১৯২১ সালের ১ জুলাই একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা আরম্ভ হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে অবকাঠামোর বৃহৎ অংশ গড়ে তোলা হয় তদানীন্তন ঢাকা কলেজ ও জগন্নাথ কলেজের শিক্ষকমণ্ডলী ও কার্জন হলের ভিত্তিতে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে বিস্তৃত ও মুখর ইতিহাস। ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনামলে অগ্নিযুগের বাঙলায় বিপ্লব সাধনার একটি পীঠস্থান ছিল ঢাকা। ‘অনুশীলন সমিতি’র প্রধান কর্মক্ষেত্র ঢাকার অনেকেই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমদিকের কৃতি শিক্ষার্থী। এই বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের ইতিহাসে গতি প্রকৃতি নির্ধারণে খুব গুরুত্ববহ অবদান রেখেছে। ১৯৪৮ সালে জিন্নাহ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ জানায়। আর এভাবেই ভাষা আন্দোলনকে সংগঠিত করে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদকে সরিয়ে বাংলা ভাষাভিত্তিক একটি স্বতন্ত্র জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে। এরপর ১৯৬৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদুজ্জামান শহীদ হওয়ার ফলে ১১ দফার আন্দোলন চ‚ড়ান্ত অগ্রযাত্রার দিকে এগিয়ে গিয়ে সমাপ্ত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মাধ্যমে। বাংলাদেশের মহান মুক্তিসংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের আত্মত্যাগ ও অবদানের ইতিহাস মূলত এক বীরগাঁথার উপাখ্যান। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে হাজার হাজার শিক্ষার্থী এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদ নিয়ে দেশ-বিদেশে নানা পেশায় নিয়োজিত হয়েছে। এছাড়া দেশের মানুষের মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি, মনন ও মেধা এবং বিশেষ করে রুচি গড়ে তোলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অনন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ব্যষ্টিক স্বার্থের পাশাপাশি সমষ্টি স্বার্থকে সবসময় প্রাধান্য দিয়েছে। কালের আবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স বাড়ে কিন্তু এর বার্ধক্য আসে না। এর একটি কারণ এখানে প্রতিবছর নবীনদের আগমন ঘটে, যারা আলোকিত হয় প্রবীণদের সংস্পর্শ পেয়ে, আবার প্রবীণরাও সজীব থাকেন নবীনদের সঙ্গ পেয়ে।