কাতিবে ওহি, প্রিয়নবির প্রিয় শ্যালক, ইসলামি জগতের প্রথম শাহানশাহ, আমিরুল মুমিনিন মুআবিয়া ইবনু আবি সুফিয়ান রা. আনন্দ-বেদনা মিশ্রিত এমন এক সমুজ্জ্বল নাম। যাঁর সুমহান কীর্তিসমূহের আলোচনা মুমিনহৃদয়ে বইয়ে দেয় আনন্দের প্রস্রবণ। অপরদিকে ইয়াহুদিদের পোষ্য ইবনু সাবা, তার পদলেহী রাফিজিরাসহ প্রাচ্যবিদরা এবং অধুনার গবেষকরা সত্যাসত্য নিরূপণ না করে তাঁর ওপর নিন্দাবাদের যে ছুরি চালিয়েছে, তা যেকোনো মুমিনের অন্তরে তুলে বেদনার রক্তপ্লাবন। যেখানে উম্মাহর স্বীকৃত ইতিহাসবিদ জাহাবি, ইবনু কাসির ও ইবনু খালদুনরা তাঁর সুউচ্চ মর্যাদা ও কৃতিত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে হারিয়ে ফেলেন ভাষা, খুঁজে পান না উপযুক্ত শব্দ, সেখানে রাশিদ রেজা আর আব্বাস মাহমুদ আক্কাদরা তাঁর মর্যাদায় দুর্গন্ধময় ভাষা; দূষিত সব শব্দ ব্যবহার করতে কুণ্ঠিত হন না। তাঁর সঙ্গে হাসান ইবনু আলির সন্ধি একসুতোয় গেঁথে দেয় দ্বিধাবিভক্ত জাতিকে। উম্মাহর ঐকমত্যে তিনি অধিষ্ঠিত হন ইসলামি খিলাফতের সিংহাসনে। ক্ষণের জন্য স্থাণু হয়ে পড়া জিহাদ ও বিজয়ের ধারায় এনে দেন গতির সঞ্চার। ইসলামের পক্ষে সমুদ্রযুদ্ধের মহানায়ক ছিলেন তিনি, যে ব্যাপারে নবিজির সুসংবাদ বিদ্যমান। বিলাদুল মাগরিব তথা দূর আফ্রিকা থেকে নিয়ে মধ্য-এশিয়ার খোরাসান পর্যন্ত ইসলামের নিশান ছড়িয়ে দেন এই দিগ্বিজয়ী বীর সাহাবি। এতকিছুর পরেও তিনি পদে পদে বিদ্বেষী ইতিহাসবিদদের দ্বারা বিদ্ধ হয়েছেন অন্যায্য সমালোচনার তিরে। মাজলুম সেই সাহাবিকে নিয়ে ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি রচিত এ গ্রন্থটি আপনাকে দেবে তাঁর সম্পর্কে সত্য-সুন্দর ধারণা। পাতায় পাতায় পাবেন তাঁর ওপর আরোপিত মিথ্যা সব অপবাদের দাঁতভাঙা জবাব। দূর হবে তাঁর ব্যাপারে শোনা সব সংশয়জাগানিয়া মিথ্যা।
ফকিহ, রাজনীতিক ও বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগবেষক। ইসলামের ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণধর্মী তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই মহা মনীষী ১৯৬৩ সনে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা বেনগাজিতেই করেন। যৌবনের প্রারম্ভেই গাদ্দাফির প্রহসনের শিকার হয়ে শায়খ সাল্লাবি আট বছর বন্দি থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি সাউদি আরব চলে যান। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও উসুলুদ্দিন বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সনে অনার্স সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান সুদানের উম্মু দুরমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে উসুলুদ্দিন অনুষদের তাফসির ও উলুমুল কুরআন বিভাগ থেকে ১৯৯৬ সনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৯ সনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ফিকহুত তামকিন ফিল কুরআনিল কারিম’। ড. আলি সাল্লাবির রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু বিশ্বখ্যাত ফকিহ ও রাজনীতিক ড. ইউসুফ আল কারজাবি। কারজাবির সান্নিধ্য অর্জনে তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কাতার গমন করেন। নতুন ধারায় সিরাত ও ইসলামি ইতিহাসের তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে ড. আলি সাল্লাবি অনুসন্ধিৎসু পাঠকের আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নবিজির পুর্ণাঙ্গ সিরাত, খুলাফায়ে রাশিদিনের জীবনী, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসি খিলাফত, উসমানি খিলাফতের উত্থান-পতনসহ ইসলামি ইতিহাসের সাড়ে তেরোশ বছরের ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন। তা ছাড়া ইসলামি ইতিহাসে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করা ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি আলাদা আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির রচনা শুধু ইতিহাসের গতানুগতিক ধারাবর্ণনা নয়; তাঁর রচনায় রয়েছে বিশুদ্ধতার প্রামাণিক গ্রহণযোগ্যতা, জটিল-কঠিন বিষয়ের সাবলীল উপস্থাপনা ও ইতিহাসের আঁকবাঁকের সঙ্গে সমকালীন অবস্থার তুলনীয় শিক্ষা। এই মহা মনীষী সিরাত, ইতিহাস, ফিকহ ও উলুমুল কুরআনের উপর আশির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাবলি ইংরেজি, তুর্কি, ফরাসি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীর জ্ঞানগবেষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ, নিরাপদ ও সুস্থ জীবন দান করুন। আমিন। —সালমান মোহাম্মদ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক ২৪ মার্চ ২০২০