সমুদ্র ঈগল’ সালতানাতে উসমানিয়ার মহান সুলতান সুলায়মান এবং তাঁর নৌ-সেনাপতি খাইরুদ্দিন বারবারুসার জীবনীভিত্তিক ইতিহাস। এঁরা ছিলেন তৎকালীন ইউরোপীয়দের জন্য জীবন্ত দুই আতঙ্কের নাম। সুলায়মান যেমন স্থলভাগে ইউরোপের ৮০০ মাইল ভেতরে ঢুকে ভেঙ্গে দিয়েছিলেন তাদের শক্তির মেরুদণ্ড, তেমনি সাগরে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে নিয়েছিলেন খাইরুদ্দিন বারবারুসা। সুলতান যেমন হাঙ্গেরির রণক্ষেত্রে পর্যুদস্ত করেছিলেন ইউরোপের সাত সাতটি দেশের যৌথবাহিনীর শক্তির মেরুদণ্ড, তেমনি বারবারুসা প্রিভিজার নিকটবর্তী কিরতা উপসাগরে মাত্র ১২০ টি যুদ্ধজাহাজ আর কিশতির বহর নিয়ে সুলতানের কোনো প্রকার সাহায্য ব্যতিরেকে এককভাবে সাগরে সলিল-সমাধি ঘটিয়েছিলেন ইউরোপীয় ইতিহাসের ৪০০ শতাধিক যুদ্ধ জাহাজের বৃহত্তম নৌবহটির। খাইরুদ্দিনের হাতে পর্যুদস্ত হয়ে পালিয়ে গিয়েছিল স্পেন অধিপতি চার্লস’র অ্যাডমিরাল আন্দ্রে ডুরিয়া। যে পরাজয়ের ব্যথা সহ্য করতে না পেরে মারা গিয়েছিল ভেনিসের রাজা দুজে। রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছিল চার্লস। সাগর এককভাবে কর্তৃত্বে এসে গিয়েছিল বারবারুসার। সাগরে তাঁর আর কোনোই প্রতিপক্ষ ছিল না। উপন্যাসটিতে উঠে এসেছে এরূপ আরো শিহরণজাগানিয়া অনেক বিজয়কাহিনী। পরতে পরতে উত্তেজনা আর রোমান্টিকতায় ভরপুর এ এক অনবদ্য রচনা। ‘সুলতান মালিকশাহ সেলজুকি’ পিতৃতুল্য উসতাজ ও উজিরে আজম নিজামুল মুলক তুসির শাহাদাতে জ্বলে উঠেছেন নিশাপুরের ইগল খ্যাত সুলতান মালিকশাহ সেলজুকি। কাজবিনের সবুজ উপত্যকার আলমুত দুর্গ ঘিরে কৃয়গহ্বরের মতোই জট পাকানো ফিতনার গোড়া উপড়ে ফেলতে পাঠিয়ে দেন আরসালান, বাদরান ও বারসাক নামের সিংহত্রয়ীকে। ওরা ছুটে চলছেন বিদ্যুৎগতিতে। টর্নেডো হয়ে আছড়ে পড়তে যাচ্ছেন হাসান ইবনে সাব্বাহর অভয়াশ্রমে। হাসানের নির্দেশে বেরিয়ে আসে কায়া বুজুর্গের নেতৃত্বে হাশিশের নেশায় মালাত ফেদাইনবাহিনী। কিন্তু আরসালানদের ঝড়োগতির হামলায় প্রথমবারের মতো ছুটে যেতে থাকে তাদের হাশিশের নেশা। জীবনের বৃন্ত থেকে টপাটপ ঝরে পড়তে থাকে দুর্ধর্ষ হিসেবে খ্যাত প্রতিটি ফেদাইন। শেষপর্যন্ত পালিয়ে আশ্রয় নেয় আলমুত দুর্গে। কঠিন অবরোধের ফলে যখন দুর্ভেদ্য আলমুত ঝরে পড়বে পাকা আপেলের মতো, ঠিক সে সময় সংবাদ আসে মালিকশাহ পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে। ফলে অবরোধ উঠিয়ে তাঁরা চলে যান নিশাপুরে; আর বেঁচে যায় আলমুত, বেঁচে যায় কৃষ্ণ ফিতনা।এমন টান টান উত্তেজনাময়ী ঘটনাবলির সঙ্গে পাঠককে মাতিয়ে তুলবে আসলাম রাহির কালজয়ী এ উপন্যাস। অতএব, পাঠক ডুব দিতে পারেন সেই উত্তেজনার সমুদ্রে। ‘দ্য লিজেন্ড, ইমাদুদ্দিন জিনকি’ খলিফা মনসুর, হারুনুর রশিদ, মামুনুর রশিদ ও মুতাসিম বিল্লাহের পর খেলাফতে আব্বাসিয়ার প্রতিটি স্তম্ভ ও কড়িকাঠে পতনের যে ঘুনপোকা লেগেছিল, তা নিঃসাড় ও নিষ্প্রাণ করে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় খেলাফতের কাঠামো। তখন সাত সমুদ্দুর পাড়ি দিয়ে এশিয়ায় আসতে চাইছিল মাংসাসী ক্রুসেডীয় শৃগালের পাল। কিন্তু সুলতান মালিকশাহ সালজুকি নামক এক মুসলিম সিংহের ভয়ে সাহস করে উঠতে পারেনি তখন।মালিকশাহের অন্তর্ধানের পর মুসলিম সাম্রাজ্য গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যায়। তখনই ক্রুসেডাররা কামড় বসায় ইসলামি সাম্রাজ্যের কলিজায়। একে একে দখল করে নেয় বিশাল মুসলিম এলাকা। একপর্যায়ে ৪৯২ হিজরির রজব মাসে দখল করে নেয় মুসলমানদের প্রথম কিবলা বায়তুল মাকদিস।সেই ঘনঘোর সময়ে সুলতান মালিকশাহের একসময়ের প্রধান সেনাপতি, পরবর্তীকালে হালাবের শাসক আক সুনকুর ওরফে কাসিমুদ্দৌলাহর ঔরসে জন্ম নেন মহান সেনাপতি আবুল মুজাফ্ফার ইমাদুদ্দিন জিনকি। সেই ইমাদুদ্দিনই সুলতান মওদুদের সাথে মিলে ক্রুসেডারদের উপর হানেন প্রথম আঘাত। কিন্তু পরবর্তীকালে টানা ১০ বছর তাঁকে জড়িয়ে থাকতে হয় গৃহযুদ্ধের কাদায়। তবে গৃহযুদ্ধ থেকে একটু অবকাশ পেতেই তিনি পুনরায় একের পর এক আঘাত হানতে থাকেন ক্রুসেডারদের কলিজায়। উদ্ধার করতে থাকেন একের পর এক রাজ্য। উদ্ধার করেন শক্তিশালী দুর্গ ও তাদের শক্তিকেন্দ্র ‘আর-রাহা’।‘দ্য লিজেন্ড’ গ্রন্থে রয়েছে মহান বীর ইমাদুদ্দিন জিনকির শিহরণ জাগানিয়া তৎপরতার বর্ণনা। গ্রন্থটি পাঠ করলে মনে হবে আপনিও যেন ইমাদুদ্দিন জিনকির একজন সিপাহি হয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সেইসব জিহাদের ময়দান।