"রণেশ দাশগুপ্তর-র অনুবাদ কবিতা" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ সাম্রাজ্যবাদ, ফ্যাসিবাদ, সামন্তবাদ, সাম্প্রদায়িক ও সামাজিক অনাচার-অত্যাচার ইত্যাদি নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রামী রণেশ দাশগুপ্ত-র ভাব প্রকাশের বাহন মূলত প্রবন্ধ। তিনি প্রবন্ধ লিখেছেন বিচিত্রসব বিষয় নিয়ে। তবে তার সকল বক্তব্যের একই রাস্তা, মানবকল্যাণ আর মানব মুক্তির পথের সন্ধান। তাঁর রচনায় যেমন উঠে এসেছে বাঙালি, বাংলাদেশ আর তার সংস্কৃতি, তেমনি তিনি চারণের মত ঘুরে বেড়িয়েছেন বিশ্ব সাহিত্যের বিস্তৃত পরিসরে। সেখান থেকে তুলে এনেছেন মানব প্রগতির পথ সন্ধানী অমূল্য রত্নরাজী। বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন বিশ্বসাহিত্যের নানা দিকবলয়। তবে সর্বত্র তিনি নিজ অনুভব অনুভূতি আর ভাবনার ক্ষেত্রে অবিচল, ঋজু। তাই তার নির্বাচন হয়ে উঠেছে নিজ ভাবনার পরিপূরক। এসবের মধ্য দিয়ে বিশ্বসাহিত্যের বিশেষ করে ভৌগলিকভাবে কাছের জনগোষ্ঠীর ভাষার সাহিত্যের সঙ্গে বাঙালি পাঠকদের সম্পর্ক গড়ার প্রচেষ্টায় তিনি ছিলেন সদা সচেতন। রণেশ দাশগুপ্ত অনুবাদ করেছেন নানা ভাষা থেকে। এখানে তিনি স্বতন্ত্র। তাঁর অনুবাদের বিষয় কবিতা। সমকালীন রাষ্ট্রব্যবস্থায় রণেশ দাশগুপ্ত বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন উর্দু কবি আর কবিতার উপর। অনুবাদ করেছেন ফয়েজ আহমদ ফয়েজ, মখদুম মহীউদ্দিন, জোশ মলিহাবাদী, পারভেজ শাহেদী প্রমুখ উর্দু কবির কবিতা। সেই সঙ্গে রুশ কবি মায়াকভস্কির কবিতা, চিলির কবি পাবলো নেরুদার কবিতা, ইংরেজ কবি পার্সি বিশি শেলী, শেকসপীয়র, জার্মান বার্টোলড্ ব্রেখট-এর কবিতা। আবার অনুবাদ করেছেন আফ্রিকান কবিতাও। এই সব কবির কবিতা বাছাই করেছেন তিনি নিজের উদার প্রগতি ও মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে। মানবকল্যাণে ব্রতী রণেশ দাশগুপ্তর আদর্শের প্রতি দৃঢ়তাই তাঁকে এ পথে পথ চলিয়েছে। রণেশ দাশগুপ্ত অনুবাদের উদ্দেশ্য নিয়ে অনুবাদ করেছেন; আবার কোনো কবি প্রসঙ্গে আলোচনায় উদাহরণ প্রয়োগের প্রয়োজনেও অনুবাদ করেছেন। অনুবাদ করেছেন পুরো কবিতা আবার প্রয়োজনে কবিতার অংশবিশেষ এবং কখনো কবিতার নির্বাচিত দুই চার ছত্র। এইসব অনুবাদের সংকলন বর্তমান গ্রন্থ।
অধ্যাপক ও সাংবাদিক। ১৯৬৮-তে বাংলা ভাষা-সাহিত্যের অধ্যাপনায় যোগদান। বরিশাল সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ ও ব্রজমোহন কলেজ এবং খুলনা ব্রজলাল কলেজে চাকরি শেষে অবসর গ্রহণ জানুয়ারি ২০০৪-এ। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখি ও সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে দৈনিক বাংলাদেশ সময়-এর নির্বাহী সম্পাদক। কাজ করেছেন সাহিত্য-তত্ত্ব নিয়ে। লিখেছেন সাহিত্য স্বরূপ, সাহিত্য-সংজ্ঞা, অভিধান, ছন্দ অলঙ্কার রস-তত্ত্ব। এই সূত্র ধরেই প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সাহিত্য-তত্ত্ব সন্ধান। অনুবাদ করেছেন প্লেটোর কাব্য-ভাবনা, এরিস্টটলের পোয়েটিকস, হোরেসের আর্স পোয়েটিকা এবং লঙ্গিনাসের সাহিত্য-তত্ত্ব। এই চার যুগন্ধর পণ্ডিতের সাহিত্য-তত্ত্ব সমন্বয়ে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর ধ্র“পদী সাহিত্য-তত্ত্ব। আরও অনুবাদ করেছেন এম এন রায়ের ইসলামের ঐতিহাসিক ভূমিকা ও নয়া মানবতাবাদ; র্যালফ ফক্স-এর উপন্যাস ও জনগণ এবং ই এম ফরস্টারের উপন্যাসের যত বিষয়। সম্পাদনা করেছেন অশ্বিনীকুমারের রচনাসংগ্রহ, মুকুন্দদাসের যত লেখা, মুকুন্দদাসের দেশগান, চারণকবি মুকুন্দদাস প্রসঙ্গ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত-র প্রহসন, পরশুরাম ও তার গড্ডালিকা, সত্যেন সেন ধ্র“পদী গণ-কথাশিল্পী, অগ্রন্থিত রণেশ দাশগুপ্ত ইত্যাদি গ্রন্থ।