নামায মুসলমানদের ঐক্যের প্রতীক, বিভক্তির নয়। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে পাঁচ বার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানাে নামাযের আবশ্যকীয় অনুসঙ্গ। মুসলমানগণ কিভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহর আনুগত্য করবে নামায সে প্রশিক্ষণই দিয়ে থাকে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলাে, সেই নামাযকে কেন্দ্র করেই আজ মুসলমানগণ দ্বিধা-বিভক্ত হচ্ছে। ঐক্যের সূতিকাগার মাসজিদকে তারা বিবাদের জায়গায় পরিণত করছে। নামাযের বিভিন্ন মাসআলাকে কেন্দ্র করে তারা একে অন্যের প্রতি ফাতওয়ার তীর নিক্ষেপ করছে। আলাদা মাসজিদ তৈরি করছে। নিজেরা ঝগড়া-ফাসাদ এমন কি মারামারিতে পর্যন্ত লিপ্ত হচ্ছে। তারা ভুলতে বসেছে মাসআলাগত ইখতিলাফের শরঈ সীমানা। বিভিন্ন মাসআলায় ইখতিলাফ পূর্বেও ছিলাে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। এটা একটি স্বতঃসিদ্ধ রীতি। কিন্তু পারস্পরিক অশ্রদ্ধা ও অসম্মানটা পূর্বে ছিলােনা, যেটা বর্তমানে প্রকটভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দলীলের ভিন্নতা বা দলীল থেকে নির্গত বুঝের ভিন্নতার কারণে চিন্তা ও আমলের মাঝে ভিন্নতা তৈরি হতে পারে। একটি বিষয়েই একাধিক রকমের দলীল পাওয়া যায় এমন মাসআলাও বিরল নয়। নামাযও ঠিক অনুরূপ। নামাযের বিভিন্ন মাসআলায় বিপরীতমুখী দলীল বর্ণিত হওয়ার কারণে নামায আদায়ের ক্ষেত্রেও ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। এই গ্রন্থে আমরা নামায বিষয়ক প্রান্তিক দলীলগুলাে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। যাতে এটা প্রমাণিত হয় যে, যাকে আমি ভিন্ন ভাবে নামায পড়তে দেখছি , সেও দলীলের ভিত্তিতেই নামায পড়ছে। এ বুঝটুকু তৈরি হলে- কুরআন ও সুন্নাহর প্রতি যার নূন্যতম শ্রদ্ধাবােধ আছে, আশা করি সেও অন্যের উপস্থাপিত দলীলের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে। আর এতে করে চলমান বিতর্ক কিছুটা হলেও কমবে, ইনশাআল্লাহ।
কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চৌদ্দগ্রাম উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে ১৯৭৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মরহুম মাে: আব্দুল হাকিম ও মাতার নাম শাফিয়া বেগম। তিনি গাছবাড়িয়া গাউছিয়া তৈয়্যবিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় শিক্ষা জীবন শুরু করেন। শুরুতে এ মাদ্রাসার হিফজুল কুরআন বিভাগে কিছুদিন অধ্যয়ন করেন। অতপর এ প্রতিষ্ঠান থেকে ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপ্ত করে ছুপুয়া ছফরিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। ছফয়া মাদ্রাসা থেকে ১৯৯৫ ইং সনে দাখিল পাশ করে দেশের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুমিল্লার দেবিদ্বারস্থ ধামতী আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হন। এ মাদ্রাসায় তিনি আলিম, ফাজিল ও কামিল ( হাদীছ ) অধ্যয়ন করেন। অতপর তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে বি, এ অনার্স ও মাস্টার্স সমাপ্ত করেন। তারপর ঢাকা পীরজঙ্গী জামেয়া দ্বীনিয়া থেকে দাওরাহ হাদীছ ও সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা-ঢাকা থেকে কামিল ফিকহ সমাপ্ত করেন। অতপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ ডিপার্টমেন্ট থেকে ২০১৩ সনে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। শিক্ষা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি কৃতিত্বের সাক্ষর রাখেন। ক্লাস ওয়ান থেকে দাখিল পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন। দাখিল থেকে কামিল, দাওরাহ হাদীছ, অনার্স ও মাস্টার্সহ সকল পরিক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। ফাজিলে বাের্ড মেধা তালিকায় ৩য়, কামিল হাদীছে ৩য়, ফিকহে ৭ম ও অনার্সে ১৬তম স্থান অর্জন করেন। তাঁর লিখিত “মি'রাজ ও আধুনিক বিজ্ঞান”, “প্রচলিত শিরক ও তা থেকে বাঁচার উপায়” এবং “প্রচলিত বিদ'আত ও তা থেকে বাঁচার উপায়” বই তিনটি পাঠক মহলে যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বিবাড়ীয়া জেলার নবীনগর উপজেলা সদরের নারায়ণপুর ফাজিল মাদরাসায় আরবী প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি ঢাকাস্থ তেজগাঁও মদীনাতুল উলুম কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিস হিসেবে কর্মরত আছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি দ্বীনের দাওয়াতি কাজের ময়দানেও সমান ভাবে অবদান রেখে চলেছেন। তিনি পবিত্র হজ্জ, আন্তর্জাতিক সেমিনার ও ব্যক্তিগত সফর উপলক্ষে সৌদি আরব, আমেরিকা, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, মিশর, কাতার, শ্রীলঙ্কা, ভারত ও নেপাল ভ্রমণ করেন। পারিবারিক জীবনে তিনি চার ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জনক। আমরা তাঁর সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ কামনা করছি।