মোসলেম উদ্দিনের মন আজ অসম্ভব খুশি। তবে রাগও আছে খুব। খুশির কারণ সে গোপনে খবর পেয়েছে সাবিত গ্রামে আসছে আজ। আর সাবিতের অভ্যাস সন্ধ্যার সময় করে বাড়ি আসা। সাথে অবশ্যই এক প্যাকেট সিগারেটও সঙ্গে নিবে। পোড়োবাড়িতে ঝুম মেরে বসে রইলো। এ পথ দিয়েই আসবে সাবিত। অভিমান করেই কল দিচ্ছে না তাকে। প্রতিবার গ্রামে আসলে তাকে কল দেয়। নিজে গিয়ে নিয়ে আসে। আসার সময় সংক্ষেপে গ্রামের সব খবর ঢেলে দেয় তার কানে। গ্রামের বিষয়ে সাবিতের তেমন আগ্রহ নেই। তারপরও যা খবর নেওয়ার তা তার কাছ থেকেই নেয়। গ্রামে সাবিতের চোখ-কান হলো মোসলেম। এবারে তাকে কোনো কল করেনি সাবিত। তার বাবা বদরুল আঙ্কেলের কাছ থেকে সকালে তার আসার খবর পেয়েছে। তাই মনে করেছে, নিশ্চয়ই শহরে সাবিতের কোনো সমস্যা হয়েছে। তাকে খুব ভালো করেই চিনে সে। অতিরিক্ত রাগের কারণ হলো, পাশের পাড়ার একদল পোলাপান নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। এই ঝামেলা মারামারি পর্যন্ত গিয়েছে। এক ফোঁটাও ছাড় দেয়নি। যতটুকু পেরেছে হাতের ঘুসি বসিয়েছে। জানতো এই খবর বদরুল আঙ্কেলের কানে গেলে তাকে নেওয়ার জন্য আসবে। এই সাহসে আরও লাফিয়ে উঠে ঘুসি বসিয়ে দিয়েছে প্রতিপক্ষকে। ওদের কেউ কেউ ভয়ে বেশি অগ্রসর হয়নি। অন্যরা না পেরে হাল ছেড়ে দিয়েছে। কারণটা তেমন বড়ো বিষয় ছিল না। মোসলেমের বাড়ির পেছনের খাল থেকে ওরা মাছ চুরি করেেেছ। এই ইস্যু পেছনে আরও বিরাট কারণ আছে। মোসলেম ওই পাড়ার একটা মেয়েকে পছন্দ করে। মেয়েটির নাম তাহুরা। পছন্দের প্রথম ধাপে বীরত্বের পরিচয় দিতে হয়। সেদিক থেকে বেশি দিয়ে দিয়েছে। তাহুরার চোখে বীরপুরুষ সাজতে চায় মোসলেম। প্রিয়তমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে ঝগড়া করছে। লুকিয়ে এ ঝগড়া দেখছে তাহুরা। তাহুরারও ক্ষোভ ছিল এসব ছেলেদের ওপর। গোপনে খবর রাখে সে। তাই এক ঢিলে দুটো কাজ সেরে নিয়েছে। সেই রাগ এখনও কমেনি তার। মনে মনে স্থির করেছে কাল সাবিতকে নিয়ে ওই পাড়ায় মহড়া দেবে। নিজের বীরত্বটুকু আবার দেখাতে হবে। ওই পাড়ার পোলাপানগুলো তাকে দেখে নিবে বলেছে। সে তখন এই কথার কোনো জবাব দিতে পারেনি। তাই ঝাঁঝ এখনও মিটেনি তার। এসব ভাবতে ভাবতে নিজের পকেটের শেষ সিগারেটটা বের করলো মোসলেম। ম্যাচের কাঠি বের করবে এমন সময় পেছনে যেন কীসের শব্দ হলো। পেছন দিয়ে কারও হেঁটে যাওয়ার শব্দ। বর্ষাকাল পুরোপুরি শুরু হয়নি এখনও। তাই ভেঙে পড়া শুকনো ডালগুলোর ওপর পা পড়লে শব্দ মটমট হবেই। সে উঠে দাঁড়ালো, এই সময় পেছনদিকে কে আসবে? সাবিতের এখন আসার সম্ভাবনা নেই। তাহলে? উঠে দাঁড়াতেই মুখোশ পরা এক আততায়ীর মুখোমুখি হলো সে। আততায়ীর হাতে কুড়াল। সে ভয় পেয়ে চিৎকার করতে গেলে তার ঘাড় বরাবর নেমে আসে কুড়ালের কোপ। কেটে ফেলা ডালের মতো জমির কিনারায় ধপ করে পড়ে গেল সে। শেষবারের মতো দৃষ্টিশক্তি একত্র করে আততায়ীর দিকে তাকালো। আততায়ী কুড়ালটি ওপর থেকে তার মাথা বরাবর তুলে আনছে, খুব জোরে। মোসলেম চোখ বন্ধ করে ফেলল অসহায় ভঙ্গিতে।
ছোটোবেলা থেকেই গল্প শুনতে শুনতে একসময় গল্প বলার ভাষাটা রপ্ত করে নিলাম। স্কুলে পড়ার সময় ব্যাংকার হতে চেয়েছিলাম। চেয়েছিলাম অঢেল সম্পদের মালিক হতে, কিন্তু না। হয়ে গেলাম কথার মালিক। জীবনের বাঁকে বাঁকে লক্ষ্য পাল্টে গিয়েছে। শেষমেশ সব পেশার মানুষকে আমার দিকে টেনে এনেছি, গল্প শোনাবো বলে। এই যে, আপনাকে যেভাবে আনলাম। আমার জন্ম দ্বীপ এলাকায়, যেখানে সমুদ্রের জোয়ার এসে আমাকে ছুঁয়ে দেয়। আবার ভাঁটায় গন্তব্য হারাই। বাবা ব্যবসায়ী, মায়ের পেশার শেষ নেই। কখনো ডাক্তার, কখনো ইঞ্জিনিয়ার, কখনো শিক্ষক, কখনো দরজি, কখনো গৃহিণী...। শুধু শখের জন্য লেখালেখি করি না। পেশার জন্য লিখি। ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পাঠ চুকিয়েছি। থ্রিলার আমার পছন্দের জনরা। সে জনরায় নিয়মিত লিখছি, চেষ্টা করছি পাঠকদের ভালো কিছু দিতে। কবিতার পথ ধরে হাঁটা শুরু করলেও থ্রিলার আমাকে তার পথে হাঁটতে বাধ্য করেছে। অন্যদিকে অনুবাদকে নিয়েছি পেশা হিসেবে। পাশাপাশি শিশুসাহিত্যও। পেশার জায়গায় লেখালেখি আমাকে দায়বদ্ধ করে তোলে। সে দায়বদ্ধতা আমাকে পাঠকমুখী করছে কিনা সে জবাব একান্ত পাঠকের...