‘নদীজীবন চরজীবন’-এক মলাটের ভেতর তিন উপন্যাস। এখানে একদিন জলসীমা ছিল। জলের ওপর জলের ঢেউয়ের আছাড়িবিছাড়ি নাচন ছিল। অনেক দূর থেকে ঢেউগুলো ভেসে আসত, কখনো ভেঙে, কখনো কাতার বেঁধে। সমুদ্র উপকূলের মানুষের নিরস্তর সংগ্রাম আর জীবনশৈলীর অপূর্ব আখ্যান ‘আবর্ত’। একটা নদী, ভরা যৌবনে দুকূল ভাসিয়ে ছুটেছে একদিন। এখন রুখাশুখা, বুকে তার বালুচর। দুই পারে দুই দেশ-আছে এক আকাশতলে। বদলে গেছে মানুষের জীবনচিত্র। নদী শুকিয়েছে, মাটির ভ্রূণ মরে গেছে। দুই পারের মানুষ হয়ে গেছে লাফাঙ্গা, দুই নম্বরি। সেই নদীর নাম পদ্মা। উপন্যাসের নাম ‘পদ্মা উপাখ্যান’। সমুদ্রের মোহনায় বিশাল বিচন বনভূমি। পাখ-পাখালি, উভচর সরীসৃপ, বনপোকা, ঝিঁঝি আর জোনাকির অভয়ারণ্য। চাঁদের আলো ছড়িয়ে পড়ে, অদ্ভুত এক স্বপ্নজাল বিস্তার করে রাতের দিগন্তে। নিবিড় বন রক্ষা করে মানুষের জীবন, পত্তন করে ভূমি। সেই বন উজাড় করে মানুষ। চেহারায় নষ্ট রাজনীতিক, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী। তাদের লক্ষ্য ভূমি-জমি। তারা সঙ্গী করে নদী শিকস্তি। তারপর হাজার হাজার একক ভূমি দখলের খেলা শুরু হয়। সেই খেলা যেন আগুনে পুড়তে থাকা দিন, যেন একাত্তর ফিরে আসে ‘রক্তভেজা অববাহিকা’য়।
১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই উপকূলীয় উপজেলা সুবর্ণচরের সম্রান্ত পরিবার ভূঁইয়া বাড়িতে জন্ম। শৈশব-কৈশাের কেটেছে। ফেঞ্চুগঞ্জ ও সিলেট শহরে । শিক্ষাজীবন কেটেছে ফেঞ্চুগঞ্জ এনজিএফএফ স্কুল, সিলেট সরকারি এমসি কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। সিলেট ও চট্টগ্রাম রেডিওতে সংবাদপাঠ ও উপস্থাপনা করেছেন আট বছর। বাংলাদেশ টেলিভিশনে গ্রন্থ ও প্রকাশনা বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘বইপত্র উপস্থাপনা করেছেন এক যুগ। কর্মজীবন শুরু করেন দৈনিক গণকণ্ঠে সহসম্পাদক হিসেবে। তারপর সরকারি চাকরি কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগে। সম্প্রতি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। কিন্তু সচল হয়ে উঠেছেন নেশার জগৎ লেখালেখি নিয়ে। উপন্যাস, ছােটগল্প, শিশুতােষ ও কিশাের রচনা- সব মিলিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ৩০। প্রকাশিত হয়েছে উপন্যাসসমগ্র ২০১৫, গল্পসমগ্র ২০১৭ | ২০১৮ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হলাে বাংলাসাহিত্যে এযাবৎ প্রকাশিত বৃহৎ কলেবরের মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এবং মহান চীনের গৌরবােজ্জ্বল অতীত এবং চীনা জনগণের সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে লেখা ভ্রমণ উপন্যাস ‘মহাচীনের মহাজাগরণ’ । সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেছেন কিউট সাহিত্য পুরস্কার, রাজশাহী সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, পালক অ্যাওয়ার্ড, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক পরিষদ (বাসপ) পদক। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে শিক্ষায় অনগ্রসর মানুষকে শিক্ষার আলােয় আলােকিত করতে সুবর্ণচরে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘জুবিলি হাবিবউল্যা মিয়ারহাট উচ্চ বিদ্যালয় এবং বিপুল গ্রন্থসমৃদ্ধ লাইব্রেরি বজলের রহমান ভূঁইয়া স্মৃতি পাঠাগার'। ভ্রমণের নেশা আছে। বাংলাদেশের গ্রাম, নদী, পাহাড়, সমুদ্র তার প্রিয়। ভ্রমণ করেছেন কানাডা, যুক্তরাজ্য, গণপ্রজাতন্ত্রী চীন, থাইল্যান্ড ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ। পিতা-নুরুল আলম ভূঁইয়া, মা-আনােয়ারা বেগম, স্ত্রীজোহরা সুলতানা। দুই পুত্র : শাহরিয়ার রাইসুল ইসলাম, শাহমান রাউফুল ইসলাম । স্বপ্ন : উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ।