ইতিহাসের সোনালি শাসন খিলাফতে রাশিদা। খিলাফতে রাশিদার পর শুরু হয় ইসলামি ইতিহাসের দুর্যোগকাল–বংশীয় খিলাফতের সূচনা, জামালযুদ্ধ, সিফফিনযুদ্ধ, কারবালা, ইমাম হুসাইনের শাহাদত! একের পর এক ঘটতে থাকা ইতিহাসের আলোচিত-সমালোচিত অধ্যায়! . পৃথিবীর দিকে দিকে ইসলামের বিজয় অভিযান; শিয়া-খারিজিদের উত্থান, খিলাফতকেন্দ্রিক অস্থিরতা, ইসলাম রক্ষায় সাহাবি-তাবিয়িগণের আত্মত্যাগ, লোমহর্ষক ঘটনায় ভরপুর বিস্ময়কর আলো-আঁধারি; ইসলামের মহান সাহাবিদের নিয়ে মিথ্যা রটনাকারীদের কল্পকথার বিশ্লেষণ–এর সবই উমাইয়া খিলাফতের ইতিহাস পরিক্রমা। . উমাইয়া শাসক উমর ইবনু আবদুল আজিজ, যিনি কিয়ামত পর্যন্ত সুশাসনের দৃষ্টান্ত হয়ে পৃথিবীতে টিকে থাকবেন; কীভাবে ইনসাফের পাল্লা প্রতিষ্ঠিত করেছেন; বিদ্রোহ দূর করে খিলাফতে রাশিদার সোনালি শাসন ফিরিয়ে এনেছেন–এমন সবকিছুই উমাইয়াদের অধ্যায়। . খিলাফতের দীর্ঘ ইতিহাসে খুবই আলোচিত-সমালোচিত পাঠ উমাইয়া খিলাফত। বিশ্বখ্যাত ইতিহাসবিদ ড. আলি মুহাম্মদ সাল্লাবির কলমে উঠে এসেছে সত্যসন্ধ ইতিহাসের সাহসী উচ্চারণ। ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করেছেন উমাইয়া খিলাফতের আদ্যোপান্ত। প্রামাণিক বিশ্লেষণে ইতিহাস কত সুন্দরভাবে ফুটে ওঠে–এই গ্রন্থ খুলে দেবে সেই জানালা।
ফকিহ, রাজনীতিক ও বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগবেষক। ইসলামের ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণধর্মী তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই মহা মনীষী ১৯৬৩ সনে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা বেনগাজিতেই করেন। যৌবনের প্রারম্ভেই গাদ্দাফির প্রহসনের শিকার হয়ে শায়খ সাল্লাবি আট বছর বন্দি থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি সাউদি আরব চলে যান। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও উসুলুদ্দিন বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সনে অনার্স সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান সুদানের উম্মু দুরমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে উসুলুদ্দিন অনুষদের তাফসির ও উলুমুল কুরআন বিভাগ থেকে ১৯৯৬ সনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৯ সনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ফিকহুত তামকিন ফিল কুরআনিল কারিম’। ড. আলি সাল্লাবির রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু বিশ্বখ্যাত ফকিহ ও রাজনীতিক ড. ইউসুফ আল কারজাবি। কারজাবির সান্নিধ্য অর্জনে তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কাতার গমন করেন। নতুন ধারায় সিরাত ও ইসলামি ইতিহাসের তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে ড. আলি সাল্লাবি অনুসন্ধিৎসু পাঠকের আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নবিজির পুর্ণাঙ্গ সিরাত, খুলাফায়ে রাশিদিনের জীবনী, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসি খিলাফত, উসমানি খিলাফতের উত্থান-পতনসহ ইসলামি ইতিহাসের সাড়ে তেরোশ বছরের ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন। তা ছাড়া ইসলামি ইতিহাসে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করা ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি আলাদা আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির রচনা শুধু ইতিহাসের গতানুগতিক ধারাবর্ণনা নয়; তাঁর রচনায় রয়েছে বিশুদ্ধতার প্রামাণিক গ্রহণযোগ্যতা, জটিল-কঠিন বিষয়ের সাবলীল উপস্থাপনা ও ইতিহাসের আঁকবাঁকের সঙ্গে সমকালীন অবস্থার তুলনীয় শিক্ষা। এই মহা মনীষী সিরাত, ইতিহাস, ফিকহ ও উলুমুল কুরআনের উপর আশির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাবলি ইংরেজি, তুর্কি, ফরাসি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীর জ্ঞানগবেষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ, নিরাপদ ও সুস্থ জীবন দান করুন। আমিন। —সালমান মোহাম্মদ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক ২৪ মার্চ ২০২০