলড্রিনের সাথে চাঁদের বুকে ঘুরে ঘুরে পাথর সংগ্রহ করেছি।